এজবাস্টনে হেরে সিরিজে পিছিয়ে গেছে বেন স্টোকসের দল
এজবাস্টনে হেরে সিরিজে পিছিয়ে গেছে বেন স্টোকসের দল

বললেন জিওফ বয়কট

জেতার চেয়ে আনন্দ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলে প্রদর্শনী হয়ে পড়বে অ্যাশেজ

বাজবল ০: ১ মৌলিক কাণ্ডজ্ঞান।

মাঠের ক্রিকেটে যেমনই হোক, টুইটার–দুনিয়ায় আইসল্যান্ড ক্রিকেট বেশ আলোচিত নাম। আইসল্যান্ডিক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে নিয়মিতই মজার, বুদ্ধিদীপ্ত আর বিদ্রূপের ভাষায় টুইট করা হয়। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ লড়াই ঘিরেও এমন বেশ কিছু টুইট করা হয়েছে। এজবাস্টন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইংল্যান্ডের ২ উইকেটে হারের পর যে টুইট করা হয়েছে, সেখানেই লেখা ছিল ওপরের স্কোরলাইনটি। বার্তাটা পরিষ্কার, ইংল্যান্ডের বাজবল জেতেনি, জিতেছে অস্ট্রেলিয়ার কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করা ক্রিকেট।

আইসল্যান্ড ক্রিকেটের মজার ছলে বলা কথাটিই এবার কলামে তুলে আনলেন জিওফ বয়কট। ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক টেলিগ্রাফে লেখা কলামে বেন স্টোকসদের হারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ২২ গজের ক্রিকেটে কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করতে হবে ইংল্যান্ডকে। অধিনায়ক স্টোকস আনন্দদায়ক ক্রিকেট উপহার দেওয়ার যে বার্তা দিয়েছেন, সেটিতে ফল পক্ষে আনার চিন্তা না থাকলে অ্যাশেজ আকর্ষণ হারাবে, একপর্যায়ে প্রদর্শনী ম্যাচে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা তাঁর।

‘অ্যাশেজকে প্রদর্শনীতে নামিয়ে আনার শঙ্কায় ইংল্যান্ড’ শিরোনামের কলামে বয়কট লিখেছেন, ‘ইংল্যান্ড নিজেদের বাজবলে সঁপে দিয়েছে। মনে হচ্ছে, জয়ের চেয়ে আনন্দদায়ক খেলাটাকেই ওরা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা একটা জিনিসই সবচেয়ে বেশি চায়—অ্যাশেজে জয়। দ্রুত রান তোলা, প্রচুর পরিমাণে বড় বড় চার-ছয় মারাটা চমৎকার ব্যাপার। আর সেটা তখনই দারুণ ব্যাপার, যখন অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর দিক থেকে ইংল্যান্ড চোখ সরাবে না। সিরিজ শেষে অস্ট্রেলিয়া যদি অ্যাশেজ নিয়ে দেশে ফিরে যায়, তাহলে খেলা থেকে যত আনন্দই পাই না কেন, ওটা আমাদের পীড়াই দেবে।’

টেস্টে নিয়মিত রিভার্স স্কুপ খেলছেন রুট

গত বছর ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের টেস্ট কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলটির খেলার ধরনে বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। ব্যাটিং-ফিল্ডিং ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আক্রমণাত্মক ও অতি ইতিবাচক মানসিকতার এই ক্রিকেটকে বলা হচ্ছে ‘বাজবল’।

অ্যাশেজের আগে এই ধারায় ১৩টি টেস্ট খেলে ১১টিতে জয়ও পায় ইংল্যান্ড। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে শেষ পর্যন্ত ফলটা পক্ষে যায়নি ইংল্যান্ডের। শেষ দিনের শেষ ঘণ্টায় রুদ্ধশ্বাস সমাপ্তির ম্যাচে প্যাট কামিন্সদের কাছে ২ উইকেটে হেরে যান স্টোকসরা।

এ ক্ষেত্রে ক্যাচ মিসের পাশাপাশি সাবেক ক্রিকেটার ও সমর্থকদের অনেকের কাঠগড়ায় ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত। টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নামার পর প্রথম দিন ৭৮ ওভারে ৮ উইকেটে ৩৯৩ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেন স্টোকস, যা আরেকটু দীর্ঘায়িত হলে ইংল্যান্ড ম্যাচটা জিতত বলে ধারণা সমালোচকদের।

হার দিয়ে ঘরের মাঠে অ্যাশেজ শুরু হয়েছে ইংল্যান্ডের

বয়কটের মতে, ম্যাচজুড়েই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট কাজের কথা নয়; বরং পরিস্থিতি বুঝে রক্ষণাত্মকও হতে হয়। এ ক্ষেত্রে দাবার উদাহরণ টেনে ইংল্যান্ডের সাবেক এই ক্রিকেটার লিখেছেন, ‘ক্রিকেট দাবার মতো। এমনও সময় আসে, যখন রক্ষণাত্মক হওয়া দরকার। কখনো কখনো ধৈর্য ধরতে হয়, পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়। শুধু আক্রমণ, আক্রমণ আর আক্রমণ করার দরকার নেই। ইংল্যান্ডের কিছুটা কাণ্ডজ্ঞান আর বাস্তবতাও বোঝা দরকার। এটাই দরকার।’

এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের ইতিবাচক মানসিকতা বদলানোর দরকার নেই, শুধু কাণ্ডজ্ঞান ব্যবহার করলেই চলবে বলে ধারণা বয়কটের।

এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেখছে ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের এই দলের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ আনন্দদায়ক করে তোলার অতিপ্রবণতা অ্যাশেজকেই গুরুত্বহীন করে তুলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন বয়কট, ‘সেদিন স্টুয়ার্ট ব্রড এক সাক্ষাৎকারে বলছিল, হেরে যাওয়া কোনো ব্যাপার নয়, আমরা আনন্দ দিতে চাই। না, না, না। এটা অবশ্যই একটা ব্যাপার। ইংল্যান্ড যদি জেতার জন্য না খেলে তাহলে, এই অ্যাশেজ টেস্টগুলোর গুরুত্ব নেই। এগুলো প্রদর্শনী ম্যাচ।’

ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ২৮ জুন, লর্ডসে।