টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন এক বছর হয়ে গেল। গত বছর এ সময়ই ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পর অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান মুমিনুল হক। সংবাদ সম্মেলনেও সর্বশেষ এসেছিলেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে। এরপর সংবাদ সম্মেলনে আসার মতো বিশেষ কিছু করেননি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ টেস্ট সেঞ্চুরি করার পর সে উপলক্ষ তৈরি হয়েছে।
মুমিনুলের সংবাদ সম্মেলন মানেই বিশেষ কিছু। মন খুলে কথা বলায় এই ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রশ্ন-উত্তর পর্ব সব সময়ই উপভোগ্য। আজ সংবাদ সম্মেলনকক্ষে ঢোকার আগেই কী ধরনের প্রশ্ন হতে পারে, তা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মজা করছিলেন এই বাঁহাতি। মুমিনুল যে ধরনের প্রশ্ন প্রত্যাশা করছিলেন, প্রথম প্রশ্নটা হলো ঠিক সে রকমই।
অনেক দিন পর রানে ফেরায় স্বস্তি পাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে মুমিনুল মজার ছলে বললেন, ‘এই প্রশ্নটাই প্রত্যাশা করছিলাম (হাসি)।’ মুমিনুলের হয়তো উত্তরটাও প্রস্তুত ছিল, ‘আপনি যদি শেষ চার ইনিংস দেখেন, এতটা খারাপ করেছি বলে মনে হয় না। আপনারা হয়তো প্রতি ম্যাচে ২০০ আশা করেন, এ জন্য আপনাদের কাছে মনে হয় আমি রানে নেই! হ্যাঁ, আক্ষেপ ছিল লম্বা ইনিংস খেলতে পারিনি, যেটা আমার অভ্যাস। এক-দুই-তিন-চার সেশন ব্যাটিং করা, সেটা নিয়ে আক্ষেপ ছিল। এখন দলের জন্য করতে পারছি, সে জন্য খুশি।’
এ বছর বাংলাদেশ দল ধারাবাহিকভাবে টেস্ট খেলছে না। গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্টের পর আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি করে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট দিয়ে শেষ হবে এ বছরটা। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলার কারণে মুমিনুল ভালো করলেও সেটি মনে হয় কোন দূর অতীতের ঘটনা।
মুমিনুলকে দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁর উত্তর ছিল এমন, ‘এটা নিয়ে আপনাদের বেশি উদ্বেগ হওয়া উচিত। কারণ, একটা খেলোয়াড় যখন রানে থাকে না, আপনারা সময়ের ব্যাপারটা বিচার করেন না। একটা খেলোয়াড় চার মাস পর টেস্ট খেলছে, ওকে ওই সুযোগটা আপনারা দেন না।’
মুমিনুল অবশ্য লম্বা বিরতি দিয়ে টেস্ট খেলার ব্যাপারে অভ্যস্ত। তিনি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখেন। এটি মুমিনুলের জন্য প্রতিপক্ষ নিয়ে ভালোভাবে পরিকল্পনা করার সুযোগ, ‘লম্বা সময় পেলে আমি প্রতিপক্ষ নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারি। বিশ্লেষণ করতে পারি। কল্পনা করতে পারি। এটা করলেই যে আমি সফল হব, তা নয়। তবে এটা করলে আমার সাফল্যের হার বাড়বে।’
সম্প্রতি সাফল্যের হার বাড়ছে আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেনের। মুমিনুলের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও যখন নাজমুল তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন, তাঁর উদ্যাপনের সঙ্গী ছিলেন মুমিনুল। দুজন মিলে ১১৩ বলে ৮৩ রান যোগ করেন।
নাজমুলের ব্যাটিং নিয়ে মুমিনুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি মজার উত্তরই দিলেন, ‘শান্তর ইনিংস দেখলে মনে হয় খেলাটা অনেক সহজ, সব দিক দিয়ে খেলে। আমারও মনে হয় এভাবে খেলি। কিন্তু আমি যে রকম ব্যাটসম্যান ওই রকম খেলা একটু কঠিন। শান্ত-লিটন দুজনেরই ব্যাটিং দেখতে খুব ভালো লাগে, সুন্দর লাগে। শান্ত খারাপ বল ছাড়ে না, বাউন্ডারি মারে।’
নাজমুল জোড়া সেঞ্চুরি করুক, এটা নাকি দলেরই প্রত্যাশা ছিল। মুমিনুল জানালেন, ‘দুই ইনিংসে যেভাবে খেলেছে, সেটা এককথায় অসাধারণ। এই কন্ডিশনে যে গরম, দুই ইনিংসেই এক শ করাটা অনেক বড় অর্জন। আমরা সবাই চাইছিলাম সে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করুক।’
এই নাজমুলকেই ছয় মাস আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিক্ত সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। আজ মুমিনুলের সংবাদ সম্মেলনে এসেছে সে প্রসঙ্গও। নাজমুলের ওই দুঃসময়ের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি, ‘আমি নিজেও এটা সামলেছি, এটা ভয়ংকর। যার মধ্যে দিয়ে যায়, সে বুঝবে। আমার সময় মনে হয়েছে পুরো পৃথিবী একদিকে আর আমি আরেক দিকে। যার হয়, সে ছাড়া কেউ বোঝে না। ওই সময় শুধু প্রসেস ঠিক রাখতে পারেন, এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। যতই কান্নাকাটি করেন, কিছু হবে না।’
নাজমুল সে সময়টা পার করে এসেছেন। নিজেকে পরিণত করেছেন, তিন সংস্করণে ধারাবাহিক। মুমিনুলও তা–ই। রান–খরার সময়টা পেছনে ফেলে এসেছেন সেঞ্চুরি করে। তবে তাঁর যাত্রাটা এখন পর্যন্ত লাল বলেই সীমাবদ্ধ। তবু মুমিনুলের প্রতি সংবাদ সম্মেলনের মতো আজও তাঁকে প্রশ্ন করা হয় সাদা বলের ক্রিকেটের স্বপ্ন নিয়ে। মুমিনুলও বরাবরের মতো আশার কথা শুনিয়েছেন। এ ছাড়া মুমিনুলের আর কি করার আছে?