লর্ডস টেস্টে জনি বেয়ারস্টোর আলোচিত স্টাম্পিং আউটের প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চললেও বিতর্ক যেন থামছেই না! ২ জুলাই টেস্টের রোমাঞ্চকর শেষ দিনে ইংল্যান্ডের বেয়ারস্টোকে ক্রিজ ছেড়ে বের হতে দেখেই ‘আন্ডারআর্ম’ থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি। ঘটনার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল লর্ডসের বিখ্যাত লং রুমেও।
অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়েরা মধ্যাহ্নভোজ বিরতিতে মাঠ ছেড়ে লং রুম দিয়ে ড্রেসিংরুমে যাওয়ার সময় তাঁদের দুয়ো দেন ক্রিকেটের আইনপ্রণয়নকারী সংস্থা মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাবের (এমসিসি) সদস্যরা। কেউ কেউ ‘প্রতারক’ বলে চিৎকার করেন। কয়েকজন ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ানোর প্রমাণ মেলায় এমসিসি পরদিনই তিন সদস্যকে নিষিদ্ধ করে।
পুরো ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে খাজা বলেছিলেন, ‘এমসিসির সদস্যদের মুখ থেকে বেরোনো কিছু কথা খুবই হতাশাজনক ছিল। আমি তাদের সঙ্গে এ নিয়ে লড়াইয়ে যাইনি। তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করেছিলাম।’ লর্ডস টেস্টেই চোটে পড়ে অ্যাশেজ থেকে ছিটকে পড়া স্পিনার নাথান লায়নও গতকাল জানান, হোম অব ক্রিকেটে দুই দলকে একই ডাইনিংরুমে খাওয়ার রীতি থাকায় মধ্যাহ্নভোজের সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত ছিল। তিনিই ক্রাচে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দুই পক্ষের মাঝে দাঁড়ান, যাতে খাওয়ার সময় পরিস্থিতি একটু শান্ত থাকে।
লর্ডস টেস্ট নিয়ে এখনো চলমান সেই উত্তেজনায় এবার যেন নতুন করে ঘি ঢাললেন ওয়ার্নারের স্ত্রী ক্যান্ডিস ফ্যালজোন। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই ‘আয়রন উইম্যান’–এর চোখে, ওই দিনের ঘটনা নজিরবিহীন। আর এবারের অ্যাশেজ সবচেয়ে বিশ্রী।
ম্যানচেস্টারে আজ থেকে শুরু হতে চলা চতুর্থ টেস্টের প্রাক্কালে ফক্স স্পোর্টসের ‘দ্য ব্যাক পেজ’ অনুষ্ঠানে ক্যান্ডিস বলেছেন, ‘এ ধরনের কাণ্ড আপনি কোথাও দেখতে চাইবেন না। (অস্ট্রেলিয়ার) কয়েকজন খেলোয়াড়কে কার্যত লাথি মারা হয়েছিল। উসমান খাজার সঙ্গে যা করা হয়েছিল, তাতে সে সত্যিই বিরক্ত হয়ে পড়েছিল। স্টার্কি (মিচেল স্টার্ক) ও প্যাট কামিন্স ওদের (ব্রিটিশ) মিডিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল। জঘন্য ভাষায় গালাগালি এরপরও চলেছে।’
টিভি ক্যামেরায় যা ধরা পড়েছে, সেখানেই শেষ নয়। এরপর আরও অনেক কিছু ঘটেছে বলে জানান ক্যান্ডিস, ‘আপনারা দেখেছেন নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আগে (ওয়ার্নার ও খাজাকে) এমসিসি সদস্যদের সামনে পড়তে হয়েছিল। কিন্তু ওই ছবিগুলোই শেষ নয়। দুই সিঁড়ি বেয়ে ড্রেসিংরুমে ঢোকার আগে ও আরও দুই সিঁড়ি বেয়ে মধ্যাহ্নভোজ করতে যাওয়ার সময়ও তাদের গালিগালাজ করা হয়েছে।’
আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি সানরাইজার্স হায়দরাবাদে একসময় সতীর্থ ছিলেন ওয়ার্নার-বেয়ারস্টো। হায়দরাবাদের হয়ে ওপেন করতে নেমে একসঙ্গে দুজনের সেঞ্চুরির রেকর্ডও আছে। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছিল। নিজের আউট নিয়ে তাই অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের মধ্যে ওয়ার্নারের সঙ্গেই আলোচনা করতে এসেছিলেন ইংলিশ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান।
ডাইনিংরুমে ওয়ার্নার-বেয়ারস্টোর কথপোকথনের বিষয়টি ক্যান্ডিসই সামনে এনেছেন, ‘জনি (বেয়ারস্টোর) কথা বলতে এগিয়ে এসেছিল। ডেভিড (ওয়ার্নার) ওর সঙ্গে কিছু কথা বলেছে। তবে সত্যি বলতে, পুরো (লর্ডস) টেস্ট আমার কাছে নোংরা লেগেছে। এমনকি টেস্ট শেষ হওয়ার এত দিন পরেও সমর্থকেরা ওই ঘটনার পেছনে লেগে আছে। এটা খুব হতাশজনক।’
লর্ডসের লং রুমের ওই ঘটনা নিয়ে দ্য টেলিগ্রাফের ‘ভনি অ্যান্ড টাফার্স ক্রিকেট ক্লাব পডকাস্ট’-এ কথা বলেছেন ওয়ার্নারও, ‘এটা একেবারে অবিশ্বাস্য ছিল। এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি। হোম অব ক্রিকেটে যাঁদের প্রাপ্তবয়স্ক, পরিপক্ব ও সবচেয়ে শান্ত স্বভাবের মানুষ মনে করা হয়, তাঁদের আচরণ ছিল অগ্রহণযোগ্য।’
পডকাস্টটি উপস্থাপনা করেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন ও সাবেক স্পিনার ফিল টাফনেল। তাঁরাও ওয়ার্নারের কাছে ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান। জবাবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার বলেন, ‘আমার কাছে যদি একটা মাইক্রোফোন থাকত, তাহলে মানুষকে শোনাতে পারতাম তারা কতটা জোরে কথা বলছিল। এটা ছিল স্রেফ পাগলামি। এখানে আমি পুনরাবৃত্তি করতে পারব না।’
২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে সিরিশ কাগজ দিয়ে বল বিকৃতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ওয়ার্নারের সঙ্গে তাঁর পরিবারও প্রতিপক্ষ সমর্থকদের ‘লক্ষ্যবস্তুতে’ পরিণত হয়। গত কয়েক বছরে ক্যান্ডিসকে বেশ কয়েকবার গালমন্দের শিকার হতে হয়েছে। কেউ কেউ তাঁকে উদ্দেশ্য করে অপমানজনক গান গেয়েছেন, অনেকে আবার টি-শার্টে অশ্লীল ভাষা লিখে এনেছেন। এবারের অ্যাশেজে ব্যাপারগুলো ওয়ার্নার ও তাঁর পরিবারের জন্য যেন অসহনীয় হয়ে পড়েছে।
বয়স ৩৬ পেরিয়েছে। এখনো ক্রিকেটের তিন সংস্করণ খেললেও ধাপে ধাপে অবসরের পরিকল্পনা করে রেখেছেন ওয়ার্নার। আগামী বছর ঘরের মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এসসিজি) পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট থেকে খেলে এই সংস্করণকে বিদায় বলে দেবেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার।