>কী নতুন বলে, কী পুরোনো বলে, আবারও দুর্দান্ত মোস্তাফিজকে দেখা যাচ্ছে এবারের বিপিএলে। প্রথমবারের মতো বিপিএলে অধিনায়কত্ব করতে এসেই মিরাজ যে মাশরাফি-সাকিব-মুশফিককে হারিয়ে দিলেন সেটির বড় কৃতিত্ব মোস্তাফিজেরই
মেহেদী হাসান মিরাজের মেজাজটা সপ্তমে চড়ে আছে। পরশু ম্যাচ জেতার আনন্দে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে মজা করতে গিয়ে গানের তালে নেচেছেন। হোটেলে নিজেদের রুমে মিরাজের এই দুরন্ত নৃত্য দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
একেবারেই ‘প্রাইভেট’ বিষয়, অথচ সেটিই এখন ‘পাবলিক’ হয়ে গেছে! মিরাজ এটি কিছুতেই মানতে পারছেন না,‘আমি তো সবাইকে দেখাতে নাচিনি, মোস্তাফিজের সঙ্গে মজা করছিলাম। আর অমনি এটা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ফেসবুকে। বিষয়টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি।'’
ভিডিও ছড়িয়ে পড়াটা ভালো না লাগলেও মিরাজ খুশি মোস্তাফিজকে নিয়ে। কী দুর্দান্ত বোলিংটাই না করছেন বাঁহাতি পেসার। মোস্তাফিজ কতটা দুর্দান্ত, সেটি নতুন করে বলার নেই। তবে মাঝে চোটাঘাতের ধাক্কা পেরিয়ে মোস্তাফিজ আবার স্বরূপে ফিরছেন, এটা শুধু মিরাজের দল রাজশাহী কিংসের কেন পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই তো সুখবর।
রাজশাহী এখনো পর্যন্ত যে ৫টি ম্যাচ জিতেছে অধিকাংশ বোলারদের সৌজন্যে। আর বোলিং বিভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন মোস্তাফিজ। উইকেট প্রাপ্তিতে (১১) খু্ব একটা এগিয়ে না থাকলেও ইকোনমি (৬.১২) বোলিংয়ে দলের সেরা বোলার তো অবশ্যই, পুরো টুর্নামেন্টে অন্তত ৭টি ম্যাচ খেলেছেন এমন বোলারের মধ্যে তাঁর চেয়ে শুধু শহীদ আফ্রিদিই এগিয়ে (৫.৮৯)।
নতুন বলে ভালো বোলিংয়ের পর ডেথ ওভারে নিয়মিতই ব্যাটসম্যানদের হন্তারক হয়ে আবির্ভূত হচ্ছেন মোস্তাফিজ। রাজশাহী যে লো-স্কোর গড়েও জিতছে সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব দিতে হবে ‘ফিজ’কেই। ক্রিস গেইল, রাইলি রুশো, অ্যালেক্স হেলস থাকতেও ১৩ জানুয়ারি রাজশাহীর দেওয়া ১৩৫ রান করতে পারেনি বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্সে। শেষ ওভারে ৯ রান ‘ডিফেন্ড’ করে ফেলেন মোস্তাফিজ।
১৬ জানুয়ারি সিলেটে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ নিয়েও ঢাকা যে রাজশাহীর দেওয়া ১৩৭ রান লক্ষ্য পেরোতে পারল না, সেটিতেও মোস্তাফিজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এদিন মোস্তাফিজ চাপটা দেন নতুন বলে, ইনিংসের শুরু এবং মাঝামাঝি দিকে। আর সবশেষ চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ম্যাচটি তো দেখেছেনই। চট্টগ্রামের ব্যাটিংবান্ধব উইকেটে রাজশাহীর দেওয়া ১৯৯ রানের লক্ষ্য প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিল চিটাগং। উইকেটে তখন স্বাগতিকদের সেট ব্যাটসম্যান সিকান্দার রাজা। দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে রাজাকে ফিরিয়ে শেষ ওভারে চিটাগংয়ের ১৩ রান করাটা অসম্ভব করে ফেললেন মোস্তাফিজ। শেষ ওভারে ৫ রানে ২ উইকেট নেওয়া ফিজের হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
প্রথমবারের মতো বিপিএলে অধিনায়কত্ব করতে এসেই মিরাজ যে মাশরাফি-সাকিব-মুশফিককে হারিয়ে দিলেন, সেটিতে বড় ধন্যবাদ দিচ্ছেন মোস্তাফিজকে, ‘ও তো কিং ফিশ, বোঝেন নাই? বড় মাছ। সাগরের বড় মাছ কোনটা? তিমি মাছ। বড় বড় শিকার করে। ও হচ্ছে ডেথ ওভারের কিং ফিশ, নতুন বলেরও কিং ফিশ। ও এবার অনেক সিরিয়াস বোলিং করছে। অনেক মাথা খাটিয়ে বল করছে। ওর ভাবনার সঙ্গে আমার ভাবনায় অনেক মিলে যাচ্ছে। এ কারণেই আমরা সাফল্য পাচ্ছি।’
যে বোলার এভাবে দলকে জিতিয়ে দিচ্ছেন অধিনায়ক তাঁকে একটু নাচ দেখিয়ে খুশি করতে চেয়েছিলেন। অথচ বেরসিক মানুষটা মিরাজ-মোস্তাফিজের এই ‘প্রাইভেট’ জিনিস ‘পাবলিক’ করে দিলেন!