সাকিব আল হাসান চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে বোলিংয়ে এসেছেন ৫৩তম ওভারে। দ্বিতীয় ইনিংসে দশম ওভারে এলেও সাকিবকে সাকিব মনে হচ্ছিল না। বোলিং কম করছেন। করলেও কার্যকর মনে হচ্ছিল না। পাকিস্তান সফরে এবং কাউন্টি ক্রিকেটে ভালো বোলিং করে এলেও চেন্নাইয়ে বোলার সাকিবকে কেন এমন অচেনা মনে হচ্ছে, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন সবাই।
ধারাভাষ্যকার মুরালি কার্তিক তাঁদের একজন। আজ চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলার শুরুতে ভারতের সাবেক এই বাঁহাতি স্পিনার কৌতূহল মেটাতে সাকিবের সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে ধারাভাষ্যে এসে সাকিবের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, সেটাও জানিয়েছেন, ‘তাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী কারণে সে কম বোলিং করছে...সে আমাকে যা বলেছে, তা একজন স্পিনার হিসেবে আমি অনুধাবন করতে পারছি।’
এরপরই চমকে যাওয়ার মতো একটা তথ্য জানিয়েছেন কার্তিক, ‘তার বাঁ হাতের স্পিনিং ফিঙ্গারে একটা অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। সেটি এখন ফুলে গেছে, শক্ত হয়ে আছে। ওই আঙুলে সে বলের অনুভূতিটাও পাচ্ছে না। স্পিনার হিসেবে বলের অনুভূতিটা দরকার। এ ছাড়া তার কাঁধেও অস্বস্তি আছে।’
পরের পালায় ধারাভাষ্যে এসে কার্তিকের কথার সূত্র ধরে আরেক ধারাভাষ্যকার তামিম ইকবাল যৌক্তিক একটা প্রশ্ন তুললেন, ‘মুরালি কার্তিক বলে গেছে, আঙুলের সমস্যার কারণে সাকিব বল গ্রিপ করতে পারছে না। যদি তা-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশ চারজন ফ্রন্টলাইন বোলার নিয়ে খেলছে। টিম ম্যানেজমেন্টের অবশ্যই জানানো উচিত, তারা এই ইনজুরির কথাটা আগে থেকেই জানত কি না।’
সাকিবের আঙুলে সম্প্রতি অস্ত্রোপচার হয়ে থাকলে তথ্যটা একেবারেই নতুন। সেটি হয়ে থাকলেও কীভাবে তা সম্ভব, এটাও একটা প্রশ্ন। গত কিছুদিন সাকিব খেলার মধ্যেই আছেন। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলেই কাউন্টি ক্রিকেটে একটা ম্যাচ খেলতে ইংল্যান্ডে গেছেন। পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে ৩ সেপ্টেম্বর। সাকিবের ইংল্যান্ড পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেড়–দুই দিন লেগে যাওয়ার কথা। ১২ সেপ্টেম্বর মাঠে নেমে গেছেন সমারসেটের বিপক্ষে সারের হয়ে। সেই ম্যাচ শেষ হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর, যে ম্যাচে সাকিব দুই ইনিংসে বোলিং করেছেন প্রায় ৬৪ ওভার। উইকেট নিয়েছেন ৯টি। ম্যাচ শেষ করেই বিমানে উঠে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে চেন্নাইয়ে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে ইংল্যান্ড গিয়ে ম্যাচ খেলতে নামার আগে সময় পেয়েছেন ৫ থেকে ৬ দিন। এত অল্প সময়ের মধ্যে আঙুলে অস্ত্রোপচার করিয়ে কোনোভাবেই খেলা সম্ভব নয়।
সে তো মোটামুটি খেলছেই। এমন হতে পারে, ওর হয়তো এখন কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। এটা থাকতে পারে। একটা আঙুল যদি ভেঙে যায়, তখন কিন্তু সেটা আর আগের জায়গায় আসে না। এটা তো ভাঙা জিনিস। একদমই আগের মতো হবে না। সে ওটাকে ম্যানেজ করে খেলছে।দেবাশীষ চৌধুরী, বিসিবির প্রধান চিকিৎসক
বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীও সাকিবের আঙুলে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে বলে কিছু জানেন না। ক্রিকেটারদের যেকোনো চিকিৎসার ব্যাপারেই ওয়াকিবহাল থাকা দেবাশীষ বলছেন, ‘সাকিব কিন্তু আমাদের কাছে আঙুল নিয়ে কোনো অভিযোগ করেনি। এটা ঠিক, ওর ওখানে (আঙুলে) চিড় ছিল। তখন আঙুল বেঁধে রেখেছিল কিছুদিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হলো। সেখানে তো আঙুল নিয়ে তার কোনো অভিযোগ শুনিনি। এরপর সার্জারি হলে তো আমরা জানতাম। তার সর্বশেষ সার্জারি হয়েছিল সেই এশিয়া কাপের সময় (২০১৮ সালে)। এরপর সার্জারি হয়নি, ফ্র্যাকচার হয়েছে, ২০২৩ বিশ্বকাপে ভারতে।’
গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে বাঁহাতির তর্জনী ভেঙে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচে না খেলে সাকিব দেশে ফিরে আসেন। ভেঙে যাওয়া সেই আঙুলে এখনো কোনো অস্বস্তি থেকে যেতে পারে বলে ধারণা দেবাশীষের, ‘সে তো মোটামুটি খেলছেই। এমন হতে পারে, ওর হয়তো এখন কিছুটা অস্বস্তি লাগছে। এটা থাকতে পারে। একটা আঙুল যদি ভেঙে যায়, তখন কিন্তু সেটা আর আগের জায়গায় আসে না। এটা তো ভাঙা জিনিস। একদমই আগের মতো হবে না। সে ওটাকে ম্যানেজ করে খেলছে। আমাদের হয়তো জানায়নি। কিন্তু অস্বস্তি থাকতেও পারে।’