অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ব্রাউন প্রথমবার বিপিএলে খেলতে এসেছেন
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান জশ ব্রাউন প্রথমবার বিপিএলে খেলতে এসেছেন

ব্যাটের কারিগর থেকে টি-টোয়েন্টির ফ্রিল্যান্সার

সপ্তাহ দুই আগেও জশ ব্রাউনকে ক্রিকেট-বিশ্ব সেভাবে চিনত না। বয়স ৩০, বিগ ব্যাশ খেলছেন দুই বছর ধরে। অস্ট্রেলিয়ায় এমন কত ক্রিকেটারই তো আছেন! ব্রাউনের আর কী বিশেষত্ব?

উত্তরটা ব্রাউন নিজেই দিয়েছেন এবারের বিগ ব্যাশ কোয়ালিফায়ারে। অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে তাঁর ৫৭ বলে ১৪০ রানের ইনিংসটি বিগ ব্যাশ ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস, দ্বিতীয় দ্রুততম শতকও। বিগ ব্যাশ ইতিহাসের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও এখন এই কুইন্সল্যান্ডারের। বিগ ব্যাশ ফাইনালে ব্রাউনের ৩৮ বলে ৫৩ রান ব্রিসবেনকে এনে দেয় শিরোপা।

এই দুটি ইনিংসের সৌজন্যেই ব্রাউন পেয়ে যান বিপিএলের দল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সে খেলার প্রস্তাব। ব্রাউনও ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের আমন্ত্রণে সাড়া দিতে দ্বিধা করেননি। কদিন আগেও যাঁর পেশাদার ক্রিকেটার বলতে তেমন কোনো পরিচয়ই ছিল না, তিনিই এখন টি-টোয়েন্টির ফ্রিল্যান্সার!

সর্বশেষ বিশ ব্যাশের প্লে অফ পর্বে ঝোড়ো শতক করে ক্রিকেট বিশ্বের দৃষ্টি কাড়েন জশ ব্রাউন

ওহ্‌, ব্রাউনের তো আরেকটা পরিচয়ও আছে! তিনি ‘কুপার ক্রিকেট’ নামে একটি ক্রিকেট সরঞ্জামাদি তৈরির প্রতিষ্ঠানে ব্যাট তৈরির কাজ করেন। বিগ ব্যাশে নিজের বানানো ব্যাট ‘দ্য বাইসন’ দিয়ে খেলেই ছক্কার বৃষ্টি নামিয়েছেন। এবার বিপিএলেও দেখা যাবে বাইসনের ছক্কা।

সিলেটে আজ চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের টিম হোটেলে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে সে লক্ষ্যের কথাই বললেন ব্রাউন, ‘হ্যাঁ, আশা করি সে রকমই হবে। ছক্কা মারায় আমি সব সময়ই ভালো ছিলাম। সবার জন্য দেখার মতো কিছু করা চাই আমার। বল মাটিতে রাখা আমার জন্য একটু কঠিনই। আমি বরং বল বাতাসে ভাসাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।’

নেটে ব্যাটিং অনুশীলনে জশ ব্রাউন। আজ সিলেটে

তবে বাংলাদেশের কন্ডিশনে কাজটা কতটা সহজ হবে, নিশ্চিত নন এই অস্ট্রেলীয়, ‘আজ ব্যাটিং করলাম অনেকক্ষণ, প্রায় এক ঘণ্টা। চেষ্টা করছি কন্ডিশনের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে। এটা অবশ্যই ব্রিসবেন নয়, তবে উইকেট ভালো। শুধু ব্রিসবেনের তুলনায় বাউন্স একটু নিচু। আশা করি মানিয়ে নিতে পারব।’

ইন্টারনেটে ব্রাউনের প্রোফাইল দেখলেই বুঝতে পারবেন, তিনি পেশাদার ক্রিকেটে এসেছেন অনেক দেরিতে। টুকটাক ক্লাব ক্রিকেট খেললেও পেশাদার ক্রিকেটকে গুরুত্ব দিতে শুরু করেন ২৩ বছর বয়সে। ২৫ বছর বয়সে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে ব্রাউনের ফার্স্ট গ্রেড ক্রিকেটে অভিষেক। ২০২২ সালে ব্রিসবেন হিট তাঁকে বিগ ব্যাশে সুযোগ করে দেয়। এখন পর্যন্ত ব্রাউন লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১টি, টি-টোয়েন্টি ২৩টি।

তবে টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে যে বেশি সময় লাগে না, তা ব্রাউনের চেয়ে ভালো সম্ভবত আর কারও জানা নেই। বিগ ব্যাশ থেকে বিপিএলে আসা এই অস্ট্রেলীয় এখন আইপিএলের মতো বড় টুর্নামেন্টেও খেলার স্বপ্ন দেখতে পারেন। তবে বিপিএলে খেলে আপাতত ভিন্ন কন্ডিশনের শিক্ষাটা নিতে চান তিনি, ‘নিজের খেলার উন্নতির জন্যই এখানে আসা। আমি এখানে (বাংলাদেশে) কখনো খেলিনি। আমি আত্মবিশ্বাসী এখানে ভালো করব। এখানে খেলা অবশ্যই আমাকে আইপিএলে খেলার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে।’

নিজের বানানো ব্যাট দিয়েই বিপিএলে খেলবেন জশ ব্রাউন

সুযোগ পেলে আইপিএলেও নিজের বানানো ব্যাট দিয়েই চার-ছক্কা মারতে চান ব্রাউন। ব্রাউনের ব্যাট বানানোর চাকরিতে ঢোকার গল্পটাও বেশ অদ্ভুত। তাঁর মুখেই শুনুন সেটা, ‘যাদের হয়ে আমি কাজ করি, সেই কুপার ক্রিকেটের কাঠের ব্যবসা আছে। আমার যেহেতু পেশিবহুল শরীর, তাই তারা কাঠ কাটার ক্ষেত্রে আমার সাহায্য চেয়েছিল। ওরা আবার ব্যাটও বানায়। সেই সূত্র ধরেই কুপার ক্রিকেটের হয়ে আমার ব্যাট তৈরি শুরু।’ এরপর একটু মজা করেই বললেন, ‘এখন তো ওদের ব্যাট বিক্রি অনেকটাই বেড়ে গেছে!’

* জশ ব্রাউনের পুরো সাক্ষাৎকার পড়ুন আগামীকাল ছাপা সংস্করণে।