>
- আট মাস পর ঘরের মাঠে সিরিজ
- সাকিব-তামিমকে ছাড়া তাতে কেমন করবে বাংলাদেশ?
- মাশরাফি বিন মুর্তজার উত্তরেও ছিল না কোনো নতুনত্ব
- সিরিজে জিম্বাবুয়েকেই ফেবারিট বলছেন মাসাকাদজা!
প্রসঙ্গ অনেকই ছিল। আট মাস পর ঘরের মাঠে সিরিজ। সাকিব-তামিমকে ছাড়া তাতে কেমন করবে বাংলাদেশ? উইকেট, দল—সিরিজের ব্যাপারে নিয়মিত কৌতূহলগুলো তো আছেই। সিরিজ শুরুর সংবাদ সম্মেলনে কাল মাশরাফি বিন মুর্তজার উত্তরেও ছিল না কোনো নতুনত্ব। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ ১০টি ওয়ানডে বাংলাদেশ দল খেলেছে ঘরের মাঠে এবং দশটিতেই জয়। তাদের বিপক্ষে আরেকটি সিরিজের আগে মাশরাফিই বা নতুন কী বলবেন!
তা ছাড়া শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানকে হারিয়ে সদ্য এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে আসা দলের জন্য জিম্বাবুয়ের আসলে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হওয়ার কথা নয়। ওই ফাইনালে হারলেও, সেটিও তো শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করে!
এদিকে জিম্বাবুয়ের সাম্প্রতিক অতীতটাও নিদারুণ হতাশায় ভরা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সবই হেরে এসেছে দলটা। সেখান থেকে ‘ইউ টার্ন’ নিয়ে আজ থেকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু তিন ওয়ানডের সিরিজে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার দল বিরাট কিছু করে ফেলবে, এই বাজি ধরার লোক কমই আছে। অবশ্য যদি একজনও বাজিটা ধরেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক নিজে। সিরিজে জিম্বাবুয়েকেই ফেবারিট বলছেন মাসাকাদজা!
মাশরাফি বিন মুর্তজা কাল খুব সাদামাটাভাবে বললেন সিরিজে তাঁর দলের ‘চ্যালেঞ্জের’ কথা, ‘সবার প্রত্যাশা, আমরা জিতব। জেতার আশাই করছে সবাই। সেটা খুবই স্বাভাবিক। অন্য দলের সঙ্গে যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলি বা গত এশিয়া কাপে যেভাবে খেলেছি, সেটাই থাকবে।’ তবে সিরিজের আগে কোনো প্রতিপক্ষকেই বেশি হেলাফেলা করা ঠিক নয়। প্রতিপক্ষের মধ্যে ন্যূনতম শক্তিও থেকে থাকলে সেটিকেই সামনে দাঁড় করাতে হয় নিজেদের অনুপ্রাণিত করতে। নয়তো দলটার সঙ্গে খেলতে নামারই যে কোনো অর্থ থাকে না! মাশরাফিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘ওদের প্রায় সব অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ফিরে এসেছে। আর দেশের বাইরে জিম্বাবুয়ে দলের সবচেয়ে ভালো রেকর্ড বাংলাদেশে। সুতরাং আমাদের এক শ ভাগ দিয়েই খেলতে হবে। জিতলে সবাই বলবে, এটাই হওয়ার কথা ছিল। হারলে কিন্তু ভিন্ন কথা হবে।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই একটাই ভয় বাংলাদেশের। পচা শামুকে যদি পা কেটে যায়! ওয়ানডের বাংলাদেশকে এখন সব দল সমীহ করে। সেখানে জিম্বাবুয়ের কাছে অঘটনের শিকার মানে তো লজ্জার চূড়ান্ত। আর মাঠে নামার পর প্রতিপক্ষে জিম্বাবুয়ে যা, অস্ট্রেলিয়াও তা-ই। যার বিপক্ষেই খেলুন, সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট, হ্যাটট্রিক সবই যোগ হবে ব্যক্তিগত অর্জনের খাতায়। সিরিজের জন্য দলকে অনুপ্রাণিত করতে এসবই সামনে আনছেন মাশরাফি, ‘এমন নয় যে, জিম্বাবুয়ের কাছে আমরা কখনো হারিনি বা হারব না। ওদেরও অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছে। তা ছাড়া এখানে কেউ সেঞ্চুরি করলে সেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেঞ্চুরি হিসেবেই গণ্য হবে, কেউ পাঁচ উইকেট পেলে তা পাঁচ উইকেট বলেই গণ্য হবে। যে প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই খেলি না কেন, এগুলো করা কিন্তু কঠিন।’
২০১৯ বিশ্বকাপের আগের সিরিজগুলো থেকেই যেহেতু বিশ্বকাপের দল নির্বাচন করা হবে, জিম্বাবুয়ে সিরিজটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হচ্ছে সে কারণেও। জিম্বাবুয়ে তাদের সেরা দল পাঠানোয় বাংলাদেশের জন্য আরও ভালো হলো মনে করেন মাশরাফি, ‘আমি বলব, আমাদের জন্য সিরিজটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বকাপের আগে এমন চারটি সিরিজ আছে আমাদের প্রস্তুত হওয়ার জন্য। আমাদের জন্য ভালো হয়েছে যে জিম্বাবুয়ে তাদের সেরা দলটা এখানে পাঠিয়েছে।’
যে যাই বলুক, মাসাকাদজার চোখে যে এই সিরিজে জিম্বাবুয়েই এগিয়ে তার কারণও কিন্তু ওটাই। জানুয়ারির ত্রিদেশীয় সিরিজে তারা যে দলটা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিল, সেই দলে শন উইলিয়ামস ছিলেন না। সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাঁর সঙ্গে দলে ফিরেছেন ব্রেন্ডন টেলর ও ক্রেইগ আরভিন। আর বাংলাদেশ সিরিজের দলে প্রথমে না থাকা সিকান্দার রাজাও যুক্ত হয়েছেন পরে। মাসাকাদজার কথায় স্বস্তি, ‘সবাইকে হাতে পাওয়াটা দলের জন্য দারুণ। চোটে পড়া গ্রায়েম ক্রেমার ছাড়া সবাই-ই আছে দলে।’
আর এই স্বস্তিই তাঁকে দিচ্ছে নিজেদের ফেবারিট বলার অধিকার। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ দলের ক্রমোন্নতিটা মাথায় রেখেও বললেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের প্রায়ই খেলতে হয়, কাজেই ভালো সুযোগ আছে আমাদের। ফেবারিটের কথা বললে আমি জিম্বাবুয়ের কথাই বলব।’
আর কিছুতে না হোক, মাসাকাদজার কথায় আছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক সিরিজের আভাস। মাশরাফিদের জন্য জিম্বাবুয়েকে হেলাফেলা করে না নেওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে। জিম্বাবুয়েও তো খেলতে এসেছে বাংলাদেশে!