বিশ্বকাপে বিসিবির পারফরম্যান্সও বেশ দুর্বল

আটে থেকেই হয়তো বিশ্বকাপ শেষ করবে বাংলাদেশ, মানে নিচে থাকবে শুধু বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা দুটি দল—শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডস। এবারের বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের কী অর্জন, বাংলাদেশের অবস্থানের মধ্যেই সে প্রশ্নের উত্তর আছে।

দল হিসেবে অস্ট্রেলিয়া অনেক শক্তিশালী। তাদের শুরুটা হয়তো খারাপ ছিল, কিন্তু এখন টানা জয়ের মধ্যে আছে, ব্যাটসম্যানরাও ফর্মে। এমন দলের সঙ্গে কতটুকু লড়াই করতে পারবে বাংলাদেশ, তা নিয়ে সংশয় ছিলই। এরপরও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ৩০০ রান হয়েছে, সবাই কমবেশি রান পেয়েছেন, সেটি একটি সান্ত্বনা।

তবে ৩০০-এর আশপাশের স্কোরও যে যথেষ্ট ছিল না, হারের ব্যবধানই তা বলে দেয়। প্রতিপক্ষ জিতেছে অনেকগুলো উইকেট ও বল বাকি রেখে। সবাই রান না পেয়ে যদি বাংলাদেশের দু-তিনজনও বড় ইনিংস খেলতে পারতেন, তাহলে হয়তো স্কোরটা আরেকটু বড় হতো। এর আগেও যা দেখা গেছে, মিচেল মার্শ তা–ই আরেকবার দেখালেন—শুধু সেঞ্চুরি করলে চলে না, ইনিংস বড় করতে হয়। আগে ব্যাটিং করার সুযোগ বাংলাদেশ পেয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিয়মিত উইকেট পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ওপর তাই সেই অর্থে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি, অস্ট্রেলিয়াকে বড় রকমের চাপেও ফেলা যায়নি। তবু শেষ ম্যাচে ব্যাটিংটা হয়তো একটু আশার আলো দেখিয়েছে, ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছেন—তাঁদের সামর্থ্য আছে। কিন্তু সামর্থ্যের সে সীমা বাড়াতে হবে।

ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্যের সীমা বাড়াতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শুধু তাওহিদ হৃদয়ই অর্ধশতক পেয়েছেন

স্পিনাররা উইকেট থেকে একটু সহায়তা পেলে লড়াইটা জমতে পারত। বাংলাদেশ দলে তিনজন স্পিনারও ছিলেন। কিন্তু স্পিনাররা তেমন সহায়তা পাননি বলে চাপও তৈরি করা যায়নি। ফ্ল্যাট উইকেটে ৩০০ রানও আসলে যথেষ্ট নয় অনেক সময়। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতেই খেলাটি অস্ট্রেলিয়ার দিকে চলে গেছে।

এ বিশ্বকাপ থেকে আশা করি বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে ভালো করতে গেলে নিজেদের আরও কতটা উন্নতি করতে হবে, সেটি আশা করি সবাই বুঝেছেন। ভালো উইকেটে আরও ভালো ক্রিকেট খেলার বিকল্প নেই। অন্য দলগুলো কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটিও দেখা গেছে। আফগানিস্তান জ্বলন্ত উদাহরণ, নেদারল্যান্ডসও খারাপ করেনি। ওয়ানডে ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির যে প্রভাব পড়ছে, সেটির গতির সঙ্গে আমাদেরও মানিয়ে নিতে হবে।

মাহমুদউল্লাহ সম্ভবত শেষ বিশ্বকাপটা খেলে ফেললেন

মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের হয়তো এটিই শেষ বিশ্বকাপ। তাঁদের শেষটি খুব একটা ভালো হলো না। তবে মাহমুদউল্লাহ প্রমাণ করেছেন, অভিজ্ঞতার দরকার আছে। মিরাজ ব্যাটিংয়ে বেশ ভালোই করেছেন। এর বাইরে দুজনের কথা বলতে চাই, হৃদয় ও তানজিদ। তাঁদের সম্ভাবনা আছে। তাঁদের পেছনে সময় দেওয়া হলে তাঁরা জাতীয় দলে টিকে যাবেন।

বিশ্বকাপের শুরুটা হয়েছিল তামিম ইকবালকে ঘিরে বিতর্ক দিয়ে। আর শেষে এসে টিম ম্যানেজমেন্টের একাধিক সদস্য বিদায় নিচ্ছেন বিতর্কিতভাবে। সব মিলিয়ে দলের ওপর বিসিবির নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা—সবই কেমন খাপছাড়া মনে হয়েছে। খেলোয়াড়দের মাঠের পারফরম্যান্সের পাশাপাশি এবারের বিশ্বকাপে বিসিবির পারফরম্যান্সও বেশ দুর্বলই বলব।

গাজী আশরাফ হোসেন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক