উৎপল শুভ্রর বিশ্বকাপ কড়চা

ওয়াংখেড়েতে এসে শচীন-ধোনির স্মৃতি

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে জ্বলজ্বল করছে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত সব ক্রিকেটারের নাম। বিজয় মার্চেন্ট, সুনীল গাভাস্কার, দিলীপ ভেংসরকার, শচীন টেন্ডুলকার...।

প্রথম দুজনের নামাঙ্কিত অংশ দুটি কেন প্যাভিলিয়ন আর পরের দুজনের কেন স্ট্যান্ড, তা অবশ্য বুঝলাম না। সবই তো একই রকম গ্যালারির অংশ। গতকাল ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ কাভার করতে ওয়াংখেড়েতে এসে কমেন্ট্রি বক্সে উঁকিঝুঁকি মারতে গিয়ে দেখি, দুটি রেডিও ধারাভাষ্যের জন্য দুটি রুমের মাঝখানে সোফায় সুসজ্জিত একটা বক্স। নাম সুনীল গাভাস্কার বক্স। এটা তো আগে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে জানলাম, আগে এটা ছিলও না। বক্সটা হয়েছে বছর দুয়েক আগে।

আইডিয়াটা খুবই ভালো লাগল। সুনীল গাভাস্কার তো শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, ধারাভাষ্যকার হিসেবেও তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। সেই কবে শুরু করেছেন, এখনো টেলিভিশন ছাড়লেই শোনা যায় তাঁর কণ্ঠ। কমেন্ট্রি বক্সেও তাঁর নামে এমন একটা কিছু থাকাই উচিত।

ওয়াংখেড়ে সুনীল গাভাস্কারের মাঠ, শচীন টেন্ডুলকারেরও। এখন মনে হয় শচীন টেন্ডুলকারেরই বেশি। কাল দুপুরে ওয়াংখেড়েতে ঢোকার সময়ই একটু স্মৃতিকাতর, প্রেসবক্সে বসার পর আরও বেশি। ওই তো ওই সিঁড়িটা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শেষবারের মতো ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন। ওই যে ওখানে দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন হৃদয়স্পর্শী সেই বিদায়ী বক্তব্য। যেটির আগে-পরে আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে তোলা সা-চি-ন সা-চি-ন চিৎকারটাও যেন শুনতে পেলাম।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার দিনে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টেন্ডুলকার

একজন ক্রিকেটারকে ঘিরে এমন আবেগের বন্যা ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে কেউ দেখেননি। আর কোনো দিন দেখবেন বলেও মনে হয় না। ওয়াংখেড়েতে আবার এসে সেই স্মৃতি এমন প্রবলভাবে ফিরে এল যে বিশ্বাসই হতে চাইছে না মাঝখানে প্রায় ১০ বছর চলে গেছে। এরপর ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল কাভার করতে এখানে ফিরে এসেছিলাম, সেটা পর্যন্ত মনে নেই। মুম্বাইয়ের সাংবাদিক বন্ধুদের বলে যাচ্ছি, শচীনের শেষ টেস্টের পর এই প্রথম আমি আবার ওয়াংখেড়েতে।

যাঁরা ওই টেস্টে ওয়াংখেড়েতে ছিলেন না, ভবিষ্যতে এখানে এলে তাঁদেরও শচীন টেন্ডুলকারের বিদায়ী টেস্টের স্মৃতি মনে পড়বে। মাঠের সীমানা ঘেঁষেই শচীন টেন্ডুলকারের ভাস্কর্য তৈরি প্রায় শেষ। আগামী ২ নভেম্বর ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে যা উন্মোচিত হবে।

এত পুরোনো স্টেডিয়াম, কত ইতিহাসেরই তো সাক্ষী। সেসবের মধ্যেও দুটি সবার ওপরে। টেন্ডুলকারের শেষ টেস্ট আর মহেন্দ্র সিং ধোনির ছক্কায় শেষ সেই বিশ্বকাপ ফাইনাল।

২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ছক্কা মেরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন ধোনি। তাঁর সেই শট।

২০১১ ফাইনালে ধোনির ছক্কাটা মিডউইকেটের গ্যালারির যে আসন দুটির কোনো একটাতে পড়েছিল বলে ধারণা, কিছুদিন আগে সেই দুটিকে আলাদা করে একটা ‘ ভিক্টরি মেমোরিয়াল স্ট্যান্ড’ করা হয়েছে। তাতেও দর্শক বসেন। তবে সে জন্য একটু বেশি দাম দিতে হয় বলেই শুনলাম।

ওয়াংখেড়ের সবচেয়ে স্মরণীয় দুটি উপলক্ষেরই আমি প্রত্যক্ষদর্শী। নিজেকে সৌভাগ্যবান না মানাটা অকৃতজ্ঞতা হবে।