বাংলাদেশ শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের সময়টা একেবারেই ভালো যাচ্ছে না ইংল্যান্ডে। ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড সিরিজ ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচেই হেরেছে তারা। এমন বাজে সময়ে অনুপ্রেরণাটা খুব প্রয়োজন তাদের। ক্রিকেটে জাতীয় পতাকার অন্য প্রতিনিধিরা এ প্রেরণা মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান কিংবা মাহমুদউল্লাহদের কাছ থেকেই পেতে পারে!
এটা কেবল কথার কথা নয়। একজন মানুষের বিশ্বাস। তিনি একজন ইংরেজ। নাম ইয়ান মার্টিন। তিনি শারীরিক কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত। নিউরো মাসকুলার রোগটি এমন, এটি একজন প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা মানুষকেও চলৎশক্তিহীন অচল পয়সায় পরিণত করতে পারে। কিন্তু মার্টিন মনে-প্রাণেই বিশ্বাস করেন সাকিব-মাশরাফিদের দেখেই নিজেদের আরও পরিণত করে তুলতে পারে বাংলাদেশের তরুণ শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা।
এ মানুষটি এক সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে চাকরি করতেন। মাথা উঁচু করে চলাই তাঁর স্বভাব। কিন্তু নিউরো মাসকুলার রোগ তাঁকে অচল বানিয়ে দিয়েছে। ২৫ বছর আগে অসুস্থতার কারণেই নৌবাহিনীর চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছিল তাঁকে। ক্রিকেটকে খুব ভালোবাসতেন। ক্রিকেট খেলতেন। হুইলচেয়ারে জীবন বাঁধা পড়ে যাওয়ার পরও তিনি ক্রিকেট নিয়েই আছেন। ইংলিশ ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি উইংয়ের প্রধান হিসেবে তাঁর ব্রত এখন শারীরিক প্রতিবন্ধীরা যেন ক্রিকেট-আনন্দে মেতে থাকতে পারে।
ইংল্যান্ডে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ঘরোয়া ক্রিকেট আগেই চালু হয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটটাও তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। ইংল্যান্ডের উস্টারশায়ারে যে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট সিরিজ চলছে, এটা তাঁর বৃহত্তম স্বপ্নের একটি ক্ষুদ্র কণামাত্র। আজ উস্টারের ওল্ড এলিজাবেথান ক্রিকেট ক্লাবে বাংলাদেশ ও ভারত ম্যাচের এক ফাঁকে তিনি এ ধরনের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নিয়ে তাঁর আশার কথাই শুনিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সই তাঁর প্রমাণ। তবে আমি মনে করি বাংলাদেশের শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের তরুণ ক্রিকেটাররা সাকিব আল হাসান কিংবা মাশরাফি বিন মুর্তজাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিতেই পারে।’
শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে বাংলাদেশের উন্নতির সাক্ষী তিনি। প্রথম আলোকে সেটিই জানিয়েছেন, ‘২০১৫ সালে প্রথম দেখাতেই ইংল্যান্ড শারীরিক প্রতিবন্ধী দলকে হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটে বাংলাদেশ তখন মাত্র শুরু করেছে। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে আমি বাংলাদেশের উন্নতি দেখেছি। গত বছর ইংল্যান্ডে তারা এসে ২০১৬ সালের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলেছে। সুতরাং এ দলের সম্ভাবনা আছে।’
ইংল্যান্ডে ফিজিক্যাল ডিজঅ্যাবিলিটি ক্রিকেটের মূল কারিগর তিনিই। স্বপ্ন দেখেন প্যারা অলিম্পিকের মতোই শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্রিকেটটা হয়ে উঠবে খুব বড় ক্ষেত্র। টেস্ট খেলুড়ে সব দেশই এগিয়ে আসবে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে। প্যারা অলিম্পিকের মতোই ক্রিকেটেও শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে গর্বিত হবে। দেশও গর্ব করবে তাঁর এই সব ক্রিকেটারদের নিয়ে।
এমন কিছুর জন্য সাকিব-মাশরাফিদের প্রেরণা হয়ে ওঠাটা খুবই জরুরি। মার্টিন ঠিকই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছেন।