প্রচণ্ড গরমের মধ্যে চলছে অনুশীলন, টেস্টের সময়ও এ রকম গরম থাকবে বলেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে।
‘ওজন মনে হয় দুই কেজি কমে গেছে’—ঘাম মুছতে মুছতে কথাটা বললেন জাতীয় দলের এক পেসার। সকালে বোলিং ও রানিং করেছেন। দুপুরে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে পর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জিমে আসা ওই পেসারের প্রশ্ন, ‘বছরের এই সময় ঘরের মাঠে কখনো টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ?’
প্রশ্নটা এ বছর এই সময়ে মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়ছে বলেই। নইলে বছরের এই সময়ে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ আগেও টেস্ট খেলেছে। অবশ্য এ রকম তাপপ্রবাহের মধ্যে খেলেছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ১৪ জুন শুরু টেস্টের প্রথম তিন দিন ঢাকার তাপমাত্রা থাকতে পারে ৩৭ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপপ্রবাহ এরই মধ্যে এই টেস্টে প্রভাবক হতে শুরু করেছে। নির্বাচকেরা গরমের তীব্রতার কথা মাথায় রেখেই ১৫ সদস্যের বাংলাদেশ দলে পেসার রেখেছেন ৫ জন। টেস্টের অনুশীলন এবং ম্যাচেও কীভাবে ক্রিকেটারদের গরমের কষ্টটা কমে, দলের মধ্যে আলোচনা এখন সেসব নিয়েই।
প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান বলে বাংলাদেশ দলের একাদশে তিন পেসার থাকার সম্ভাবনাই বেশি। গরমে কষ্টটা বেশি পেসারদেরই। বিসিবির হাই পারফরম্যান্স বিভাগের বোলিং কোচ চম্পকা রমানায়েকের পরামর্শ, পেসারদের বোলিং করানো হোক ছোট ছোট স্পেলে। হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় এই প্রতিবেদককে তিনি জানালেন, ‘হয়তো তিনজন পেসারই খেলবে। অধিনায়ক নিশ্চয়ই ওদের ছোট ছোট স্পেলে ব্যবহার করতে চাইবে। এই গরমে পেসারদের ঠিক রাখতে হলে এটা করতেই হবে।’
গতকালের অনুশীলনে এই শ্রীলঙ্কান কোচও পরামর্শ দিয়েছেন পেসারদের। পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ডও তো ছিলেনই। তীব্র গরমে সবাই যেন পর্যাপ্ত বিশ্রাম পান, সে জন্য পেসারদের এক টানা নেট বল করতে দিচ্ছিলেন না তিনি। প্রতি ওভার পর বিশ্রাম নেওয়ার সময় পেয়েছেন সবাই। ৩৬–৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াম তাপমাত্রায় বোলিং করা কতটা কষ্টকর, বাংলাদেশ দলের এক পেসার মুঠোফোনে জানালেন সেটা, ‘সেদিন আমরা ১০ ওভার বল করেছি। ম্যাচে যেভাবে এক ওভার পর একটা বিরতি আসে, সেভাবে। তা–ও টানা ৫ ওভার বল করার পর আপনাকে টি-শার্ট বদলাতেই হবে।’
পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পানি পান করছেন পেসাররা। পেস বোলাররা সাধারণত দিনে ৪ লিটার পানি পান করেন। গত কয়েক দিন সেটি ৬-৭ লিটারও হচ্ছে। মাংসপেশি ঠিক রাখতে থাকছে বিসিএএ নামে বিশেষ একধরনের পানীয়ও। সঙ্গে ফলমূল তো আছেই।
ফিজিও মুজাদ্দেদ আলফা সানি মুঠোফোনে জানালেন, ‘গরমে শরীরে যেন তরল পদার্থের ঘাটতি না হয়, সে ব্যবস্থা নিচ্ছি। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সবাই যেন ভালোভাবে বিশ্রাম নেয়, সেটাও বারবার বলা হচ্ছে।’
ক্রিকেটারদের চাপ কমাতে অনুশীলনে আসা নিয়েও কোনো বাধ্যবাধকতা রাখেননি প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কারও ওপর চাপ বেশি পড়ছে মনে হলে তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরুর প্রথম দিন যেমন লিটন দাস উইকেটকিপিং ও ব্যাটিং করে ক্লান্ত হয়ে পড়ায় গতকাল তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে।
অনুশীলনে আসেননি তামিম ইকবাল এবং মাহমুদুল হাসানও। যাঁরা আসছেন, তাঁরাও অনুশীলন করছেন হিসাব করে। গতকাল মাঠে আসা পেসারদের মধ্যে পুরোদমে বোলিং করেছেন শুধু শরীফুল। তাসকিন, খালেদ, ইবাদতরা ফিল্ডিং অনুশীলন করেছেন। জাতীয় দলের পেসারদের এমন বিশ্রাম নিয়ে করা অনুশীলনেও অবশ্য ব্যাটসম্যানদের সমস্যা হচ্ছে না। নেটে তাঁদের বোলিং করার জন্য ডাকা হচ্ছে বাড়তি নেট বোলার।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট শুরু হবে ১৪ জুন। তবে গরমের সঙ্গে লড়াইটা শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে।