ব্যাটসম্যানদের খেলা—আইপিএলের পিঠে এ তকমাই লেগে গেছে। পরিসংখ্যান দেখলেও এটাকেই মনে হবে স্বাভাবিক। সর্বশেষ আইপিএলে ওভারপ্রতি ইতিহাস সর্বোচ্চ ৯ রানের বেশি করে উঠেছে, ছক্কা হয়েছে আইপিএল ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২৬০টি, যা আগের সর্বোচ্চের চেয়ে ১৩৬টি বেশি। বোঝাই যাচ্ছে, টি–টোয়েন্টির এ টুর্নামেন্টটিতে ব্যাটসম্যানদের দাপট বাড়ছে।
আইপিএলের মাঠে ব্যাটসম্যানদের দাপট দিনকে দিন বাড়তে থাকলেও নিলামের টেবিলে বোলারদেরই রাজত্ব। প্রশ্ন হলো, নিলামে বোলারদের প্রতি, বিশেষ করে পেসারদের জন্য কোটি কোটি রুপি কেন খরচ করছে দলগুলো?
এবারের আইপিএলের মেগা নিলামে খেয়াল করলেও পেসারদের বাড়তি গুরুত্ব চোখে পড়বে। ২৪ ও ২৫ নভেম্বর জেদ্দায় হওয়া নিলামে মোট ১০ জন পেসার বিক্রি হয়েছেন ১০ কোটি বা এর চেয়ে বেশি রুপিতে। পেসারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৮ কোটি রুপিতে বিক্রি হয়েছেন ভারতের অর্শদীপ সিং।
১২ কোটি ৫০ লাখ রুপিতে বিক্রি হয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, জশ হ্যাজলউড, জফরা আর্চার। ভারতের মোহাম্মদ সিরাজের দামও উঠেছে ১২ কোটি ২৫ লাখ রুপি। অস্ট্রেলিয়ার পেসার মিচেল স্টার্কের দাম উঠেছে ১১ কোটি ৭৫ লাখ। এঁদের সবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দাপট দেখিয়েছেন বা এখনো দেখাচ্ছেন। তাঁদের দাম ওঠাটা স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া যায়।
তবে এদের পরের সারির পেসারদের দামও উঠেছে চোখে পড়ার মতো। ভুবনেশ্বর কুমারের কথা ধরুন। আইপিএল এই পেসার তাঁর সময় কাটিয়েছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদে।
২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত খেলেছেন দলটিতে। তাদের হয়ে উইকেট নিয়েছেন ১৫৭টি। এই পেসারকে পেতে এবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু খরচ করছে ১০ কোটি ৭৫ লাখ রুপি। হয়তো চিন্নাস্বামীর ছোট মাঠে ভুবনেশ্বরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইছে দলটি।
পরিচিত ভারতীয় পেসার দীপক চাহার, নটরাজন, আবেশ খান, প্রসিধ কৃষ্ণাদের মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হয়েছেন চাহারই। তাঁর দামও উঠেছে ৯ কোটি ২৫ লাখ রুপি। টি–টোয়েন্টিতে এখনো সেভাবে নিজেকে প্রমাণ করতে না পারা মুকেশ কুমারও বিক্রি হয়েছেন ৮ কোটি রুপিতে।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছেন ঋষভ পন্ত (২৭ কোটি রুপি) ও শ্রেয়াস আইয়ার (২৬ কোটি ৭৫ লাখ রুপি)। নিলামে তাঁরা অনেক বেশি দামে বিক্রি হবেন, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। আরেক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল পাচ্ছেন ১৪ কোটি।
ঈশান কিষানকেও এঁদের তালিকায় রাখা যায়। কারণ, জাতীয় দলে না হলেও আইপিএলে তিনিও তারকা। তাই মুম্বাই তাঁকে ছাড়ার পর সানরাইজার্স কিনেছে ১১ কোটি ২৫ লাখ রুপি দিয়ে। তবে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জিতেশ শর্মার দাম উঠেছে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। তিনি পাচ্ছেন ১১ কোটি।
সব মিলিয়ে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ও শুধু ব্যাটসম্যান মিলিয়ে ১০ কোটির বেশি দাম উঠেছে ৭ জনের। অলরাউন্ডার হিসেবে মার্কাস স্টয়নিস ও ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে এই তালিকায় যোগ করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৯ জনে। মানে শুধু পেসারদের চেয়ে এখনো একজন কম! স্পিনারদের মধ্যে দুজন বিক্রি হয়েছেন ১০ কোটির বেশি দামে।
গত মৌসুমে আইপিএলে উইকেট পড়েছিল ৮৮৩টি, যা এর আগের তিন মৌসুমের মধ্যে সর্বনিম্ন। বোঝাই যাচ্ছে, উইকেটের চাহিদা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। আর যাঁরা সেই উইকেট নিতে পারেন, তাঁদের চাহিদাও তাই বাড়ছে।