মিরপুর টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
মিরপুর টেস্টে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন

মিরপুরের স্পিন-স্বর্গের পক্ষে ভোট নাজমুলের

কী দারুণ সুযোগ হাতছাড়া হলো বাংলাদেশ দলের! নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে প্রথমবারের মতো টেস্টে সিরিজে হারানোর সুবর্ণ সুযোগ। সিলেটে প্রথম টেস্ট জয়ের পর মিরপুরেও কিউইদের হারানোর সম্ভাবনা জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ইতিহাস গড়া হলো না নাজমুলদের। এমন একটি হারের পর সিরিজ জিততে না পারার আক্ষেপ নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ মিরপুরে যে উইকেটে খেলে হেরেছে, দিন শেষে সেই উইকেটের আলোচনাটাই বড় হয়ে দাঁড়াল।

আজ মিরপুর টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেনকে প্রথম প্রশ্নটাই করা হয় উইকেট নিয়ে। ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়ার স্লোগানে মিরপুরে স্পিন-স্বর্গ বানিয়ে খেলেও হারের পর নাজমুলের কী উপলব্ধি, এই কৌশলটা কি ভুল ছিল? নাজমুলের সোজাসাপটা উত্তর, ‘না, আমার কাছে মনে হয় না।’ এরপর নাজমুল তাঁর মতো করে ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘আমরা যখন আন্তর্জাতিক ফরম্যাট খেলি, বিশেষত টেস্ট, এখানে তো আমরা উন্নতি করতে আসিনি। জিততে এসেছি। এখানে জেতার জন্য কেমন প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, এটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে এ ধরনের সুবিধা অবশ্যই নেওয়া উচিত।’

তাহলে ক্রিকেটারদের ভালো উইকেটে খেলার পাঠটা কোথায় পাবেন? নাজমুলের কথার পরের অংশে আছে এর উত্তর, ‘প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ভালো উইকেটে বা এ রকম কন্ডিশন বানিয়ে অনুশীলন করতে পারি। এনসিএলে এ ধরনের উইকেটে ২-৩টা ম্যাচ খেললাম। আবার দেশের বাইরে খেলার জন্য (ফাস্ট ও বাউন্সি) ২-৩টা উইকেট বানালাম। আমার মনে হয় এটা (টেস্ট) প্র্যাকটিসের জায়গা না বা উন্নতির কিছু নেই। এনসিএল, বিসিএলে আমরা এ ধরনের ভালো উইকেট বা স্পিনিং উইকেটে প্র্যাকটিস করে টেস্টে আসব। এখানে জেতার জন্যই আসি।’

কিন্তু আধুনিক ক্রিকেটের বাস্তবতায় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের পক্ষে নিয়মিত বিসিএল বা জাতীয় লিগ খেলা সম্ভব? নাজমুলের উত্তর, ‘যারা তিন ফরম্যাট খেলে তাদের জন্য কঠিন। কিন্তু কিছু করার নেই। যারা শুধু টেস্ট খেলছে, তাদের হাতে তো ওই সময় থাকে। এমন না ১০-১৫ খেলোয়াড়ই আছে। আরও অনেক খেলোয়াড় আছে, যাদের ভবিষ্যতে টেস্টে সুযোগ আসবে। তাদের জন্য এটা একটা সুযোগ। প্রস্তুতি নিয়ে যেন এ রকম জায়গায় আসতে পারে।’

বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ডকে সিলেটের মোটামুটি স্পোর্টিং উইকেটেও হারিয়েছে। সেখানে খেলা গড়িয়েছে পাঁচ দিনে। বাংলাদেশের দুই ইনিংসেই তিন শ’র বেশি রান হয়েছে। আবার ৪০ উইকেটও পড়েছে। সিলেটের উইকেট নিয়ে নাজমুলের বক্তব্য, ‘সিলেটের উইকেটে বোলারদের জন্য খুব সহায়তা ছিল, এমন বলব না। বোলাররা কষ্ট করে উইকেট পেয়েছে। ব্যাটাররাও কষ্ট করে রান করেছে। দুই দিকেই ছিল।’

