আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩৯ রান করে আউট হন সাকিব। মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন তার আগেই
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজ তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে ৩৯ রান করে আউট হন সাকিব। মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন তার আগেই

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ যে নতুন কীর্তি গড়লেন সাকিব

আফগান পেসার আবদুল রহমানের বল অফ স্টাম্পের বাইরে খাটো লেংথে ছিল। সাকিব আল হাসান বেশ জোরেই স্কয়ার কাট করেছিলেন। নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আফগানিস্তান উইকেটকিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ডাইভ দিলেও বল তাঁকে হালকা ‘টিজ’ করে পাশ দিয়ে বাউন্ডারিতে।

১৪.২ ওভারে খেলা এই শটটা সাকিব মনে রাখবেন না। কিন্তু যদি তাঁকে বলা হয়, ওই শটে যে চার রান এসেছে তাতে ২৯ রানে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে দারুণ এক মাইলফলক ছুঁয়েছেন তাহলে? ব্যক্তিগত কীর্তি কে ভুলতে চায়! সাকিবও নিশ্চয়ই মাইলফলকটি জানার পর শটটি মনে রাখতে চাইবেন।

সাকিবের কোনো কোনো ভক্ত ক্ষণগণনা শুরু করেছেন সম্ভবত তাঁর ব্যাটিংয়ে নামার পর থেকেই। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়ার আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে সাকিবের মোট রান সংখ্যা ছিল—১৩৯৭১। টেস্টে ৪৪৫৪, ওয়ানডেতে ৭১৭২ এবং টি–টোয়েন্টিতে ২৩৪৫—এই পরিসংখ্যান আজকের ম্যাচের আগে।

অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে আর ২৯ রান দরকার ছিল সাকিবের। বাংলাদেশের ইনিংসে ১৫তম ওভারে ওই ‘হার্ড ফ্ল্যাশ’ খেলার মাধ্যমে মাইলফলকটি ছুঁয়েও ফেলেন। তখনই দারুণ এক ‘ক্লাব’–এর জন্ম দেন সাকিব, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এর আগে যার অস্তিত্ব ছিল না।

বোলিংয়েও আজ উইকেট পেয়েছেন সাকিব

কোন ক্লাব? যেহেতু নতুন ক্লাব, তাই নামকরণের জন্ম হয়েছে সাকিব ২৯ রানে পৌঁছানোর পর—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ন্যূনতম ১৪ হাজার রান ও ৬০০ উইকেট। আজ সাকিব প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই ক্লাবের গোড়াপত্তন করার আগে কোনো অলরাউন্ডারই এমন অর্জনের দেখা পাননি।

অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ১৪ হাজার রান ও ৬০০ উইকেটের ‘ডাবল ক্লাব’–এর জন্ম দিলেন বাংলাদেশের এই তারকা অলরাউন্ডার। অবশ্য সাকিবের একদম পাঁড় ভক্তরা এমন পরিসংখ্যানে খুব বেশি আহ্লাদিত না–ও হতে পারেন। বরং তাঁরা পাল্টা প্রশ্ন করতে পারেন, এমন অর্জন কি এই প্রথম?

অবশ্যই না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ন্যূনতম ১২ ও ১৩ হাজার রান ও ৬০০ উইকেট—এ দুটি ক্লাবেরও জন্ম দিয়েছেন সাকিব। ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজারি ক্লাবে প্রবেশ করেন সাকিব। তখনো তিন সংস্করণ মিলিয়ে (৫৮৩) তাঁর ৬০০ উইকেট হয়নি। সে বছর অক্টোবরে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ওই ‘ডাবল’–এর দেখা পান সাকিব।

সাকিবের কীর্তি গড়ার এই ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছে বাংলাদেশ

অলরাউন্ডারদের মধ্যে তিন সংস্করণ মিলিয়ে রানে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি জ্যাক ক্যালিসের ধারেকাছে কেউ নেই। ২৫৫৩৪ রান করেছেন ক্যালিস। তাঁর উইকেট সংখ্যা ৫৭৭। ন্যূনতম ৫০০ উইকেট ও ১১ হাজার রানের ‘ডাবল’ ক্লাবে শুধু ক্যালিস, শহীদ আফ্রিদি আর সাকিবই ছিলেন। ২০২১ সালের ১৬ জুলাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাকিব ক্যালিসের ৫৭৭ উইকেট টপকে যাওয়ার পর থেকেই আসলে তাঁকে কেউ ধরতে পারেননি। ন্যূনতম ১২ হাজার ও ৬০০ উইকেটের ‘ডাবল ক্লাব’ থেকেই সাকিব একা! ১৩ হাজার ও ৬০০–এর পর ১৪ হাজার এবং ৬০০–এর ‘ডাবল ক্লাবে’ তাই সাকিবের একা পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক।

তবে সাকিব নিশ্চয়ই তাতে খুশিই হবেন। এসব কীর্তি যে আর কারও নেই!