ফেসবুকে পরিচয়, পরিচয় থেকে ‘চ্যালেঞ্জ’, আর ‘চ্যালেঞ্জ’ থেকে ‘ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব’!
বর্তমানে জাতীয় দলের বাইরে থাকা বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার সোহেলী আক্তারের ঘটনাও কি এ রকম? এই সোহেলীর বিরুদ্ধেই এখন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এক খেলোয়াড়কে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ নারী দলের ক্রিকেটার লতা মণ্ডলকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন সোহেলী, যিনি জাতীয় দলের হয়ে সর্বশেষ খেলেছেন গত বছর সিলেটে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে। প্রস্তাবটা ছিল এ রকম—স্টাম্পিং বা হিট উইকেট আউট হলে লতাকে ২০-২৫ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
লতা এমন প্রস্তাব পাওয়ার কথা সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন টিম ম্যানেজমেন্টকে। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে বিষয়টি চলে গেছে আইসিসির দুর্নীতি দমন বিভাগের কাছেও। তদন্তাধীন বিষয়ে তাই কথা বলতে নারাজ সোহেলী।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে আজ রাতে তিনি বলেন, ‘আকসু থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমাকে বলা হয়েছে, এ নিয়ে এখন যেন মিডিয়া বা কারও সঙ্গে আলোচনা না করি। আমি তাই এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।’
তবে সোহেলীর ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র থেকে জানা গেছে, সোহেলী নাকি একধরনের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার অংশ হিসেবেই লতা মণ্ডলকে ওই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। গল্পটা বিশ্বাস করুন বা না করুন, তা এ রকম—গত অক্টোবরে সিলেটে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের সময় ফেসবুকে মো. আকাশ রহমান নামে এক তরুণের সঙ্গে পরিচয় হয় সোহেলীর।
এই আকাশই সোহেলীকে বলেন, তাঁর ধারণা বাংলাদেশ নারী দলের বেশ কয়েকজন ব্যাটার ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত। সে কারণেই তাঁরা অনেক সময় জেতা ম্যাচ হেরে যান। সোহেলী প্রতিবাদ করেন, বাংলাদেশের মেয়েরা এ রকম নয়। আকাশ বলেন, এতটা নিশ্চিত তিনি কীভাবে হন! তখনই আসে চ্যালেঞ্জের প্রস্তাব, যেটা আকাশকে সোহেলীই দিয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
সোহেলী ভয়েস মেসেজে জাতীয় দলে তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ ক্রিকেটার লতাকে ইচ্ছে করে হিট আউট বা স্টাম্পিং হওয়ার প্রস্তাবটা দেন গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে। তারও আগে ঢাকার একটি কফিশপে দেখা হয় আকাশ ও সোহেলীর, যেখানে বাংলাদেশের মেয়েদের ফিক্সিং করা না-করা নিয়ে দুজনের মধ্যে নাকি বেশ তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে সোহেলী আকাশকে বলেন, তিনি প্রমাণ করে দেবেন, বাংলাদেশের মেয়েরা ফিক্সিং করেন না।
আকাশই তখন সোহেলীকে বুঝিয়ে দেন, কীভাবে লতাকে প্রস্তাবটা দিতে হবে। লতাকে বলতে হবে, তাঁর (সোহেলী) এক ভাই বেটিং করেন। এখন বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভালো অফার যাচ্ছে। লতার জন্য অফারটা এ রকম...। তিনি রাজি থাকলে যেন সোহেলীকে জানান।
লতাকে ভয়েস মেসেজে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাঠানোর কারণ হিসেবে ঘনিষ্ঠ মহলে নাকি এটাই বলেছেন সোহেলী। লতা প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার পর আকাশকে তা জানান সোহেলী। আকাশ নাকি তখন তাঁকে বলেছেন, তাহলে তাঁর ধারণা ভুল। বাংলাদেশের মেয়েরা এসবের সঙ্গে জড়িত নন।
২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের পরের এক বছরে বাংলাদেশ নারী দলের হয় দুটি ওয়ানডে ও পাঁচটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেন সোহেলী। এরপর আট বছর বিরতি দিয়ে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে আবারও দলে ফেরানো হয় তাঁকে। বাছাইপর্বে ৫ ম্যাচ খেলার পর এশিয়া কাপেও ম্যাচ খেলেছেন তিনটি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই অভিজ্ঞতাই যথেষ্ট আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নিয়মনীতি বোঝার জন্য। তারপরও সোহেলী কীভাবে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টের মধ্যে একজন খেলোয়াড়কে এমন প্রস্তাব পাঠান? তাঁর তো জানার কথা, এ রকম প্রস্তাব পেলে নিয়ম অনুযায়ী লতা সেটা আকসুকে জানাবেন!
কেন আগে বিষয়টা এভাবে ভাবলেন না, তা নিয়ে নাকি এখন ঘনিষ্ঠদের কাছে আফসোস করছেন সোহেলী, বুঝতে পারছেন নিজের ‘বোকামি’। তিনিও জানেন লতার মুঠোফোনে তাঁর যে ভয়েস মেসেজ গেছে, তাতে নিশ্চিত, এটাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাবই ধরে নিচ্ছে আকসু। তবে সোহেলীর আশা, আকাশের সঙ্গে কথোপকথনের স্ক্রিনশট তদন্তে তাঁর পক্ষে যাবে। সেগুলো পড়লে যে কেউ বুঝবে কাজটা আকাশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই করা।
ঘনিষ্ঠ মহলে সোহেলী দাবি করেছেন, আকাশের সঙ্গে তাঁর ফেসবুকেই পরিচয়। দু-একবার কফিশপে দেখা-সাক্ষাৎও হয়েছে। আকাশ সোহেলীকে বলেছেন, তিনি ঢাকার বাড্ডায় থাকেন। স্নাতকের ছাত্র। আকাশ সম্পর্কে সোহেলী নাকি আর কিছু জানেন না।