সাক্ষাৎকার দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই হিসেবি লিটন দাস। প্রচারের আলো যখন তাঁকে খুঁজে বেড়ায়, তখন তিনি আড়াল খুঁজে নেন। কিন্তু সাফল্য হয়তো সবারই মন গলাতে বাধ্য করে। আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টিতে ধবলধোলাইয়ের পরও লিটনের ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হলো।
ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে এসে সঞ্চালককে নিজের ক্যারিয়ার–সেরা ৭৩ রানের ইনিংসের ব্যাখ্যাটা করছিলেন লিটন, ‘নতুন বলে রান করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমার কিছু সময় উইকেটে কাটাতে হতো, উইকেটের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হতো। রনি ও শান্ত যেভাবে খেলেছে, তাতে আমার চাপ কিছুটা কমেছে। আমিও ইনিংসটা সাজাতে পেরেছি।’
এরপর লিটনের সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা টিভি সম্প্রচারক প্রতিষ্ঠানকে। সে জন্য ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়েই লিটন জাতীয় দলের ম্যানেজার নাফিস ইকবালকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন, একটার বেশি সাক্ষাৎকার দেবেন না। কিন্তু শুধু টিভি সম্প্রচারকদের সঙ্গে কথা বলেই পার পেলেন না লিটন।
বাংলাদেশের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারানোর দিনে আরও কিছুক্ষণ তো সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলাই যায়। তিনি জানালেন সাদা বলের রাজা ইংল্যান্ডকে হারানোর গল্প, ‘আমরা আসলে তৃতীয় ওয়ানডে জেতার পর বিশ্বাস পেয়েছি যে এই ইংল্যান্ডকে হারানো যায়। আর আমরা দেশের মাটিতে অনেক শক্তিশালী দল। আমাদের হাতে ভালো স্পিনার আছে, ভালো পেসার আছে, ব্যাটসম্যানরাও ভালো করছে। ইনফ্যাক্ট ভালো ফিল্ডিং সাইডও আছে। জিতব কি না, এমন চিন্তা করার দরকার ছিল না আমাদের। যেহেতু আমাদের দল ভালো, ভালো করলে আমরা জিতব, এই বিশ্বাস ছিল।’
তবে এই জয় যে বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টির বড় দলে পরিণত করেনি, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছেন লিটন। আরও অনেকটা পথ পাড়ি দেওয়া বাকি, লিটনের কথায় আছে সে বার্তা, ‘আমি এটাও বলব না যে আমরা পরের সিরিজে বা তার পরের সিরিজে একেবারে বড় কিছু করে ফেলব। আমরা যেভাবে খেলছি, এভাবে যদি খেলে যেতে পারি, তাহলে একটা জায়গায় যেতে পারব।’
লিটনের রানে ফেরাও দলের জন্য স্বস্তির, সেটা বোঝা গেল দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তাসকিনের কথায়। জাতীয় দলের ওপেনারের ইনিংসের প্রসঙ্গে তিনি বলছিলেন, ‘লিটন তো সব সময়ই আমাদের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এই সিরিজের শুরুতে হয়তো রান করতে পারেনি। কিন্তু শেষ ম্যাচটায় যে অসাধারণ ইনিংস খেলেছে, এটা আমাদের জন্যও স্বস্তির যে আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান রান করেছে। সামনে আরও অনেক খেলা আছে। ওর রানে থাকাটা…আমাদের প্রত্যাশা থাকে, সে রান করবে। সে যেদিনই রান করে, দেখতেও ভালো লাগে।’
তাসকিন কথাগুলো বলছিলেন মুখে চওড়া হাসি টেনে। তাঁর কাছে ইংল্যান্ডকে ধবলধোলাই করা বিরাট অর্জন। সেটা সংস্করণটা টি-টোয়েন্টি বলেই। দলের সবাইকে এই অর্জনের কৃতিত্ব দিয়ে তাসকিন বললেন সে কথা, ‘দল হিসেবে সবাই অনেক ভালো খেলেছে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ জেতা, সেটাও আবার হোয়াইটওয়াশ, তা–ও আবার টি-টোয়েন্টিতে। সাধারণত সবাই ভাবে আমরা ওয়ানডেতে ভালো করি। ওয়ানডে তো আমরা ভালো, আগের চেয়েও উন্নতি হয়েছে। এবার টি-টোয়েন্টিতেও সিরিজ জিতলাম, সবাই মিলে সে অবদান রেখেছে, সেটা অসাধারণ।’
যদিও আজকের ম্যাচটার অনেকটা সময় চালকের আসনে ছিল ইংল্যান্ডই। ১৫৮ রান করতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড ১০০ রান করে ফেলে। তবে ইংল্যান্ডকে হারাতে এক ওভারই যথেষ্ট, এমন বিশ্বাস ছিল দলের মধ্যে। তাসকিনও তা–ই বললেন, ‘একটা ওভার লাগে ম্যাচ ঘুরতে, এটাই সবাই ভাবছিলাম। এই জন্যই সবাই খুব তৎপর ছিলাম। আমি যখন এলাম, তখন উইকেটের জন্যই বল করেছি। দুটি উইকেট পেয়েছিও। ফিজ দারুণ বল করেছে। মিরাজ বাটলারের রান আউটটা করেছে। সবাই মিলেই খুব করে চেয়েছে। সে জন্যই এসেছে।’