শান্ত মেজাজের ক্রিকেটার হিসেবে আলাদা খ্যাতি আছে মাহমুদউল্লাহর। চাপের মধ্যে নাকি তাঁর সেরাটা বেরিয়ে আসে। অনেকবারই তেমন পারফরম্যান্স দেখা গেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। এবার কি হবে? ৩৮ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহর এটাই সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপ। শেষটা নিশ্চয়ই রাঙিয়ে দিয়ে যেতে চাইবেন!
মনে মনে তেমন আশা তো সবারই থাকে। তবে মাহমুদউল্লাহ যে আপাদমস্তক ‘টিম ম্যান’, সেটা আবারও বুঝিয়ে দিলেন বিশ্বকাপে থাকা খেলোয়াড়দের নিয়ে বিসিবির ধারাবাহিক ভিডিও সিরিজ ‘দ্য গ্রিন রেড স্টোরি’তে। বলেছেন, ‘আমি কখনো আমার নাম নিয়ে চিন্তা করিনি। ব্যক্তিগত লক্ষ্য নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা করি না। দলের লক্ষ্য যদি অর্জন হয়, ওটাতেই অনেক খুশি।’
ডালাসে ৮ জুন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ দল। মাহমুদউল্লাহ-নাজমুল হোসেনরা এখন এ ম্যাচেরই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করার আশাই করছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘সুযোগ তো সব সময়ই থাকে। চেষ্টায়ও আমাদের কোনো কমতি থাকে না। ইনশা আল্লাহ, হয়তো এবার আমরা ভালো কিছু করব।’
তবে ট্রফি জয়ের ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ ভাগ্যের ভূমিকাও দেখছেন, ‘ট্রফি জিততে আমার মনে হয় ভাগ্যেরও একটু সহায়তা লাগে। আমরা কয়েকটি মেগা ইভেন্টে হয়তো খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা পারিনি। এখন আরেকটি সুযোগ সামনে। সমর্থন আছে ইনশা আল্লাহ। যা যা করা সম্ভব আমরা করব।’
মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ অভিযানে নিয়মিত সঙ্গীই। ২০০৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ৭টি আসরেই বাংলাদেশ দলে ছিলেন। কিন্তু দলে জায়গা পাননি ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
এ নিয়ে কিছুটা খেদ প্রকাশ পেল স্পিনিং অলরাউন্ডারের কথায়, ‘২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যখন আমি ছিলাম না, খারাপ লেগেছিল। আমার কাছে মনে হয়েছিল, দলে হয়তো থাকতে পারতাম। কিন্তু হয়নি এবং ওটার জন্য আমার কোনো কষ্টও নেই। আমি সব সময়ই আলহামদুলিল্লাহ, যেটা বলি দলের জন্য যতটুকুই আমি করতে পারি, সেটা আমার উপস্থিতি দিয়ে হোক, পারফরম্যান্স দিয়ে হোক, আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে হোক, আমি আমার সর্বোচ্চটাই সব সময় নিংড়ে দিই।’
ক্যারিয়ারে অনেক উত্থান-পতন গিয়েছে মাহমুদউল্লাহর। এ নিয়ে বলেছেন, ‘উত্থান-পতন তো আমার ক্যারিয়ারে কমবেশি ছিলই। আমি সব সময়ই আল্লাহর ওপর বিশ্বাস করি। আল্লাহর কাছেই সব সময় যা কিছু বলার আমি বলি। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করি, আল্লাহ হচ্ছেন সেরা পরিকল্পনাকারী। আমার ভালো সময়, খারাপ সময় সবকিছুরই একটি শিক্ষণীয় বিষয় থাকে—এটাই আমি বিশ্বাস করি।’
অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে নিয়েও কথা বলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তাঁর প্রশংসাই ঝরল মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠে, ‘সে খুব ভালো নেতা। খুব ভালো অধিনায়ক। গেম-সেন্স খুব ভালো। ম্যাচের প্রতি মনোযোগও খুব ভালো। কিন্তু আমাদের তাকে সময় দিতে হবে। কিছুদিন হলো অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছে। তাকে সময় দিতে হবে। আশা করি, ওর যে নেতৃত্বগুণ আছে, ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশের জন্য ভালো করবে।’
২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক মাহমুদউল্লাহ। ৫০টি টেস্ট, ২৩২টি ওয়ানডে ও ১৩১টি টি-টোয়েন্টি খেলার বিশাল অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। কিন্তু এই যাত্রার শুরুটা হয়েছিল কীভাবে, কার হাত ধরে? অর্থাৎ ক্রিকেটে কীভাবে এলেন মাহমুদউল্লাহ?
লাল-সবুজের গল্পে এই প্রশ্নেরও উত্তর দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, ‘আমার আপন ভাই, উনি ক্রিকেট খেলতেন। ওনার হাত ধরেই আমার পথচলা। আমার ছোটবেলার পথচলা শুরু। আমার ক্রিকেটের হাতেখড়ি—সবকিছুই উনার মাধ্যমে। ভাইয়াই সব সময় আমার অনুপ্রেরণা ছিল।’
পরে আর কেউ অনুপ্রেরণা হয়েছেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘সাঈদ আনোয়ারের খেলা খুব ভালো লাগত, যখন আস্তে আস্তে খেলা বুঝতে শুরু করেছি। এমএস ধোনির খেলা খুব ভালো লাগে। আমি তার অনেক বড় ভক্ত। উনার টেম্পারামেন্ট এবং শান্ত মেজাজ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। এই জিনিসগুলো আমার খুব ভালো লাগে।’
জাতীয় দলে খেলা প্রসঙ্গে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন,‘জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা, সেটা সিরিজ হোক কিংবা কোনো মেগা ইভেন্ট হোক, সব সময়ই স্পেশাল। যখনই নতুন জার্সিটা পাই, সব সময়ই খুব ভালো লাগে।’
বাংলাদেশের সমর্থকদের নিয়ে মাহমুদউল্লাহ বলেছেন, ‘আমাদের মানুষ অনেক আবেগপ্রবণ। অনেক অনুভূতি নিয়ে উনারা খেলা দেখেন। উনারা চায় আমরা ভালো করি। তো সবদিক থেকে বিবেচনা করে যে, এত দূর আল্লাহ আমাকে নিয়ে এসেছেন, এটাই অনেক, আলহামদুলিল্লাহ।’