বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা যেন এখন নিয়মই হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিরিজ কিংবা ম্যাচের আগে প্রশ্নটা উঠবেই—তামিম ইকবাল ফিট তো! খেলতে পারবেন তো তিনি? পারলেও কতটা ফিট অবস্থায়?
চট্টগ্রামে আজ থেকে শুরু আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে সিরিজের আগেও প্রশ্নটা উঠল এবং সেই প্রশ্নের জ্বালামুখ খুলে দেওয়া ব্যক্তিটি ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম নিজেই।
কাল চট্টগ্রামে সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তামিমই বলেছেন, তিনি শতভাগ ফিট নন। সঙ্গে এ–ও পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, ‘আনফিট’ হলেও তিনি খেলবেন। তাঁর বক্তব্যটা হুবহু এ রকম, ‘আমি অবশ্যই আগামীকালের (আজ) ম্যাচের জন্য আছি। শরীর আগের চেয়ে ভালো। তবে এটা বলব না যে শতভাগ (ফিট)। কাল (আজ) খেলার পর আরও ভালো বুঝতে পারব যে কী অবস্থা। তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত, আমি কাল (আজ) খেলছি, ইনশা আল্লাহ।’
কিন্তু তামিমের এ কথা ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। জানা গেছে, সংবাদ সম্মেলনে তামিম ওই কথা বলার পর কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে একরকম রেগেই গেছেন। আগেও যখন বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন, দেখা গেছে, পুরোপুরি ফিট না হলে তিনি কাউকে খেলাতে চান না। কারণ, ছোটখাটো সমস্যাও অনেক সময় মাঠে গিয়ে বড় হয়ে যায়। অথবা সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে শরীর বাঁচিয়ে খেলতে হয়। তাঁর কাছ থেকে তখন আর পুরোটা পাওয়া যায় না। আবার এমনও হয়, সমস্যা বেড়ে গিয়ে খেলোয়াড় খেলাটা শেষই করে আসতে পারেন না। তখন আরেক সমস্যা।
এর আগে পিঠের সমস্যার কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে খেলেননি তামিম। এরপর অনুশীলনে ফিরলেও মাঝেমধ্যেই ভুগেছেন পিঠের চোটে। সর্বশেষ গতকাল মাঠে এলেও করেননি ব্যাটিং বা ফিল্ডিং অনুশীলন।
তামিম অধিনায়ক না হলে হয়তো অমন বক্তব্যের পর আজকের একাদশ থেকে তাঁর নামটাই কেটে দিতেন হাথুরুসিংহে। কিন্তু অধিনায়ক ও দলের একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে এখানে শেষ ‘কল’টা তামিমেরই থাকছে। তিনি যেহেতু বলছেন, ‘আনফিট’ হলেও তিনি খেলবেন, তিনি আজ খেলছেন, এটাই সর্বশেষ খবর। আর হাথুরুসিংহেও এ ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে।
তবে তার আগে কাল বিষয়টা নিয়ে তামিমের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন হাথুরুসিংহে ও চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে থাকা প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। জানা গেছে, সেখানে কোচ তামিমের কাছে পরিষ্কারভাবে জানতে চেয়েছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা আসলে কেমন। তামিম যদি নিজেকে ‘আনফিট’ মনে করেন, তাহলে প্রথম ম্যাচে না খেলে তাঁকে বিশ্রাম নিতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তামিম নাকি সেখানেও বলেছেন, তিনি পুরোপুরি ফিট না হলেও প্রথম ম্যাচটা খেলবেন, কারণ না খেললে বুঝবেন না তাঁর ফিটনেস আসলে কোন পর্যায়ে।
এক অর্থে তামিমের জন্য আজকের প্রথম ওয়ানডেটা তাই হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘ফিটনেস টেস্ট’, একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচে যেটা আসলে কখনোই হতে পারে না। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে ফোনে পরে সেটাই বলেছেন কোচ। এরপর সংবাদমাধ্যমে বিসিবি সভাপতিও দেখিয়েছেন কড়া প্রতিক্রিয়া। একটি বাংলা দৈনিককে তিনি বলেছেন, ‘এটি তো আর পাড়ামহল্লার ম্যাচ নয়। আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে, খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না!’
সভাপতি জানিয়েছেন, তামিমের অমন বক্তব্যে কোচও ক্ষুব্ধ। ‘তামিমকে আসলে পরিষ্কার করে জানাতে হবে সে কী চায়। কোন পর্যায়ে আছে সে’—বলেছেন নাজমুল হাসান।
চোট-আঘাতের ব্যাপারে ফিজিও-চিকিৎসকদের কথাই সাধারণত শেষ কথা হয়ে থাকে। তাঁরা ফিট না বললে টিম ম্যানেজমেন্টও সাধারণত কাউকে দলে নিতে চায় না। কিন্তু তামিমের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রম। বিসিবি সভাপতি ও দলের আরও কিছু সূত্রও নিশ্চিত করেছে, ফিজিও-চিকিৎসকেরা তামিমের কোনো সমস্যা ধরতে পারছেন না। বিসিবি সভাপতির ভাষায়, ‘ডাক্তাররা কিছু পাচ্ছে না তো!’
সব মিলিয়ে নাজমুল হাসানের কথায় তামিমের আচরণে প্রবল বিরক্তিই ফুটে উঠেছে। একই মনোভাব টিম ম্যানেজমেন্টেরও। ছোটখাটো সমস্যাও নিয়েও অনেক সময় ক্রিকেট খেলা যায়। তামিম নিজেও এর আগে বহুবার এভাবে খেলেছেন। কিন্তু আধা ফিটনেস নিয়ে ম্যাচ খেলে নিজের ‘ফিটনেস টেস্ট’ নেওয়াটাকে আর পছন্দ করতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। সে জন্যই তাঁকে বলা হয়েছে, পুরো ফিট না হলে খেলার দরকার নেই। প্রয়োজনে ‘বিশ্রাম’ নাও।
কিন্তু তামিম তবু আজকের ম্যাচটা খেলতেই চান। আর অধিনায়ক খেলতে চাইলে তো তাঁকে না করা যায় না! বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি এখনো অতটা এগোয়নি। বিসিবির এক কর্মকর্তার কথাতেও সেই অসহায়ত্ব, ‘ও তো অধিনায়ক। সে খেলতে চাইলে কে তাকে বাদ দেবে! কিন্তু ম্যাচের আগে ওরকম কথা তার কোনোভাবেই বলা ঠিক হয়নি। কেউ পুরোপুরি ফিট না থাকলে খেলবে না, এটাই তো জানি আমরা।’
খেলা দেখতে বিসিবি সভাপতি চট্টগ্রামে আসছেন। হয়তো ম্যাচের আগে তামিমের বিষয় নিয়ে কথাও বলবেন দলের সঙ্গে। তারপরও অধিনায়ক বলে শেষ ‘কল’টা তামিমেরই থাকবে। আজ তিনি ‘বিশ্রাম’ নেবেন, নাকি খেলে নেবেন নিজের ‘ফিটনেস টেস্ট’?