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন ছিল

মিরপুরের উইকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থ হওয়ার কারণটাও আছে নাজমুলের পরের কথায়, ‘এই উইকেটে ব্যাটসম্যানরা ভালো করিনি। প্রথম ইনিংসে ২৩০-২৪০ রানের উইকেট ছিল। ওই জায়গায় রান কম করায় মনে হয়েছে উইকেট অনেক খারাপ। হ্যাঁ, নতুন বল চ্যালেঞ্জ ছিল অবশ্যই। এটা প্রত্যেক জায়গায় থাকে। দেশের বাইরেও নতুন বলের চ্যালেঞ্জ থাকে। এখানেও ভিন্ন কিছু ছিল না। আমরা আরও ব্যাটিং করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না।’ ভবিষ্যতে মিরপুরের মাঠে বাংলাদেশ দল কী ধরনের উইকেটে খেলতে চাইবে, সে আভাসও আছে নাজমুলের অন্য এক কথায়, ‘ব্যাটারদের এই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করা উচিত। আমরা এমন উইকেটই চেয়েছিলাম।’

বাংলাদেশের আঙিনায় নাজমুলদের হারানোর কৃতিত্বটা প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকেও দিতে হয়। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে গ্লেন ফিলিপসের নামটা আসবে। দুই ইনিংসের দুটি প্রভাববিস্তারী ইনিংস খেলে ম্যাচটা জিতিয়ে দিয়েছেন এই কিউই তরুণ। নাজমুলও মানছেন, মিরপুর টেস্টে পার্থক্যটা গড়ে দিয়েছেন ফিলিপসই, ‘উইকেট যে রকম ছিল, আমাদের স্পিনাররা ভালো করছিল। ফিলিপস খুবই ভালো ব্যাট করেছে। এটা মানতেই হবে। হতাশা না। সুযোগ ছিল ভালো কিছু করার। আমাদের বোলাররা খুব খারাপ করেছে, এমনও না।’

ম্যাচে কিউই ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ

এই সিরিজ দিয়েই টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়কত্বে অভিষেক নাজমুলের। নিজের প্রথম টেস্ট সিরিজেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করতে পারার অর্জনটাকে খারাপ বলা যাবে না। আজ তাঁর কাছে অধিনায়কত্বের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে অভিজ্ঞতা হচ্ছে। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। সামনে যদি সুযোগ আসে, তাহলে এ অভিজ্ঞতাগুলো আরও হবে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা করা যাবে।’

পুরস্কার বিতরণীর সময় মিচেল স্যান্টনারের সঙ্গে কথা বলেন নাঈম হাসান। দুজনই স্পিনার

অধিনায়কত্বের সঙ্গে ব্যাটিংটাকে আলাদা রাখতেও শিখছেন নাজমুল, ‘আমি যখন ব্যাটিং করি, তখন আমার মনে হয় না আমি ক্যাপ্টেন। সত্যি কথা, আমার একবারের জন্যও মনে হয় না যে কয়টা ম্যাচ অধিনায়কত্ব করেছি এখন পর্যন্ত। এভাবে করে যেতে পারলে খুবই ভালো। আমার কাজ ব্যাটিংয়ের পরে যখন মাঠে ঢুকি, তখন মাঠের বাইরে আমার কী প্ল্যান, তখন সেগুলো করার চেষ্টা করি। কিন্তু ব্যাটিংয়ে আমার এখন পর্যন্ত মনে হয় না যে আমি অধিনায়ক, আমাকে আলাদা কোনো কিছু করতে হবে।’

নাজমুলকে অধিনায়কত্বের দায়িত্বটা পালন করতে হবে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। আজ রাতেই এক দল ক্রিকেটারের নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার কথা। বাকিরা যাবেন ১১ ডিসেম্বর রাতে। আজ সংবাদ সম্মেলনে ঢুকেই নাজমুলের দেখা হয় প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক টিম সাউদির সঙ্গে। যেতে যেতে সেখানে নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে দুজন মিলে কিছুক্ষণ কথা বলে নিলেন। নাজমুল এর মধ্যে কৌশলে জেনে নিলেন, ১৭ ডিসেম্বর শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজে না থাকলেও সাউদি ফিরবেন টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। মাঠে তো আছেই, বাইরের অধিনায়কত্বেও যে নাজমুল শাণিত হচ্ছেন, সাউদির সঙ্গে ক্ষণিকের কুশল বিনিময়েও তা বোঝা গেল।