দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও চামিকা করুনারত্নে
দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও চামিকা করুনারত্নে

শারজায় রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কার জয়

ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস। পুরোনো কথাটাই আজ আবার মনে করিয়ে দিল আফগানিস্তান। এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে দলটির হারে যে বড় ভূমিকা রাখল ক্যাচ ছাড়া। শারজায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নতুন রান তাড়ার রেকর্ড গড়েই জিতেছে শ্রীলঙ্কা। আগের রেকর্ডটাও শ্রীলঙ্কার। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৭১ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা।

১৭৬ রানের লক্ষ্য। ১২তম ওভারের তৃতীয় বলে ৯৪ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। মোহাম্মদ নবীর করা ওভারের শেষ বলে লঙ্কানরা উইকেট হারাতে পারত আরেকটি। দানুস্কা গুনাতিলকা ক্যাচ তুলেছিলেন, ফাইন লেগ ফিল্ডার করিম জানাত কী করে যেন সহজ ক্যাচটি শুধু ফেলেই দিলেন না, বাউন্ডারিও বানিয়ে দিলেন। ১৩ রানে জীবন পাওয়া গুনাতিলকা জীবন পাওয়ার পর যোগ করেছেন আরও ২০ রান।

শ্রীলঙ্কার ইনিংস সর্বোচ্চ রান কুশল মেন্ডিসের

১৬তম ওভারের শেষ বলে আবারও ক্যাচ ছাড়ে আফগানরা। এবার ভানুকা রাজাপক্ষে বাঁচলেন সামিউল্লাহ শিনোয়ারির সৌজন্যে। ৮ বলে ২১ রান নিয়ে ব্যাট করা রাজাপক্ষে পরের ৬ বলে করলেন ১০ রান।

গুনাতিলকা-রাজাপক্ষেরা শেষ পর্যন্ত না থাকতে পারলেও সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটা জিতে প্রথম পর্বে হারার প্রতিশোধ নিতে কষ্ট করতে হয়নি শ্রীলঙ্কাকে। ‘আয়োজক’ লঙ্কানরা জিতেছে ৪ উইকেট ও ৫ বল হাতে রেখেই।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসে ১৯ বলে সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেছেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। ৬২ রানের উদ্বোধনী জুটিতে তাঁর সঙ্গী পাতুম নিশাঙ্কা ২৮ বলে করেছেন ৩৫। এ ছাড়া ৩০ ছাড়িয়েছেন শুধু ক্যাচ তুলেও বেঁচে যাওয়া গুনাতিলকা (২০ বলে ৩৩) ও রাজাপক্ষে (১৪ বলে ৩১)। রাজাপক্ষেরা বিদায় নেওয়ার পর ৯ বলে ১৬ রান করেছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।

দল হারলেও ৮৪ রান করে ম্যাচসেরা হয়েছেন আফগানিস্তানের রহমানউল্লাহ গুরবাজ

এর আগে আফগানরা করে ৬ উইকেটে ১৭৫ রান। প্রায় অর্ধেক রানই রহমানউল্লাহ গুরবাজের। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও আফগান ওপেনার ফিরেছেন ৮৪ রানে। মাত্র ৪৫ বলেই ৬ ছক্কায় রানটা করেছেন গুরবাজ।

৮ রানে একবার ফিল্ডারের সীমানা কুশনে পা লাগিয়ে ফেলায় ক্যাচ তুলেও ছক্কা পেয়ে গিয়েছিলেন গুরবাজ। রিপ্লে দেখে তাঁকে ফিরিয়ে এনেছিলেন আম্পায়াররা। সেখান থেকেই ৮৪ রান করে ফেরেন ২০ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।

আগের দিন পাকিস্তান ও হংকংয়ের ম্যাচের চেয়ে তুলনামূলক ব্যাটিংসহায়ক ছিল এ ম্যাচে শারজার উইকেট, যদিও বল নিচু হচ্ছিল মাঝে মাঝেই। সেটির সঙ্গে ঠিক তাল মেলাতে পারেননি আফগানিস্তানের বাঁহাতি ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই। কিছুক্ষণ ধরেই আড়াআড়ি শট খেলার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আবার খেলতে গিয়েছিলেন দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে, তাতেই বোল্ড হয়ে ফিরতে হয় তাঁকে ১৬ বলে ১৩ রান করেই। জাজাইয়ের উইকেট হারিয়ে পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে আফগানিস্তান তোলে ৪৯ রান।

ইব্রাহিম জাদরানকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৩ রান যোগ করেছেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ (বাঁয়ে)

জাজাইকে ফেরালেও দ্রুতই গুরবাজকে থামাতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। ৯ থেকে ১২—এ ৪ ওভারে অবশ্য আঁটসাঁট বোলিং করে তারা, ওই সময়ে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ওঠে ২৫ রান। ১৩তম ওভারে অধিনায়ক দাসুন শানাকা দেন ১৬ রান, চামিকা করুনারত্নের করা পরের ওভারে আসে ২১ রান। ১৫তম ওভারে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা সে গতিটা টেনে ধরেন মাত্র ৬ রান দিয়ে। সে চাপেই ফেরেন গুরবাজ, আসিতা ফার্নান্ডোকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে। ইব্রাহিম জাদরানের সঙ্গে তাঁর জুটিতে ৬৩ বলে ওঠে ৮৩ রান।

এতক্ষণ গুরবাজকে সঙ্গ দিয়ে যাওয়ার কাজটিই করছিলেন ইব্রাহিম। গতি বাড়াতে গিয়ে মাদুশঙ্কার স্লোয়ারে স্কুপের চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাঁর, ফেরেন ৩৮ বলে ৪০ রান করেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে জ্বলে ওঠা নজিবউল্লাহ জাদরান একটি করে চার-ছক্কায় লাফ দিতে ধরেছিলেন, ১০ বলে ১৭ রান করেই অবশ্য তাঁকে থামতে হয় রানআউটে। ১৯তম ওভারে তিকশানা দেন মাত্র ৩ রান, ৪ ওভারে ২৯ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। শেষ ওভারে আসিতা ফার্নান্ডোকে একটি ছক্কা মারেন রশিদ খান, তবে ৯ রানের বেশি আসেনি। ৩৭ রানে ২ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার ছিলেন মাদুশঙ্কা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা উইকেট পাননি, কিন্তু ৪ ওভারে মাত্র ২৩ রান দেন এই লেগ স্পিনার।