চেন্নাই টেস্টে সাকিব আল হাসানের চোট-বিতর্কে নতুন অধ্যায় যোগ করলেন নির্বাচক হান্নান সরকার। চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে সফর করা সাবেক এই ক্রিকেটার আজ জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ ফিট হয়ে চেন্নাই টেস্ট খেলতে নামলেও বোলিংয়ের সময় আঙুলে ব্যথা পেয়েছেন সাকিব।
পরে একই আঙুলে ব্যাটিংয়ের সময় বল লেগেছে এই তারকা অলরাউন্ডারের। তিনি এখন বাংলাদেশ দলের ফিজিও বায়েজেদুল ইসলামের পর্যবেক্ষণে আছেন। কানপুরে দলের অনুশীলনের পর সাকিবকে পরের টেস্টে খেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজম্যান্ট।
আজ চেন্নাইয়ে বাংলাদেশ দলের টিম হোটেলে সফর কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হান্নান। সেখানে তিনি সাকিবের বর্তমান ফর্মের প্রসঙ্গে উত্তর দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘সাকিব আসলে আমাদের সেরা খেলোয়াড়। এটা আমাদের বলতেই হবে। সাকিব যদি একাদশে থাকে, তাহলে কম্বিনেশন সাজানো সহজ হয়। সে জায়গায় থেকে সাকিব এ ম্যাচেও খেলেছে। তাঁর ব্যাটিংটা আমার খুব ভালো লেগেছে। অন্যদের তুলনায়, সাকিবের আগের ব্যাটিংয়ের তুলনায় এই ম্যাচে তাঁকে অনেক আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। খুব স্বাচ্ছন্দ্যে খেলেছে, চাপ হ্যান্ডেল করেছে। হ্যাঁ, রানটা বড় হয়নি। এটা ঠিক। কিন্তু সাকিব বরাবরই আমাদের দলের ব্যালেন্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।’
গুরুত্বপূর্ণ বলেই সাকিবকে একাদশে রাখা–না রাখার সিদ্ধান্তটা এখনই নিতে চায় না টিম ম্যানেজম্যান্ট। চোটের কথা জানিয়ে হান্নান জানান, ‘সাকিবকে নিয়ে ম্যাচে যাওয়ার আগে আমাদের সবসময় চিন্তা করে নিতে হয়। পরের ম্যাচের আগে আমাদের সেই চিন্তার সময় আছে। আমরা দেখব তাঁর কী অবস্থা। আমরা জানি যে সাকিবের হাতের ব্যথা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এটা কিন্তু ম্যাচের আগে ছিল না। অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমরা ম্যাচের আগে ফিজিওর ১০০ ভাগ ক্লিয়ারেন্স নিয়েই তাঁকে দলে রেখেছি। তখন ১০০ ভাগ ফিটই ছিল। পরের ম্যাচের আগে সময় আছে, আমরা তাঁকে নিয়ে চিন্তা করব।’
পরে চোটের বিষয়টি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে হান্নান বলেছেন, ‘আপনি সরাসরি চোট বলতে পারবেন না। কিছু ছোট ছোট ব্যাপার থাকে, যে আঙুলটায় অসুবিধা হয়েছিল, সেটা ম্যাচের আগে সে ফিল করতে পারেনি। বোলিং করা শুরু করার পর ফিল করেছে। সেই আঙুলে আবার বল লেগেছে। সেদিক থেকে কিছুটা তো ব্যথা রয়েছে। যেহেতু সেকেন্ড টেস্টের আগে সময় আছে, আমাদেরও দেখার সুযোগ রয়েছে। সাকিব এমন একজন প্লেয়ার, সে যদি খেলতে না পারে, যদি মনে করে বোলিং করতে পারবে না, তাহলে কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে পারে। আর সে যদি মনে করে বোলিং-ব্যাটিং কিছুই করতে পারবে না, তাহলে সিনারিও ভিন্ন। সময় যেহেতু আছে, পরে আমরা দেখেশুনে জাজমেন্টে যাব।’
এই মুহূর্তে সাকিব কতোটা ফিট, সে প্রশ্নের উত্তরে হান্নানের কথা ছিল এমন, ‘আমি পারসেন্টেজের জাজমেন্ট এই মুহূর্তে করব না। গতকাল খেলা শেষ হয়েছে। আজ ডে অফ। আগামীকাল কানপুর যাচ্ছি। তারপর দুটি সেশন থাকবে। সেটা দেখে ওই জাজমেন্টে যাব। এই দুইটা দিন কিন্তু তাঁকে ফিজিও পুরো পর্যবেক্ষণে রেখেছে। আমরা যখন মাঠে ফিরব, সেখান থেকে ফিজিওর একটা তখন নেব। আজ-কাল পুরোপুরি বিশ্রাম। এখানে বল-ব্যাট ধরার ব্যাপার নেই।’
হান্নান যে ‘জাজমেন্টের’ কথা বললেন, সেটি হতে পারে দুইরকম। হয় সাকিব খেলবেন একজন ব্যাটসম্যানের ভূমিকায়, না হয় তাঁকে ছাড়াই সাজানো হবে কানপুর টেস্টের একাদশ। সে আভাস আছে হান্নানের কথায়, ‘আমরা কোন কম্বিনেশনে যাব, কোন ফরমেশনে আমরা টিমটা সাজাব… সেখানে আমরা দেখব উইকেটটা কেমন, আমরা কন্ডিশনটা দেখে জাজমেন্টে যাব। সেখানে স্ট্র্যাজেটি পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে আমরা করতেই পারি।’ পরে যোগ করেন, ‘সাকিব যেহেতু অলরাউন্ডার, তাকে আমরা অলরাউন্ডার হিসেবে চিন্তা করি। অলরাউন্ডার হলেও সে যদি ব্যাটিং ভালো করে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবে, সে যদি বোলিং ভালো করে বোলার হিসেবেও খেলতে পারে। অবশ্যই সাকিব অলরাউন্ডার হিসেবে আমাদের বিবেচনায় সবসময় প্রায়োরিটিতে থাকে।’
সাকিবকে ছাড়াও একাদশ সাজানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি হান্নান, ‘আমরা টিম সাজাতে গেলে সাকিবকে যদি আমাদের প্রয়োজন হয় সাকিব খেলবে, আর যদি মনে হয় না এই মুহূর্তে সাকিবকে ছাড়া… সেটাও হতে পারে। সাকিব কিন্তু অন্য সংস্করণও খেলে, সে জায়গা থেকে জানেন সামনে তিনটা টি-টোয়েন্টি রয়েছে, সেটাও আমাদের বিবেচনায় থাকবে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে… যেহেতু চারদিন আছে, দুই দিন আমরা মাঠে থাকব, সেখানে আমরা আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করব, তার ব্যাটিং-বোলিং জাজ করার চেষ্টা করব, তার কাছ থেকে মতামত নেব, তারপর সিদ্ধান্তে আসব।’