আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যান ডেভিড ম্যালান। সামনের মাসে ৩৭ পূর্ণ করতে চলা এই বাঁহাতি ইংল্যান্ডের হয়ে ২২টি টেস্ট, ৩০টি ওয়ানডে ও ৬০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন।
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি ম্যালানকে। বিশ্বকাপের পরপরই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নতুন চেহারার ইংল্যান্ড দলে সুযোগ হয়নি তাঁর। তখন থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, হয়তো আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেখানেই শেষ ম্যালানের।
আজ দ্য টাইমসে মাইকেল আথারটনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ম্যালান নিশ্চিত করেন, অবসরের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন তিনি। পরে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেটে বোর্ডের (ইসিবি) মাধ্যমে দেওয়া আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ম্যালান বলেছেন, ‘২০১৭ সালের জুলাই থেকে দুর্দান্ত এক যাত্রা ছিল এটি। তিন সংস্করণেই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে আমি যারপরনাই কৃতজ্ঞ।’
ম্যালান বলেন, ‘বেশির ভাগ খেলার মতোই ক্রিকেটেও সবাই অবসর নেয় এটা ভেবে যে হয়তো আরও কিছু করা যেত। ১০টি টেস্ট খেলেন বা ১০০টি, অনেকেরই সরে যাওয়ার সময় আরেকটি টেস্ট না খেলার, আর কয়েকটি রান না করার বা আরও বেশি শিরোপা না জেতার আক্ষেপ হয়তো থাকে।’
তবে তাঁর ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে না বলে মনে করেন ম্যালান। তিনি বলেছেন, ‘এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সময় আমি বলতে পারি, আমি সত্যিই তৃপ্ত। ব্যাপারটি অবশ্য সহজ ছিল না। হয়তো আমার প্রকৃতিই এমন বা যে কারণেই হোক, সব সময়ই মনে হয়েছিল, আমার কিছু প্রমাণ করতে হবে। প্রায়ই মনে হতো, আমি হয়তো জায়গা ধরে রাখতেই খেলছি। চাপ হয়তো চলে যায়, তবে মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে প্রভাব ফেলে। এরপরও আমার যা অর্জন, সেসবের দিকে ফিরে তাকিয়ে গর্ব হয়।’
তিন সংস্করণে খেললেও টেস্ট ক্যারিয়ারটা সেভাবে বড় হয়নি ম্যালানের। ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডই হয়তো তাঁকে সেভাবে কাজে লাগায়নি, সে সময় তাদের হয়ে খেলছিল মরগান-রুটদের ‘সোনালি প্রজন্ম’। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারটা দীর্ঘই, সবচেয়ে সফল হয়েছেন সে সংস্করণেই।
ম্যালান অবশ্য বলছেন, আরও অনেকের মতো টেস্টকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখবেন তিনি। আক্ষেপটাও হয়তো এখানেই বেশি তাঁর। আথারটনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘তিন সংস্করণই আমি অনেক গুরুত্বসহকারে নিয়েছি, তবে টেস্ট ক্রিকেটের তীব্রটার ধরনটাই আলাদা। শুধু পাঁচ দিন নয়, তার আগে প্রস্তুতিও আছে। আমি অনেক অনুশীলন করি, নেটে অনেক বল খেলতে ভালোবাসি, প্রস্তুতিটা কঠোরভাবে নিই। আর তারপর আসে লম্বা সব দিন। মন সরানোই কঠিন হয়ে পড়ে। মানসিক দিক দিয়ে বেশ ধকল যেত আমার, বিশেষ করে যে লম্বা টেস্ট সিরিজে আমি খেলেছি। তৃতীয় বা চতুর্থ টেস্টের পর পারফরম্যান্সও পড়ে যেত।’
সব সংস্করণ মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৪৪১৬ রান; ৮টি শতক ও ৩২টি ফিফটি আছে তরুণ বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মিডলসেক্সের হয়ে খেলতে আসা ম্যালানের। জস বাটলার ছাড়া একমাত্র ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন সংস্করণেই সেঞ্চুরির কীর্তিও ম্যালানের। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের নভেম্বরের বেশির ভাগ সময় আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। এ ছাড়া ইংল্যান্ডের হয়ে দুটি অ্যাশেজে খেলেছেন, দুটিই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। খেলেছেন ২০২১ ও ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। পরেরটিতে ইংল্যান্ডের হয়ে শিরোপা জেতেন, যদিও চোটের কারণে টুর্নামেন্টের শেষ ভাগে খেলা হয়নি।
ইংল্যান্ড পুরুষ দলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রব কি ম্যালানকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছেন, ‘শুরুর দিকে তাকে সব রকম সুযোগের জন্যই লড়াই করতে হয়েছে। প্রায়ই বিশ্বের সেরা দলের মুখোমুখি হয়েছে। তার অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ায় স্মরণীয় বিশ্বকাপ জয়ে। দলের ওই সাফল্যে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগগুলোতে ম্যালানের চাহিদা স্বাভাবিকভাবে আরও বাড়বে। এরই মধ্যে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতাও হয়েছে তাঁর। ইয়র্কশায়ারের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর এ মৌসুমের শুরুতে দুই মাস কোচিং করিয়েছেন তাঁদের, সেখানে তাঁর অধীনে ছিলেন জো রুট ও হ্যারি ব্রুকও।