পারভেজ হোসেন ও রুয়েল মিয়া
পারভেজ হোসেন ও রুয়েল মিয়া

তারকাদের ছাপিয়ে পারভেজ–রুয়েলদের প্রিমিয়ার লিগ

গত পরশু মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে চলছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শাইনপুকুর ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের ম্যাচ। নিজ দলের খেলা না থাকায় মাঠে এসেছিলেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদও। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দলটাকে টানা ৯ ম্যাচ অপরাজিত রাখতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়েছে, সেদিন তিনি সে গল্পই বলছিলেন সাংবাদিকদের। শ্রীলঙ্কা সিরিজের জন্য জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ছাড়তে হয় আবাহনীকে। ২০ জনের আবাহনী একপর্যায়ে পরিণত হয় ১৩ জনের দলে। বাধ্য হয়েই আবাহনী তখন দলে নেয় ইয়ুথ ক্রিকেট লিগে খেলা পেসার আল ফাহাদকে।

জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের চলে যাওয়া ভুগিয়েছে অন্য দলগুলোকেও। শ্রীলঙ্কা সিরিজের ব্যস্ততায় তারকা খেলোয়াড়দের লিগে পুরো সময়ের জন্য পাওয়া যাবে না, এটা মাথায় রেখেই দলগুলো খেলোয়াড় নিয়েছিল। কিছু দল আবার জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আসা-যাওয়ার ঝামেলায় যেতে চায়নি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে সদ্য বেরিয়ে আসা খেলোয়াড়দের নিয়েই দল সাজিয়েছে তারা। এবারের প্রিমিয়ার লিগে তাই গত মৌসুমে প্রথম বিভাগে খেলা খেলোয়াড়ও অনেক।

রান তোলায় শীর্ষ তিনে আছেন তামিম ইকবাল

লিগের সর্বোচ্চ রান ও উইকেটশিকারিদের তালিকাতেও সেটার প্রভাব স্পষ্ট। শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলা ক্রিকেটারদের বাদ দিলেও লিগে আলো ছড়াতে পারেননি অন্য তারকা ক্রিকেটাররা। অন্য নবম রাউন্ডের পর ঢাকা লিগের সর্বোচ্চ রানের তালিকার শীর্ষ তিনে থাকাদের মধ্যে তামিম ইকবাল (৪০৩) ছাড়া সেই অর্থে বড় কোনো নাম নেই। প্রাইম ব্যাংকের পারভেজ হোসেন ৪৯৩ রান করে শীর্ষে আছেন, দুইয়ে মোহামেডানের মাহিদুল ইসলাম (৪৫৩), তামিম আছেন তিনে। সাইফ হাসান, নুরুল হাসান, জাকের আলী, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ছাড়াও শীর্ষ ১০ ব্যাটসম্যানের মধ্যে আছেন আবদুল মজিদ, খালিদ হাসান, তাওফিক খানের মতো ক্রিকেটাররা।

বোলারদের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ভালো করছেন বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়া। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের হয়ে ৯ ম্যাচে ২১ উইকেট নিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী পেসার। আরেক বাঁহাতি আবু হায়দার ২০ উইকেট নিয়ে আছেন দুইয়ে। কদিন আগেই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা মারুফ মৃধার উইকেট ১৯টি। সেরা বোলারদের মধ্যে নাজমুল ইসলাম, রিশাদ হোসেন, আবু জায়েদ, রিপন মণ্ডলদের সঙ্গে আছেন সিটি ক্লাবের দুই পেসার ইরফান হোসেন ও মেহেদী হাসান।

উইকেট শিকারে শীর্ষ দুইয়ে আছেন আবু হায়দার

আবাহনীর কোচ মাহমুদ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। যে ঢাকা লিগকে ধরা হয় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ টুর্নামেন্ট, সেখানেই এখন বড় দল ও ছোট দলের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দৃশ্যমান। এবারের লিগের অভিজ্ঞতা থেকে মাহমুদ বলেছেন, ‘এবার পার্থক্যটা বেশি হয়ে গেছে। আমরা ও প্রাইম ব্যাংক জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় নিয়েছি। আমরা খরচটা বহন করতে পেরেছি, তাই নিয়েছি। অবশ্যই আমি চাই ছোট ছেলেরা ওপরে উঠে আসুক। কিন্তু তাই বলে একঝাঁক ক্রিকেটার নয়। প্রিমিয়ার লিগে খেলাটাকে যদি আমি সহজ ভাবি, তাহলে সমস্যা। অনেক দল দেখেছি প্রথম বিভাগের পাঁচ-ছয়জন করে খেলোয়াড় খেলিয়েছে। ওদের জন্য তো এটা সহজ হওয়ার কথা নয়।’

ভিন্নমতও আছে। প্রিমিয়ার লিগে নতুনদের জায়গা করে নেওয়াকে ইতবাচকভাবে দেখছেন শেখ জামালের কোচ সোহেল ইসলাম, ‘এবার অনেক নতুন ছেলে এসেছে। সংখ্যাটা অন্যবার এত বেশি থাকে না। এটা অবশ্যই সম্ভাবনাময়।’ তবে একঝাঁক নতুনের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিশেল থাকলে খেলার মান আরও ভালো হতো বলে মনে করেন তিনি, ‘সব দলেই কিছু তরুণ ছেলে খেলবে, সঙ্গে থাকবে অভিজ্ঞরা—এটাই হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কিছু দলে নতুনদের সংখ্যা বেশি। আর উইকেটও কঠিন। যেটা সামলে নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাদের নেই। খেলায়ও সেটার প্রভাব পড়েছে।’