>সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে অলৌকিক জয় এনে দেওয়ার পথেই ছিলেন থিসারা পেরেরা। শেষ পর্যন্ত তা না হলেও উপহার দিয়েছেন জমজমাট এক ম্যাচ
জয়ের জন্য ৩২০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৫৪ রান তুলতেই ৯ উইকেট নেই। ৪২ বলে তখনো ৬৬ রানের দূরত্ব। এই অবস্থায় অন্য প্রান্তে সেট ব্যাটসম্যান থাকলেও হাল ছেড়ে দেওয়ার কথা। সেটি অবশ্য রক্ত-মাংসের ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু মাউন্ট মঙ্গানুইতে আজ থিসারা পেরেরাকে কি রক্ত-মাংসের ক্রিকেটার বলে মনে হয়েছে? লঙ্কান অলরাউন্ডার যেন হয়ে উঠেছিলেন কমিক বইয়ের ক্রিপটন গ্রহের ‘সুপারম্যান’। নিউজিল্যান্ড শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা ২১ রানে জিতেছে, আর শ্রীলঙ্কার হাতে তখনো ২২ বল বাকি! ম্যাচ এতটা নাটকীয় হয়ে ওঠার নেপথ্যে সেই ‘সুপারম্যান’—পেরেরা!
২৫ ওভার শেষে উইকেটে এসেছিলেন পেরেরা। শ্রীলঙ্কার স্কোর তখন ৫ উইকেটে ১২১। জয়ের জন্য ১৫০ বলে তখনো ১৯৯ রানের দূরত্ব। শ্রীলঙ্কা এরপর ১৭৭ রান তুলেছে আর এই রানে পেরেরার একার অবদানই ১৪০! ৭৪ বলের ইনিংসে ওয়ানডেতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথে ১৩ ছক্কা আর ৮ চারে পেরেরা স্রেফ তাণ্ডব চালিয়েছেন কিউই বোলারদের ওপর। সেটিও এত অবলীলায় যে আউট (৪৭তম ওভার) হওয়ার আগের ওভারে অন্য প্রান্তে শেষ ব্যাটসম্যানটি থাকতেও টিম সাউদিকে মেরেছেন চার ছক্কা! আসলে ম্যাচের ফলটাই শুধু পেরেরার বিপক্ষে গেছে। নইলে এই ম্যাচ পেরেরার, তা বলতে জহুরি হওয়ার দরকার নেই।
কলিন মানরো (৮৭) আর রস টেলরের (৯০) সেঞ্চুরির সুবাস পাওয়া দুটি ইনিংস আর শেষ দিকে জিমি নিশামের ৩৭ বলে ৬৪ রানে দলীয় সংগ্রহ ৩১৯ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এই রান তাড়া করতে নেমে ইনিংসের অর্ধেক পথ পর্যন্ত পথ হারানোর দ্বারপ্রান্তেই ছিল লঙ্কানরা। ওপেনার গুনাতিলকা শুধু ৭১ রানের ইনিংস খেলেছেন। টপ অর্ডারে বাকিরা ব্যর্থ। পেরেরা ব্যাটিংয়ে এসে এই অর্ধেক পথ থেকে তাণ্ডব চালিয়ে হেঁটেছেন অলৌকিক কিছু ঘটানোর পথে। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি, ২৯৮ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু জমজমাট এক ম্যাচের রোমাঞ্চ ছড়িয়েছেন পেরেরা।
নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ে বল হাতে অতটা ভালো করতে পারেননি পেরেরা। ৭ ওভারে কোনো উইকেট না পেলেও রান দিয়েছেন ৬৯। রাগটা তাই বোধ হয় মনে মনে পুষে রেখেছিলেন। ব্যাটিংয়ে এসে তা এমনভাবে ঝেড়েছেন যে দলের নিশ্চিত হারকে সম্ভাব্য জয় বানিয়ে শেষ পর্যন্ত হতে হয়েছে ‘ট্র্যাজেডি কিং’। সাতে ব্যাটিংয়ে নেমে অষ্টম উইকেটে মালিঙ্গার সঙ্গে ৫০ বলে গড়েছেন ৭৫ রানের জুটি; এর মধ্যে পেরেরার একার অবদানই ৫৮। এরপর সান্দাকানের সঙ্গে আরও ৫১ রান আর শেষ উইকেটে নুয়ান প্রদীপের সঙ্গে ২০ বলে ৪৪! শেষ উইকেটে পেরেরার একার রানই ৩৮।
২৮ বলে ফিফটি তুলে নেওয়ার পর পেরেরা সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ৫৭ বলে। আক্ষেপ শুধু তাণ্ডব হলো, অলৌকিক কিছু করার পথে ‘সুপারম্যান’ হয়ে ওঠাও হলো—শুধু দলকে জয়টাই এনে দিতে পারলেন না পেরেরা। দ্বিতীয় ম্যাচে এই হারে তিন ম্যাচের সিরিজও হারাল শ্রীলঙ্কা।