ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলা হচ্ছে না হাঁটুর চোটে পড়া ইবাদত হোসেনের, তাঁর লক্ষ্য এখন ভারত সফর দিয়ে মাঠে ফেরা।
এপ্রিলের বিকেল হুট করেই ফুরিয়ে যায় না। রোদের উত্তাপ কমে আসার পরও দিনের আলো থেকে যায় অনেকটা সময়। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম ততক্ষণে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। কাল যখন সেখানে এ রকমই এক আবহ, ইবাদত হোসেন একাডেমি ভবন থেকে বেরিয়ে এলেন মূল মাঠে। গত বছর জুলাই মাসে ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে থাকা অবস্থায় বাঁ হাঁটুতে চোট পাওয়ার পর কাল তৃতীয়বারের মতো দৌড়ালেন ইবাদত। রোজার মাসে প্রথমবার দৌড়ে এক কিলোমিটার পার করতে লেগেছিল ৮ মিনিট ১ সেকেন্ড। কাল সেটা ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডে কমিয়ে আনায় ইবাদতের মুখে তৃপ্তির হাসি।
ইবাদতকে এখন ছোট ছোট লক্ষ্য পার করাই বিশ্বজয়ের আনন্দ দেয়। একটা লক্ষ্য পার করে হাতের স্মার্ট ওয়াচে আরও একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে রাখছেন ইবাদত। গুটি গুটি পায়ে সেটাও টপকে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই ছোট ছোট লড়াই জেতা ইবাদতের শুধু শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, মানসিকভাবে সুস্থ থাকারও টনিক, ‘এটা আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। একটু একটু করে উন্নতি করতে পারছি...খুব ভালো লাগে। এতে মানসিকভাবেও ভালো থাকি।’
দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকার মানসিক যন্ত্রণা তো আছেই। নতুন যোগ হয়েছে বাবার অসুস্থতা। গলায় ক্যানসার ধরা পড়ায় বাবাকে নিয়েও ইবাদত আছেন দুশ্চিন্তায়, ‘আমি নিজেই একটা ট্রমার মধ্যে আছি। এত বড় একটা সার্জারি, সাত-আট মাস ধরে খেলতে পারছি না। এর মধ্যে বাবা অসুস্থ। খারাপ সময় যাচ্ছে। তবে চেষ্টা করছি মানসিকভাবে নিজেকে চাঙা রাখতে।’
ইবাদতের অসুস্থ বাবার চিকিৎসা হচ্ছে সুনামগঞ্জে। মিরপুরে ইবাদত লড়ছেন মাঠে ফেরার লড়াই। ফেরার দীর্ঘ প্রক্রিয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি ফিরে গেলেন লন্ডনের সেই অস্ত্রোপচারে, ‘অনেক বড় সার্জারি যেহেতু, ডাক্তার বলেছিলেন আমার পাঁচটা জায়গা ঠিক করতে হয়েছে। এই রকম সার্জারি তিনি খুব কমই করেছেন। হাঁটু খোলার পর নাকি ডাক্তার দেখেছেন, আমার এসিএল, লিগামেন্ট, সবই খোলা। তখনই তিনি বলেছিলেন, আমার ফিরতে একটু সময় লাগবে। আমি যদি রিহ্যাবে একটু বেশি সময় দিই, তাহলে ক্যারিয়ারটা একটু লম্বা হবে।’
সে জন্যই ইবাদত তাড়াহুড়ো করতে চাইছেন না। তাঁর লক্ষ্য এ বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সফর দিয়ে খেলায় ফেরা, ‘আমি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে পারিনি। এশিয়া কাপ এবং একের পর এক সিরিজ মিস করার পর এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও খেলতে পারব না। সবই যখন মিস হয়েছে, আর সামনে যেহেতু বড় কোনো টুর্নামেন্ট নেই, সময় নিয়ে ভালোভাবে ফেরা ভালো। দেখি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারত সিরিজ দিয়ে ফেরা যায় কি না। খারাপ লাগবে, তবে একটু সময় নিয়ে ফিরলে আবারও চোটে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।’
চোটের সঙ্গে ক্যারিয়ারজুড়ে লড়াই করা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও ইবাদতকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন। চোট থেকে ফেরার দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় ইবাদতের অনুপ্রেরণা তিনি, ‘অপারেশনের পরে যে কষ্টটা পেয়েছি, অ্যানেসথেসিয়া যাওয়ার পর, তখন আমার একটা মানুষের কথাই মাথায় এসেছে। আমার একবার অপারেশন হলো, ওনার তো সাতবার! উনি কীভাবে পারলেন? কী পরিমাণ শক্ত মানসিকতা চিন্তা করেন। তখনই বুঝতে পারি ফাস্ট বোলারদের জীবন কতটা কষ্টের। উনিও আমাকে সময় নিতে বলেছেন। ডাক্তার যা বলেছেন, তিনিও ঠিক তা–ই বলেছেন।’
তবু একটা শঙ্কা থেকেই যায়। এক বছর বিরতির পর তিনি কি পারবেন সেরা সময়ের গতিটা নিয়ে ফিরতে? কিন্তু ইবাদত মানেই তো গতি, বাউন্স আর আগ্রাসন! সেটা না থাকলে ইবাদত যে আর ইবাদতই থাকবেন না। তিনি নিজেও সেটা ভালো করেই জানেন, ‘একবার ফিটনেস ফিরে পেলে ছন্দে ফিরতে বেশি দিন লাগবে না। আমার অ্যাকশন খুবই সাদামাটা, আমার জন্য এটা কঠিন কিছু নয়। আমাকে সবাই চেনে গতির কারণে। গতিই যদি না থাকে, তাহলে তো হবে না।’