পরিবর্তনের আভাসটা দ্বিতীয় ম্যাচের পরই দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছে। এবার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা। সেটি দেখা গেল আজ সিরিজের শেষ ম্যাচের একাদশেও। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেনের আন্তর্জাতিক অভিষেক হলো আজ। তাঁকে জায়গা করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দলে ফিরেছেন বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামও, মোস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় খেলছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশ দলের সমন্বয়টা হলো ছয় ব্যাটসম্যান ও ৫ বোলারের।
একাদশ ও সমন্বয়ে পরিবর্তন এলেও বদলায়নি বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের ব্যাটিং-দর্শন। ২০ ওভারের খেলাটা যেভাবে খেলা উচিত, সেভাবেই খেলার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচের মতো আজও প্রথম বল থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের।
কিন্তু প্রথম দুই ম্যাচে সেটি কাজে দিয়েছে, আজ সেটি কাজে দেয়নি। টসে জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৬১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। সেখান থেকে বাংলাদেশের রানটাকে ১২৪-এ নিয়ে যান শামীম হোসেন। তাঁর ৪২ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে এনে দেয় প্রতিযোগিতা করার মতো স্কোর।
‘হাই রিস্ক, হাই রিওয়ার্ড’ বলে একটা কথা আছে। বাংলাদেশ দল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা এখন এভাবেই খেলতে চায়। লিটন দাস যেমন আজ সাফল করে স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে চার মারার জন্য ফিওন হ্যান্ডের ইনিংসের প্রথম বলটাই বেছে নিয়েছিলেন। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশের ভাবনাটা ওই প্রথম বলেই স্পষ্ট। তবে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের মুদ্রার উল্টো পিঠটাও আজ দেখা হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মার্ক এডেয়ারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে ক্যাচ আউট হন লিটন। পরের ওভারে হ্যারি টেক্টরকে ছক্কা মারার চেষ্টা করেন নাজমুল হোসেন। টাইমিংয়ে গড়বড় হওয়ায় ডিপ মিড উইকেটে কার্টিস ক্যাম্ফারের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
দুই উইকেট হারানোর পরও মেরে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন আরেক ওপেনার রনি তালুকদার। চতুর্থ ওভারে ১০ বলে ১৪ রানে থাকার সময় তিনিও খুঁজে নেন মিড উইকেট ফিল্ডার মার্ক এডেয়ারকে। ক্যাম্ফারকে পুল শটে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন তিনি।
২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ দল এখন কেমন খেলে, সেদিকে ছিল সবার চোখ। সদ্য ক্রিজে আসা তাওহিদ হৃদয় ও অধিনায়ক সাকিব নিরাপদ ব্যাটিং করবেন নাকি আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলবেন? এই প্রশ্নের উত্তরটা পাওয়া গেল ইনিংসের পঞ্চম ওভারে হৃদয়ের একটি চার ও একটি ছক্কায়। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে সাকিবও বাউন্ডারি খুঁজে নেন।
কিন্তু এডেয়ারের পরের বলেই উড়িয়ে মারা পুল শটে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ আউট হন সাকিব। পরের ওভারে হৃদয়ও ছক্কা মারার চেষ্টায় আউট হন। বেন হোয়াইটের লেগ স্পিনে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ তোলেন এই তরুণ। বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ৪১ রান। এমন অবস্থায় ক্রিজে আসা অভিষিক্ত রিশাদ প্রথম বলটাই ছক্কায় ওড়ান। ক্রিজে থাকা সর্বশেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান শামীম হয়তো তাতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন।
ইনিংসের শেষার্ধে লেজের সারির ব্যাটসম্যানের সঙ্গে শামীমের ছোট ছোট জুটি গড়ার শুরু তখন থেকেই। প্রথমে রিশাদ, নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদের সঙ্গে শামীমের যুগলবন্দী বাংলাদেশের রানটাকে নিয়ে যান এক শ’র ওপারে। বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে পেয়ে যান নিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটিও।
তবে ইনিংসের ৫ বল বাকি থাকতে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। হ্যান্ডের বলে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারতে গিয়ে জর্জ ডকরেলের তালুবন্দি হন তিনি। তবে আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪২ বলে ৫১ রানের ঝলমলে ইনিংস। ১২১ স্ট্রাইক রেটের কার্যকরী ইনিংসে ছিল ৫টি চার ও ২টি ছক্কা।