কী ভীষণ চাপ নিয়েই না ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুলতান টেস্টটা খেলতে নেমেছিলেন শান মাসুদ!
পাকিস্তানের টেস্ট দলের অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে দল শুধু হারছেই। অস্ট্রেলিয়ায় তিন টেস্ট সিরিজে ধবলধোলাইয়ের পর শান মাসুদ যদি ফুটন্ত কড়াইয়ে পড়েন, বাংলাদেশের কাছে ধবলধোলাইয়ের পর পড়ে যান জ্বলন্ত উনুনে।
শুধু দল খারাপ করলেই হতো, শান মাসুদের নিজের ফর্মও তো ভালো ছিল না। অধিনায়ক হওয়ার পর টেস্টে ১০ ইনিংসে তিনবার ৫০ পেরোলও তাঁর সর্বোচ্চ ইনিংসটা ছিল ৬০ রানের। এই পরিসংখ্যান ভুল বোঝাতে পারে, মনে হতে পারে অধিনায়কত্বের চাপেই ব্যাটিং খারাপ হচ্ছে। ঘটনা তা নয়, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলা ৬০ রানের ইনিংসটিই ছিল ২০২০ সালের আগস্টের পর শান মাসুদের টেস্ট সর্বোচ্চ। অধিনায়কত্ব হারানোর শঙ্কা তো ছিলই, শান মাসুদকে চেপে ধরেছিল দল থেকেই বাদ পড়ার চাপ।
কিন্তু আজ মুলতান টেস্টটা শুরু হতেই যেন চাপটাপ সব উধাও। স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে কী দারুণ এক সেঞ্চুরিই না তুলে নিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। চার বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষার পর টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরিটি অবশেষে পেলেন ২০১৩ সালে প্রথম টেস্ট খেলা শান মাসুদ। পাকিস্তান ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি পেলেন সেই দলের বিপক্ষে যে দলের বিপক্ষে ২০২০ সালে সেঞ্চুরি পরই শুরু তাঁর রান–খরা।
২০২০ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৩১৯ বলে ১৫৬ রান করেছিলেন শান মাসুদ। সেটি ছিল টেস্টে তাঁর টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি। পরের চার বছরে ১৪ টেস্টে মাত্র ৪ বার ৫০ পেরোনো ব্যাটসম্যান আজ করেছেন ১৫১ রান। তবে সেটি মাত্র ১৭৭ বলেই। ১০২ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে পাকিস্তানের অধিনায়কদের মধ্যে দ্বিতীয় দ্রুততম হয়েছেন। দ্রুততম মিসবাহ-উল-হক। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৬ বলে সেঞ্চুরি করে তো ক্যারিবীয় কিংবদন্তি ভিভ রিচার্ডসের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেছিলেন মিসবাহ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করে যে রেকর্ড ভাঙেন নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম।
অধিনায়কের পর সেঞ্চুরি পেয়েছেন আবদুল্লাহ শফিকও। মাসুদ-শফিকের ২৫৩ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ভর করে মুলতান টেস্টের প্রথম দিনটা পাকিস্তান শেষ করেছে ৪ উইকেটে ৩২৮ রান তুলে।
শান মাসুদ আজ শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। প্রথম ফিফটি তো ছুঁয়ে পেলেন ৪৩ বলেই। ১০২ বলে সেঞ্চুরির পর ১৫০ ছুঁয়েছেন ১৬৬ বলে। ইনিংসের ১৭৭তম বলে ইংল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার জ্যাক লিচকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, দলের স্কোর ২৬৩/৩।
পাকিস্তান দ্বিতীয় উইকেটটি হারিয়েছিল ২ রান আগেই। অধিনায়কের সঙ্গে ২৫৩ রানের জুটি গড়ার পর আউট হয়েছেন ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক। অধিনায়কের মতো শফিকও পেয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। চতুর্থ সেঞ্চুরিটা গত বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কলম্বোতে পেয়েছিলেন। ক্লান্তি থেকেই কি না, মুখোমুখি হওয়া ১৮৪তম বলে গাস অ্যাটকিনসের বলে পয়েন্টে দাঁড়ানো ইংল্যান্ড অধিনায়ক ওলি পোপকে যেন ক্যাচিং অনুশীলন করালেন শফিক।
১০২ রান করা শফিক যখন মাসুদের সঙ্গে জুটি বাঁধেন পাকিস্তানের রান মাত্র ৮। টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া দলটি চতুর্থ ওভারেই হারিয়ে ফেলে সাইম আইয়ুবকে। ১০ বলে ৪ রান করা সাইম গাস অ্যাটকিনসনের বলে ক্যাচ দেন উইকেটকিপার জেমি স্মিথের হাতে।
অনভিজ্ঞ এক বোলিং আক্রমণ নিয়ে পাকিস্তান সফরে আসা ইংল্যান্ডের সেই সাফল্য সময় যত গড়িয়েছে, ততই ফিকে হয়েছে। মুলতানের প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করেছে ইংলিশরা। উইকেট কিঞ্চিৎ সবুজাভ হলেও তা থেকে কোনো সুবিধাই নিতে পারেননি ইংল্যান্ডের তিন পেসার ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন ও ব্রায়ডন কার্স। স্পিনাররাও খেই হারিয়েছেন শফিক-মাসুদের সামনে। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত তরুণ স্পিনার শোয়েব বশির পূর্বপুরুষের দেশে প্রথম টেস্ট নেমে নাজেহাল হয়েছেন ভালোভাবেই। প্রথম দুই সেশনে তো এই অফ স্পিনারের প্রতি ওভারে প্রায় সাড়ে ৪ রান করে নিয়েছে পাকিস্তান।
১ উইকেটে ১২২ রান নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া পাকিস্তান চা–বিরতিতে যায় ১ উইকেটে ২৩৩ রান তুলে। মাসুদ সেঞ্চুরি পেয়ে যান দ্বিতীয় সেশনেই। শফিক যেটি পেয়েছেন তৃতীয় সেশনে।
১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৫১ রান করা শান মাসুদকে ১৬ রানের মাথায় কার্সের বলে এলবিডব্লু আউট দিয়ে দিয়েছিলেন আম্পায়ার। তাৎক্ষণিক রিভিউ নিয়ে বাঁচেন মাসুদ, বলটা যে পিচ করেছিল লেগ স্টাম্পের বাইরে। তাতে টেস্ট অভিষেকে উইকেট পেয়েও হারাতে হয় কার্সকে। এই বাঁহাতির রান যখন ১১৫, সে সময়ে আউট চেয়ে রিভিউ নিয়েও ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ড। এবার বোলারের নাম শোয়েব বশির।
মাসুদ-শফিকরা ফেরার পর দিনের শেষ ভাগে পাকিস্তান হারিয়েছে বাবর আজমকে। ২০২২ সালের পর দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট খেলা ক্রিস ওকসের বলে এলবিডব্লু হয়েছেন ৩০ রানে। ২০২২ ডিসেম্বরের পর টেস্টে এ নিয়ে টানা ১৭ ইনিংসে ৫০-এর নিচে আউট হলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক।
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ৩২৮/৪ (মাসুদ ১৫১, শফিক ১০২, শাকিল ৩৫*, বাবর ৩০; অ্যাটকিনসন ২/৭০, ওকস ১/৫৮, লিচ ১/৬১)।(১ম দিন শেষে)