আরেকটি ম্যাচে বাংলাদেশকে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে দেখলাম না। টানা হারের মধ্যে ছিল বলে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি থাকার কথা দুই দলেরই। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্যটা ফুটে উঠল হারের ব্যবধানেই। পাকিস্তান নিঃসন্দেহে অনেক ভালো খেলেছে; কিন্তু বাংলাদেশের আরও ভালো খেলার সুযোগ ছিল।
ব্যাটিংয়ে সে সুযোগটা একাধিকবার হারিয়েছে বাংলাদেশ। শুরুটা লিটন দাসকে দিয়ে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে জুটিটা বড় হচ্ছিল, সে সময় তাঁর একমুহূর্তের অসতর্কতা দলকে পিছিয়ে দিয়েছে। সুযোগের প্রথম অপচয় সেটি। মাহমুদউল্লাহ অনেক সাবলীল খেললেও দুর্দান্ত এক ডেলিভারির শিকার। সাকিব আল হাসানের নিচে নামাটা যৌক্তিক মনে হয়েছে। সময়ও নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনিও থেমেছেন আগেভাগেই।
তাওহিদ হৃদয় ও ফখর জামান—দুজনই বেশ কিছু দিন পর নিজ নিজ দলে ফিরে এসেছেন। হৃদয়ের মাঝে ক্ষুধাটা দেখিনি, ফখর যেখানে সময় নিয়ে ইনিংস গড়েছেন। হৃদয়ের হাতে অনেক সময় ছিল, সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়ার সুযোগও ছিল। কিন্তু তিনি বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে খেলছেন, সে বোধটা বোধ হয় তাঁর ছিল না। অপরিণত ব্যাটসম্যানের মতো খেলেছেন। অবশ্য শুরুর ধসের পর সব ঠিকঠাক থাকলেও হয়তো ২৬০-২৭০ হতো। আর পরের ইনিংসে ব্যাটিং সহজও ছিল আরও।
আমার মনে হয়েছে ম্যাচের আগে দল নির্বাচনের যে মিটিং হয়, তাতে আগে বোলিং কম্বিনেশনটা ঠিক করা হয়েছে। সাকিব ও মিরাজের সঙ্গে তিন পেসার খেলবেন। ফলে আট ব্যাটসম্যান লাগবে, তাতে কে ফর্মে আছেন বা নেই—সে সব বিবেচনার সুযোগই নেই। হৃদয় এই কম্বিনেশনের কারণেই ঢুকেছেন। কিন্তু আগে বোলিং করলে ৫ বোলার কি লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট হতো?
মিরাজকে যেখানেই নামানো হোক, তাঁকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয়। এটি ভালো লেগেছে। আর এ ম্যাচেও ধারাভাষ্যে মাহমুদউল্লাহর অনেক প্রশংসা শুনেছি, তাঁদের মতে এ বিশ্বকাপে তিনিই দলের সেরা ব্যাটসম্যান। মাহমুদউল্লাহর স্বীকৃতির জন্য হয়তো সেটিই যথেষ্ট। হ্যাঁ, দলের কাজে খুব বেশি আসেনি সেসব। কিন্তু যাঁদের কাছে বার্তা যাওয়ার, সেটি গেছে। তাতে হয়তো অনেকের মাথা হেঁটই হয়েছে।
শুরুতেই উইকেট নেওয়া না গেলে এ ম্যাচে আসলে কোনো সুযোগ ছিলও না। পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি বাংলাদেশ দলের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। নেট রানরেটের কথা ভেবে না খেললে হয়তো হারের ব্যবধান আরেকটু বড় হতো।
কলকাতায় বাংলাদেশের যাঁরা সমর্থক ছিলেন, তাঁদের জন্য খারাপ লাগছে। খেলোয়াড়েরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, প্রস্তুতি ও প্রচেষ্টায় তাঁদের সেরাটি তাঁরা দিতে পারেননি।
গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক