বুমরার বলে বোল্ড রিজওয়ান। পাশে দাঁড়িয়ে রোহিত–কোহলির উদ্‌যাপন। মুহূর্তটা যেন ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের দুর্ভোগেরই প্রতিচ্ছবি
বুমরার বলে বোল্ড রিজওয়ান। পাশে দাঁড়িয়ে রোহিত–কোহলির উদ্‌যাপন। মুহূর্তটা যেন ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের দুর্ভোগেরই প্রতিচ্ছবি

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

১২০ রানও করতে পারল না পাকিস্তান, দুর্দান্ত জয় ভারতের

স্কোরবোর্ডে মাত্র ১১৯ রান। সেটা নিয়েই ভারতের বোলাররা শেষ ওভারে সমীকরণ নিয়ে আসেন ৬ বলে ১৮ রানে। পাকিস্তানের শেষ ভরসা ইমাদ ওয়াসিম তখন ক্রিজে। কিন্তু ভারতের পেসার অর্শদীপ সিংয়ের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই ইমাদ কট বিহাইন্ড হলে সম্ভাবনার পাল্লা অনেকটাই হেলে পড়ে ভারতের দিকে।

শেষের দিকে নাসিম শাহ দুটি বাউন্ডারিতে শুধু পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমিয়েছেন। শেষ ওভারে ১১ রান নিলে পাকিস্তানের ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ১১৩ রানে। শেষ পর্যন্ত ৬ রানে পাকিস্তানকে হারিয়েছে ভারত।

ছোট্ট রান তাড়ায় যে দুজন ব্যাটসম্যানকে ইনিংসের শুরুতে চাইবেন, পাকিস্তান দলে আছেন তাঁরাই। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান উদ্বোধনী জুটিতে দেখেশুনে খেলবেন। ঝুঁকিহীন ব্যাটিংয়ে রান বাড়াবেন স্বাচ্ছন্দ্যে। আজ দুজন মিলে ২৬ রানের জুটি গড়ে ঠিক তাই করলেন।

বুমরা এসে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বাবরকে স্লিপের ক্যাচে পরিণত করলেও রিজওয়ান টিকে থেকে উসমান খানের সঙ্গে আরও একটি জুটি (৩১) গড়েন। ইনিংসের ১১তম ওভারে অক্ষর প্যাটেলের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন উসমান (১৩)। চারে নামা ফখর জামান ৮ বলে ১৩ রানের ক্যামিও খেলে আউট হলেও রিজওয়ান টিকে থাকায় ম্যাচটাকে পাকিস্তানেরই মনে হচ্ছিল।

বাবর আজমকে আউট করার পর যশপ্রীত বুমরার উচ্ছ্বাস

বিপদটা ঘটে বুমরার করা ১৫তম ওভারে। ভারতের এক নম্বর বোলারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই আড়াআড়ি ব্যাটে লেগের দিকে মারার চেষ্টা করেন রিজওয়ান। কিন্তু লেংথ থেকে নিচু হয়ে আসা বলে রিজওয়ান বোল্ড হলে ম্যাচের ছবিটা পাল্টে যায়। ৪৪ বলে ৩১ রানে থামে রিজওয়ানের ইনিংস। পরের ওভারে শাদাব খানকে ফেরান হার্দিক পান্ডিয়া।

ইমাদ ওয়াসিম শেষ ওভার পর্যন্ত টিকে ছিলেন, কিন্তু ২৩ বলে ১৫ রানে থামে তার ইনিংস। তাঁর বিদায়ে পাকিস্তানের জয়ের আশাও ধূলিসাৎ হয়ে যায়। শেষের দিকে নাসিম শাহ ও শাহিন শাহ আফ্রিদি শুধু পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়েছেন। ভারতের হয়ে সেরা বোলার ছিলেন মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেওয়া বুমরা।

এর আগে বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয় ৫০ মিনিট দেরিতে। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবরের ভাগ্য ভালো, ওভারকাস্ট কন্ডিশনে তিনি মহাগুরুত্বপূর্ণ টস জিতেছেন। এরপর নতুন বলটা তুলে দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহর হাতে।

নাসিমের করা দ্বিতীয় ওভারেই কাভারে ক্যাচ তোলেন বিরাট কোহলি। এক বাউন্ডারিতে ৩ বলে ৪ রানে থামে কোহলির ইনিংস। শাহিনের করা পরের ওভারে রোহিত লেগের দিকে তুলে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে থাকা হারিস রউফের হাতে ক্যাচ তোলেন। তাতে ১২ বলে ১৩ রানে থামে রোহিতের ইনিংস।

ঋষভ পন্তের ৪২ রানের ইনিংসটা এই ম্যাচেরই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ

ঋষভ পন্ত টিকে থাকায় রক্ষা। ১৯ রানে ২ উইকেট হারানোর ভারতের রান বাড়ানোর কাজটা করেন এই বাঁহাতি। প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নিয়ে প্রথমে অক্ষর প্যাটেল ও পরে সূর্যকুমার যাদবের সঙ্গে দুটি ত্রিশ ছাড়ানো জুটি গড়েন।

অক্ষর ১৮ বলে ২০ রান করে নাসিমের বলে বোল্ড হন, ৭ রান করা সূর্যকুমারকে থামিয়েছেন হারিস। মাঝের ওভারে দুই উইকেট হারালেও পন্ত থাকায় লড়াই করার মতো রানের আশা ছিল ভারতের। কিন্তু নাসিম, হাসিবের পর আমির উইকেট শিকারে যোগ দেওয়ায় তা হয়নি।

১৪তম ওভারে শিবম দুবের উইকেট নিয়ে ভারতের বিপদ বাড়ান নাসিম, আমির ১৫তম ওভারে এসে জোড়া আঘাত হানেন। ওভারের প্রথম বলে পন্ত তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ তোলেন, পরের বলে কাভারে ক্যাচ আউট রবীন্দ্র জাদেজা।

হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ছেন পাকিস্তানের নাসিম শাহ

ভারতের রান তখন ৭ উইকেটে ৯৬, সেখান থেকে টেনেটুনে ইনিংসটাকে ১৯তম ওভার পর্যন্ত নিতে পেরেছে ভারতের লোয়ার অর্ডার, সব উইকেট হারিয়ে রান করেছে মাত্র ১১৯।

পাকিস্তানের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছে নাসিম ও হারিস, আমিরের শিকার ২ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ভারত: ১৯ ওভারে ১১৯ অলআউট

(পন্ত ৪২, অক্ষর ২০, রোহিত ১৩; নাসিম ৩/২১, রউফ ৩/২১, আমির ২/২৩, আফ্রিদি ১/২৯)।

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১১৩/৭

(রিজওয়ান ৩১, ইমাদ ১৫, ফখর ১৩, বাবর ১৩, উসমান ১৩; বুমরা ৩/১৪, পান্ডিয়া ২/২৪, অক্ষর ১/১১, অর্শদীপ ১/৩১)।

ফল: ভারত ৬ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: যশপ্রীত বুমরা।