সকালে রাওয়ালপিন্ডির আবহাওয়াটা এত চমৎকার! শীতের তীব্রতা এখানে যথেষ্ট। রাতে তাপমাত্রা নেমে আসে ৫-৬ ডিগ্রিতে। কিন্তু দিনে মাথার ওপর সূর্য থাকলে শীত আর জেঁকে বসে না। ঝাঁজাল রোদ্দুর হয়ে যায় বেশ মিঠে।
এমনই মিষ্টি রোদে কাল রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট শুরু হবে কিনা, বলার উপায় নেই! আজ সকালেও পিন্ডির আকাশে ছিল ঝকঝকে রোদ্দুর। দুপুরে সেটি হারিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে! মেঘলা আবহাওয়া, তার মানে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে? সংশয় জাগছে এ কারণেই, গত নভেম্বরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের টেস্টটি বৃষ্টিবাধায় ড্র হয়েছে। খেলা হয়নি পাঁচ দিনের প্রায় তিন দিনই।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস অবশ্য বলছে, আকাশ ক্ষণে ক্ষণে মেঘলা থাকলেও আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টির কোনো শঙ্কা নেই। তবে স্থানীয় সাংবাদিক রোজিনা আলী সতর্ক করছেন রাওয়ালপিন্ডির আবহাওয়াকে বিশ্বাস করতে! পাকিস্তানের ‘চ্যানেল ২৪’-এ কাজ করা এ নারী সাংবাদিক বলছেন, ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেটে যেমন আনপ্রেডিক্টেবল, পিন্ডির আবহাওয়াও তেমন। কোনো বিশ্বাস নেই! সকাল কী রোদ, দুপুরে ঝরঝরিয়ে নামে বৃষ্টি।’
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলটা সবুজ পাহাড়ে ঘেরা। এখানে শীতের তীব্রতা যেমন বেশি, আবহাওয়াও বড় অননুমেয়! তবে রোজিনাই জানালেন, এখানকার জলবায়ুতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে গত এক যুগে। আগে শীত শুরু হতো সেপ্টেম্বর থেকে, থাকত প্রায় মার্চ পর্যন্ত। ছয় মাস গ্রীষ্ম, ছয় মাস শীত। অথচ এখন নাকি শীত শুরু হয় ডিসেম্বরে, চলে যায় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। শীতকালের দৈর্ঘ্য তিন মাসও নয়।
ক্রিকেটের সঙ্গে আবহাওয়া-জলবায়ুর বরাবরই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আজ সকালে যে ঝলমলে রোদ দেখা গেল, কাল যদি সেটা না থাকে, আকাশ গোমড়া থাকে—টস জয়ী দলের আগে ব্যাটিং করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কন্ডিশনের সুবিধা নিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাভিশ্বাস তুলতে যেকোনো অধিনায়ক চাইবেন তাঁর ফাস্ট বোলারদের হাতে বল তুলে দিতে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক অবশ্য টস নিয়ে কিছু বলতে চাইলেন না, ‘উইকেট দেখেছি। কাল টস জিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জানবেন আগে আমরা কী করব।’
রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেছে বাংলাদেশ। উইকেট-কন্ডিশন যেমনই হোক, মমিনুল আশাবাদী তারা পারবেন মানিয়ে নিতে, ‘যে দেশে যাবেন সে দেশের কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় কন্ডিশনটা খুব ভালো। একটু ঠান্ডা আছে। তবে সেটা ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারব।’
মানিয়ে নেওয়ার এক দিনই সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। এভাবে কখনো টেস্ট খেলা হয়নি মুমিনুলদের। কিন্তু বিশেষ প্রেক্ষাপটে আয়োজিত এই টেস্টে এটিকে অজুহাত দেখানোর সুযোগও নেই বাংলাদেশের। নিজেদের সবশেষ পাঁচ টেস্টের প্রতিটিতে হারা মুমিনুলদের অচলায়তন ভাঙতে হবে তাই অনেক প্রতিকূলতা ডিঙিয়েই। কাজটা কঠিন হলেও অসম্ভব নিশ্চয়ই নয়। পাকিস্তানি সাংবাদিক রোজিনা যেটা বললেন, বাংলাদেশ অননুমেয়! আসলেই, যখনই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে আশা কমে যায়, তখন তারা দুর্দান্ত কিছু করে ফেলে। গত নভেম্বরে কঠিন সময়ে দিল্লিতে ভারতের বিপক্ষে জয়টা এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।