'সারা রাত ঘুমাতে পারিনি'

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: প্রথম আলো
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: প্রথম আলো
বিষণ্ন মুখে বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ দল বিদেশ থেকে ফিরলে বিমানবন্দরে বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তা আর সংবাদকর্মীদের ভিড় আগেও হয়েছে। তবে আজ যেন সব ছাপিয়ে গিয়েছে। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে বাংলাদেশ দল শনিবার রাত ১১টার দিকে ঢাকায় এসে পৌঁছাতেই বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ এতটাই জনাকীর্ণ, এমন গিজগিজে ভিড় আগে দেখা গেছে কি না সন্দেহ।

এমনিতে ভ্রমণক্লান্তি, এবার ক্রিকেটাররা ফিরেছেন বিরাট মানসিক ধাক্কা নিয়ে। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে সন্ত্রাসী হামলা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। খেলোয়াড়েরা কেউ সংবাদমাধ্যমের সামনে আসতে চান না। তামিম ইকবাল তো সবার আগেই বেরিয়ে গেলেন। তবে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে।

বিসিবি মিডিয়া কমিটি প্রধান জালাল ইউনুস শুরুতেই শর্ত দিয়ে দিলেন, মাহমুদউল্লাহ শুধু বলবেন, কিন্তু তাঁকে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। খেলোয়াড়েরা আসলে কথা বলার অবস্থায় নেই। মাহমুদউল্লাহ এতটুকুই বললেন, ‘আমরা সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। যখন রুমে ছিলাম, একটা কথাই মনে হচ্ছিল যে আমরা কতটা ভাগ্যবান! বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যখন যোগাযোগ হলো তাঁরা আমাদের উদ্ধার করলেন। বিসিবিকে ধন্যবাদ, পাপন ভাইকে (নাজমুল হাসান) ধন্যবাদ। দেশবাসীকে বলব, আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন আমরা এই মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারি। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকেও ধন্যবাদ।’

বিমানবন্দরে মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো

মাহমুদউল্লাহর কথা শেষে পার্কিং এলাকায় একে একে বেরিয়ে এলেন দলের সব ক্রিকেটার। দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন কোচ স্টিভ রোডস ও কম্পিউটার বিশ্লেষক শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরন। দলের সবার বিধ্বস্ত মুখগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বাড়ি ফিরতে সবাই ভীষণ ব্যাকুল। ভিআইপি পার্কিং এলাকায় দেখা হলো মুমিনুল হকের সঙ্গে। বিষণ্ন মুখে মাহমুদউল্লাহর কথাগুলোই বলে গেলেন এ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ‘রাতে ঘুমাতে পারিনি। বারবার ভয়াবহ ঘটনা চোখে ভাসছে। বিশেষ করে ওই লোকটার গুলি করার ভিডিও দেখার পর আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কী বড় বিপদ থেকে যে আমরা রক্ষা পেয়েছি!’

ফিরেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ছবি: প্রথম আলো

নৃশংস এ ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়া বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন বিমানবন্দরে আসা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান, ‘২২ ঘণ্টার ভ্রমণ। এত লম্বা ভ্রমণে তাঁরা সবাই ক্লান্ত। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে অনেকেই। এখন ওদের সঙ্গে কথা বলার কিছু নেই। আমরা বলেছি, ‘বাসায় যাও। ঠান্ডা মাথায় নিজেদের মতো করে যেভাবে ভালো লাগে সময় কাটাও। খেলাধুলা নিয়ে এ মুহূর্তে কোনো চিন্তাভাবনা করবে না। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাও।’

ক্রাইস্টচার্চের সেই মসজিদের খুব কাছে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ছবি: প্রথম আলো

সময় সব বদলে দেবে। জীবনের নিয়মেই ক্রিকেটাররা এ ঘটনা পেছনে ফেলে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে চাঙা হয়ে উঠবেন। কিন্তু মনের ভেতর যে ভয়াল ছবি জমা হয়েছে, এই দুঃসহ স্মৃতি কি আর একেবারে মুছে ফেলা যাবে?