আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে ৫টি ছক্কা মেরেছেন জেইক ফ্রেজার–ম্যাগার্ক
আইপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে ৫টি ছক্কা মেরেছেন জেইক ফ্রেজার–ম্যাগার্ক

আইপিএল

অভিষেকেই ম্যাগার্কের ছক্কার ছড়াছড়ি, জয়ে ফিরল দিল্লি

জেইক ফ্রেজার–ম্যাগার্কের আর কী চাওয়ার থাকতে পারে! গত রাতে দিল্লি ক্যাপিটালস সতীর্থরা ফ্রেজার–ম্যাগার্কের ২২তম জন্মদিন ঘটা করে উদ্‌যাপন করেছেন। তবে তাঁকে আসল উপহার দিয়েছে দিল্লির টিম ম্যানেজমেন্ট। জন্মদিনের পরদিন; মানে আজ আইপিএলে অভিষেক হতে যাচ্ছে, সুখবরটা তাঁকে দেওয়া হয়েছে ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে।

যেকোনো দিন খেলতে হতে পারে—‘চরম পেশাদার’ বলে প্রস্তুতিটা অবশ্য নিয়েই রাখার কথা ফ্রেজার–ম্যাগার্কের। ব্যাটিংয়ে নামার পর তাঁকে দেখে যে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয়নি আজই প্রথমবার আইপিএলে খেলছেন! ব্যাটিংয়ে নামার পরপরই ছক্কার ছড়াছড়িতে মাঠ মাতোয়ারা করে তুলেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই তরুণ। ফেরার ম্যাচে কুলদীপ যাদবের দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর তাঁর ফিফটিতেই লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসকে হারিয়ে দিয়েছে দিল্লি।

ঘরের মাঠ ভারতরত্ন অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ উইকেটে ১৬৭ রান তুলেছিল লক্ষ্ণৌ। ৫ ছক্কা ও ২ রানে ম্যাগার্কের ৫৫ রানের সুবাদে দিল্লি লক্ষ্য টপকে গেছে ৬ উইকেট আর ১১ বল হাতে রেখে। আগের পাঁচ ম্যাচে একটিমাত্র জয় পাওয়া দিল্লি আজকের জয়ে পয়েন্ট তালিকার তলানি থেকে উঠে এসেছে নয়ে, বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অবস্থান এখন তলানিতে। হারের পর লক্ষ্ণৌ তিন থেকে নেমে গেছে চারে।

ফ্রেজার–ম্যাগার্কের ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি আজ প্রথমবার আইপিএলে খেলতে নেমেছেন

অনেক তরুণের কাছে আইপিএল নিজেকে চেনানোর মঞ্চ হলেও ফ্রেজার–ম্যাগার্ক নিজেকে চিনিয়েছেন আরও ৬ মাস আগে। গত বছরের অক্টোবরে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ে ক্রিকেট বিশ্বকে নিজের আবির্ভাবের জানান দেন অস্ট্রেলিয়ার এই ‘পকেট ডায়নামো’। এরপর বিগ ব্যাশ লিগে ভালো করে ডাক পান অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে। আর আজ আইপিএল অভিষেকেই খেললেন পরিণত–পরিপক্ব এক ইনিংস।

ম্যাচটা ছিল দুই দলের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও ঋষভ পন্তের জন্য ছিল ‘নীরব প্রতিযোগিতার’। সামনে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কোনো কোনো ক্রিকেট বিশ্লেষকের মতে, ভারতের বিশ্বকাপ দলে উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান হিসেবে নির্বাচকেরা বেছে নিতে পারেন রাহুল–পন্তের মধ্যে যেকোনো একজনকে। সেই লড়াইয়ে আপাতত এগিয়ে রইলেন দিল্লি অধিনায়ক পন্ত। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা পন্ত আজ শুধু দলীয় লড়াইয়েই জিতলেন না, রাহুলের চেয়ে এগিয়ে থাকলেন নেতৃত্বগুণ ও ব্যক্তিগত লড়াইয়েও।

দুই অধিনায়ক লোকেশ রাহুল (বাঁয়ে) ও ঋষভ পন্তের জন্য আজকের ম্যাচটি ছিল ‘নীরব প্রতিদ্বন্দ্বিতার’

আগে ব্যাটিংয়ে নামে লক্ষ্ণৌকে ভালো শুরু এনে দেওয়া রাহুল করেছেন ৩৯ রান, পন্ত তাঁর চেয়ে করেছেন ২ রান বেশি। তৃতীয় উইকেটে ম্যাগার্কের সঙ্গে ৭৭ রানের জুটি গড়ে দিল্লিকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছেন পন্ত। ৪১ রানের ইনিংসটি খেলার পথে আইপিএল ইতিহাসের ২৫তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন পন্ত। এ ছাড়া উইকেটকিপারের ভূমিকায় পন্তের দুটি ক্যাচের বিপরীতে রাহুল করেছেন একটি স্টাম্পিং।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে আজ সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন কুলদীপ যাদব। ভারতের এই ‘চায়নাম্যান’ স্পিনার কুঁচকির চোটের কারণে আগের তিন ম্যাচ খেলতে পারেননি। আজ ফিরেই নিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট—মার্কাস স্টয়নিস, নিকোলাস পুরানের পর অধিনায়ক রাহুল। পুরানকে যে বলে বোল্ড করেছেন, সেটিকে তো আইপিএলের এবারের মৌসুমের সেরা ডেলিভারি বলা হচ্ছে।

একপর্যায়ে ২ উইকেটে ৬৬ রান তুলে ফেলা লক্ষ্ণৌ ৯৪ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে বসে কুলদীপের দুর্দান্ত স্পিন প্রদর্শনীর কারণেই। তখন মনে হচ্ছিল, লক্ষ্ণৌ হয়তো অল্পতেই গুটিয়ে যাবে। কিন্তু আরশাদ খানকে সঙ্গে নিয়ে অষ্টম উইকেটে রেকর্ড জুটি গড়েন তরুণ আয়ুশ বাদোনি। দুজন অবিচ্ছিন্ন থাকেন ৭৩ রানে, যা আইপিএলে অষ্টম উইকেটে সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল রাজস্থান রয়্যালসের দুই অস্ট্রেলিয়ান ব্র্যাড হজ ও জেমস ফকনারের। ২০১৪ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে অষ্টম উইকেটে ৬৯ রান করেছিলেন তাঁরা। তাঁদের সেই জুটি কোনো কাজে আসেনি। শুধু রাজস্থানের হারের ব্যবধানই কমিয়েছিল। প্রায় এক দশক পর বাদোনি–আরশাদের নতুন রেকর্ড গড়া জুটিটাও গেল বিফলে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস: ২০ ওভারে ১৬৭/৭

(বাদোনি ৫৫*, রাহুল ৩৯, আরশাদ ২০*; কুলদীপ ৩/২০, খলিল ২/৪১, ইশান্ত ১/৩৬)

দিল্লি ক্যাপিটালস: ১৮.১ ওভারে ১৭০/৪

(ফ্রেজার–ম্যাগার্ক ৫৫, পন্ত ৪১, শ ৩২; বিষ্ণয় ২/২৫, নাভিন ১/২৪, ঠাকুর ১/৩১)

ফল: দিল্লি ক্যাপিটালস ৬ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কুলদীপ যাদব (দিল্লি ক্যাপিটালস)।