এমন কিছু মেনে নেওয়া সত্যিই খুব কষ্টের।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের আজ ভীষণ কষ্টের এক রাত। এত কাছে, তবু কত দূরে। এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ধারাবাহিক বললেও কম বলা হবে, সবচেয়ে ভয়ংকর দলই ছিল ভারত। কোনো প্রতিপক্ষকেই পাত্তা দেয়নি তারা। রাউন্ড রবিন লিগে জিতেছে সব ম্যাচ। বেশির ভাগ ম্যাচই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকেও সেভাবেই হারাল তারা। ফাইনালের আগে মনে হচ্ছিল রোহিত শর্মার এই দলকে হারানোর মতো কোনো প্রতিপক্ষই নেই। সেই ভারতই কিনা ফাইনালে হারল যাচ্ছেতাইভাবে! অস্ট্রেলিয়ার কাছে একেবারে দুরমুশ হয়ে।
ম্যাচের পর রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, রবীন্দ্র জাদেজা, যশপ্রীত বুমরা, মোহাম্মদ শামিদের অন্ধকার চেহারাই বলে দিচ্ছিল সবকিছু। মোহাম্মদ সিরাজ তো কেঁদেই দিলেন। চোখ ছলছল সব ভারতীয় ক্রিকেটারদেরই। কোহলির মুখ অন্ধকার। সবচেয়ে করুণ মুখটা বোধ হয় রোহিত শর্মারই। ২০১১ সালে ভারত শেষবার যে বিশ্বকাপ জিতল, তাতে তিনি দলে ছিলেন না। কোহলির তা-ও একটা বিশ্বকাপ মেডেল আছে বাড়িতে। রোহিতের? কিছুই পেলেন না তিনি। আরেকটা বিশ্বকাপ কি রোহিত খেলবেন? মনে তো হয় না! ভারতের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার শেষ হতে যাচ্ছে বৈশ্বিক কোনো ট্রফি না জিতেই।
ম্যাচ শেষে রীতিমতো বুকে পাথর বেঁধেই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সঞ্চালক রবি শাস্ত্রীর মুখোমুখি হলেন তিনি। মঞ্চে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি রজার বিনি (তিনি নিজে অবশ্য ১৯৮৩ বিশ্বকাপটা জিতেছিলেন), সচিব জয় শাহ আর কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের মুখগুলোও প্রায় অন্ধকার। আনুষ্ঠানিকতার কারণে তাঁদের হাসতে হচ্ছিল, কিন্তু সে হাসিটা যে তাঁরা বড্ড কষ্ট করে হাসছেন, সেটি বোঝাই যাচ্ছিল। রোহিত কী বললেন বিশ্বকাপ ফাইনালে উড়ে গিয়ে। তাঁর কথা, ‘আজ আমরা মোটেও ভালো খেলতে পারিনি। আমাদের ভাগ্যে ছিল না জয়টা।’
কোন জায়গায় স্খলনটা হয়েছে এবারের বিশ্বকাপে রাউন্ড রবিন লিগ ও সেমিফাইনালে ‘অদম্য’ ভারতীয় দলের। রোহিত কোনো অজুহাতে যাননি, ‘আমরা আজ জেতার জন্য সব চেষ্টাই করেছি, কিন্তু হয়নি। আরও ২০-৩০ রান বেশি হলে হয়তো হতো। কোহলি আর রাহুল একটা ভালো জুটি গড়ার চেষ্টা করছিল। আমরা তখন ২৭০-২৮০ রানের সংগ্রহ আশা করছিলাম। কিন্তু আমরা উইকেট হারিয়েছে অসময়ে।’
২৪০ রান স্কোরবোর্ডে নিয়েও শুরুতে জয়ের আশাই জাগিয়েছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট ফেলে দেওয়া গিয়েছিল খুব দ্রুতই। কিন্তু ভারতের সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন ট্রাভিস হেড আর মারনাস লাবুশেন। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুজন ২১৫ বলে গড়লেন ১৯২ রানের জুটি। ট্রাভিস হেড অসাধারণ। খেলেছেন ১২০ বলে ১৩৭ রানের এক ম্যাচজয়ী ইনিংস। লাবুশেন ১১০ বলে ৫৮। ম্যাচ থেকে অনেক আগেই ছিটকে পড়ল ভারত। রোহিত অবশ্য মনে করেন ফ্লাড লাইটের আলোতে ব্যাটিংটা অনেক বেশি সহজ ছিল, ‘২৪০ রান স্কোরবোর্ডে নিয়ে যা করা দরকার, সেটিই করেছিলাম। দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নেওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ট্রাভিস হেড আর লাবুশেন দাঁড়িয়ে গেল। আমার মনে হচ্ছিল রাতে উইকেটটা ব্যাটিংয়ের জন্য কিছুটা বেশি সহায়ক ছিল। তবে আমি কোনো অজুহাত দিতে চাই না। আমরা আগে ব্যাটিং করে যথেষ্ট রান করে অস্ট্রেলিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারিনি। হেড আর লাবুশেনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। দারুণ জুটিটির জন্য।’