ঈশান কিষানের ঝড় তখন শেষ। ভারতের ৪০৯ রানের জবাবে ব্যাট করছিলেন দুই বাংলাদেশি ওপেনার লিটন দাস ও এনামুল হক। দুজনই দ্রুত বাউন্ডারি খুঁজে নিয়ে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগিয়ে তুলেছেন। পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের লাল আভা তখন মাঠে এক অপূর্ব দৃশ্য সৃষ্টি করল। এমন সময় বিসিবির এক কর্মকর্তা বলছিলেন, বিশ্বকাপের আগে চট্টগ্রামেই বেশি বেশি খেলা উচিত। ক্যাম্প করা উচিত।
তিনি সাগরিকা স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য দেখে কথাটা বলেননি। তিনি ভাবছিলেন চট্টগ্রামের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটের কথা। লিটনের ব্যাট থেকে দারুণ কিছু শট ততক্ষণে দর্শকদের চোখ জুড়িয়ে দিয়েছে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাধারণত এমন ব্যাটিং চোখে পড়ে না। উইকেটে থেমে থেমে আসা বলগুলোকে এত সহজে বাউন্ডারিতে পাঠানোও যায় না। কিন্তু ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের খেলাগুলো হবে চট্টগ্রামের মতো কন্ডিশনে, মিরপুর নয়।
বিসিবি কর্মকর্তার সেই কথার পেছনে যুক্তি ছিল এটাই। বিশ্বকাপে যে ধরনের কন্ডিশন থাকবে, সে ধরনের কন্ডিশনেই হোক বাংলাদেশের প্রস্তুতি। সেটা না হলে কী হতে পারে, সেটার উদাহরণও নাকি আজকের এই ম্যাচ। কিষানের ব্যাট থেকে আসা ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি (২১০), বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির (১১৩) সৌজন্যে ভারতের ৪০৯ রানের পেছনে ছুটতে হয় বাংলাদেশকে।
আর এত বড় রান তাড়া করার অভ্যস্ততা না থাকায় তেড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বাংলাদেশ করেছে মাত্র ১৮২ রান, অলআউট হয়েছে ইনিংসের ১৬ ওভার বাকি থাকতেই। বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৩ রান এসেছে সাকিব আল হাসানের ব্যাট থেকে।
২২৭ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শেষ করেছে
বাংলাদেশ দল, যা ওয়ানডে ইতিহাসে রানের হিসাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বড় হার। তবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম দুটি ম্যাচ জেতায় ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ।
ভারতের কথাই ধরি। আইসিসি সুপার লিগের বাইরের এই সিরিজটি ভারত খেলতে এসেছে তাদের মূল অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা ছাড়া। দুজনের বিকল্প হিসেবে আরও দু-একজন অলরাউন্ডার খুঁজে বের করা ছিল এই ওয়ানডে সিরিজে ভারতের মূল উদ্দেশ্য। ওয়াশিংটন সুন্দর, অক্ষর প্যাটেলকে ছয় ও সাত নম্বরে খেলিয়ে কারণ এটাই।
বাংলাদেশ এমন কিছু অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে এই সিরিজ খেলেনি। সিরিজ জয়টাই ছিল বাংলাদেশের কাছে মুখ্য। মিরপুরে মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য কীর্তিতে সেটি অর্জনও করেছে। কিন্তু ব্যাটিং নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, সেটি আগের মতো রয়েই গেছে। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিং অর্ডারের শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যান থেকে কিছুই পায়নি বাংলাদেশ।
সিরিজের শেষ ম্যাচ যখন জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, তখন আশা ছিল আরেকটু ভালো ব্যাটিং পারফরম্যান্সের। কিন্তু ব্যাটিং স্বর্গেও নিজেদের মেলে ধরতে পারল না লিটন-সাকিবরা। বিশাল রান তাড়ার চাপে স্বাভাবিক ব্যাটিংটা ভুলে গেছে বাংলাদেশ। অথচ এই উইকেটে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করে একাই ২১০ রান করলেন কিষান।
রেকর্ডময় ইনিংসটি এসেছে স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ে। কিষানের ফিফটি এসেছে ৪৯ বল। ইনিংসের শুরুতে রয়েসয়ে খেলা কিষানই পরে চার-ছক্কার বৃষ্টি নামিয়েছেন। তাঁকে যিনি সঙ্গ দিয়েছেন সেই বিরাট কোহলিও করেছেন হিসাবি ব্যাটিং। ৯১ বল খেলে ১১৩ রানের ইনিংসে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ শট ছিল না। ভারতের ৪০৯ রানের ভিত্তিটা গড়ে দিয়েছেন এই দুজনই। আর এই ব্যাটিং শৃঙ্খলাই খুঁজে পাওয়া গেল না বাংলাদেশ ইনিংসে।