বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ফিল সিমন্সের সম্পর্কটা অন্য রকম। গত এক সপ্তাহের নাটকীয় পালাবদলের মধ্যে পাঁচ মাসের জন্য বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাওয়া এই সাবেক ক্যারিবীয় ক্রিকেটার এর আগে আরও দুইবার একই পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। ২০১৭ সালে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পদত্যাগের পর রিচার্ড পাইবাস ও সিমন্স বিসিবিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। কিন্তু বিসিবি সেবার বেছে নেয় স্টিভ রোডসকে।
২০১৯ সালে রোডসের বিদায়ের পরও কোচ হতে আবেদন করেছিলেন তিনি। কিন্তু তখন দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। এবার হাথুরুসিংহের চাকরি যাওয়ার পর সেই সিমন্সকেই বেছে নিয়েছে বিসিবি। একই সময় সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার ঝড় বইছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এর মধ্যেই মাত্র দেড় সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলেন সিমন্স। এখন তাঁর অধীনে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। এই সিরিজে কোচিং প্যানেলে ফিরেছেন স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদও।
কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর আজ প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে এলেন সিমন্স। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অস্থির সময়টাকে তিনি পেছনে ফেলতে চান মাঠের ক্রিকেটে মনোযোগ দিয়ে, ‘ভালো দিক হচ্ছে, আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেস্ট ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে।’ মাঠের বাইরের বিতর্ক সরিয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের স্বপ্নও দেখালেন তিনি, ‘আমরা সামনের কয়েকটা টেস্ট জিততে পারলে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার সম্ভাবনা জাগবে।’
সে জন্য সব মনোযোগটা ক্রিকেটেই রাখতে চান সিমন্স, ‘আমি ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে চাই। সোমবারের জন্য দলটাকে তৈরি করতে চাই। আমার গত দুই দিনের অভিজ্ঞতা দারুণ। আমরা ক্রিকেটের আশপাশে যে সব দোটানা আছে, তা সরিয়ে সোমবারে মনোযোগ দিতে চাই।’
নিজের দীর্ঘ কোচিং ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা এই অস্থির সময়ে কাজে লাগাতে চান তিনি, ‘সব অভিজ্ঞতাই আমাকে ছেলেদের সোমবারের জন্য তৈরি করতে সাহায্য করবে। আফগানিস্তান আমাকে ভাষা জটিলতার চ্যালেঞ্জ সামলে কাজ করা শিখিয়েছে। আয়ারল্যান্ডে কাজ করে বুঝেছি কীভাবে তরুণদের গড়ে তুলতে হয়। সব কিছুই এখানে কাজে দেবে।’
বাংলাদেশের তারুণ্যনির্ভর টেস্ট দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সিমন্সের নজর কেড়েছে, ‘আমি আগ্রহী হয়েছি তরুণ খেলোয়াড়ের সামর্থ্য দেখে। ওরা পাকিস্তানে নিজেদের দারুণভাবে প্রমাণ করেছে। ভারতে টি-টোয়েন্টিতে ওরা ভালো খেলেনি। কিন্তু ভারত ওই সংস্করণে সেরা দল। আপনার সেখান থেকে শেখার ছিল অনেক কিছু। প্রথমত, আমি তরুণদের গড়ে তুলতে চাই। পাশাপাশি এখানে টেস্ট ও ওয়ানডে সংস্করণে কাজ করার সুযোগও আছে। সব মিলিয়ে আমার এখানে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল না।’
তবে বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পালন করা যে সহজ নয়, সেটা তো বাংলাদেশ দলের কোচদের আসা-যাওয়ার রেকর্ড ঘাঁটলেই টের পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে হাথুরুসিংহের চলে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত পাঁচবার প্রধান কোচের পদে বদল এসেছে। অনিশ্চিতায় ঠাসা এ দায়িত্বকে সিমন্স কীভাবে দেখেন? তাঁর উত্তর, ‘সব আন্তর্জাতিক কোচের চাকরিই চাপের। বাংলাদেশে এক রকম, পাকিস্তানে অন্য রকম। আমার জন্য ক্রিকেটারদের উপভোগের মঞ্চ গড়ে দেওয়া, ম্যাচ জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ। আসনটা চাপের নয়। গত দুই দিন বেশ উপভোগ্যই ছিল।’
নিজের কোচিং দর্শনটাও জানালেন সিমন্স, ‘কঠোর পরিশ্রম করলে ফল আসবে। গত দুই দিনে ছেলেদের মধ্যে সেটা দেখেছি। এই ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে, দক্ষতা ও ফিটনেস নিয়ে।’