>বাংলাদেশের মেয়েরা কুয়ালালামপুরে আজ ইতিহাস গড়েছেন। ভারতকে হারিয়ে এশিয়া কাপ জিতেছেন। যাঁর সফল নেতৃত্বে এই বিরাট অর্জন, বিকেলে কথা হলো সালমা খাতুনের সঙ্গে। কুয়ালালামপুর থেকে মুঠোফোনে বাংলাদেশ মেয়েদের অধিনায়ক জানালেন, কোন ছকে তাঁরা বধ করেছেন ভারতকে। এটি শুধু শিরোপা জয়ই নয়, সালমা বললেন, এটি বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেটের বড় বাঁকবদলও।
* মেয়েদের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এল বড় কোনো শিরোপা। এত বড় সাফল্যের পর নিশ্চয়ই আনন্দের হিল্লোল বইছে পুরো দলে!
সালমা খাতুন: অবশ্যই এটা অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা একটা বড় শিরোপা জিতেছি। এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। এভাবে জিতব অনেকে বোধ হয় ভাবতেও পারেনি। কিন্তু সেই অভাবনীয় ঘটনাটাই আমরা ঘটিয়েছি। দেশবাসীকে এটা আমাদের ঈদ উপহার!
* জেতার পর আপনাকে কাঁদতে দেখা গেল...
সালমা: আনন্দটা অনেক বেশি ছিল ওই সময়। এটাকে বলতে পারেন আনন্দাশ্রু। আমার নেতৃত্বে অনেক ম্যাচ জিতেছে দল। তবে এত বড় অর্জন আগে কখনো হয়নি। আবেগটা আসলে ধরে রাখতে পারিনি! এটা আমরা ক্যারিয়ারে তো অবশ্যই, আমাদের দেশের ক্রিকেটেরই সবচেয়ে বড় অর্জন।
* ভারত অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এশিয়া কাপ তো নিজেদের সম্পত্তিই বানিয়ে ফেলেছিল তারা! প্রতিবারই তারা চ্যাম্পিয়ন। আপনারা প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলতে নামলেন। ইতিহাস-রেকর্ড-অভিজ্ঞতা—কিছুই আপনাদের পক্ষে ছিল না। তবুও কতটা আশাবাদী ছিলেন এই ফাইনাল নিয়ে?
সালমা: আমরা খেলোয়াড়েরা অনেক আশাবাদী ছিলাম। এই টুর্নামেন্টেই ওদের একবার হারিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল। দেশ থেকে বলে এসেছিলাম, ফাইনাল খেলব। সেটা পেরেছি। ফাইনালে আমাদের কিন্তু হারানোর কিছু ছিল না। বরং ওদের হারানোর ছিল অনেক। ওরা সব সময়ই এশিয়া কাপ জিতে আসছে। ওরা অনেক চাপে ছিল, আমাদের কোনো চাপ ছিল না।
* ফাইনাল জিততে কোন বিষয়টি বেশি কাজে করেছে?
সালমা: টুর্নামেন্টজুড়ে আমরা তিন বিভাগেই ভালো করেছি। সেটির ধারাবাহিকতা ফাইনালেও ধরে রেখেছি। আজ ব্যাটিংয়ের কথা বিশেষভাবে বলতে হবে। বোলিংটাও অসাধারণ ছিল। টুর্নামেন্টে নিজেদের আগের ম্যাচগুলোর তুলনায় আজ ফিল্ডিংও অনেক ভালো হয়েছে। বলতে পারেন ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিনটাতেই ভালো করেছি বলেই ফল আমাদের পক্ষে এসেছে।
* আজ মাঠে নামার আগে আপনাদের মূল পরিকল্পনা ছিল কী?
সালমা: আমাদের পরিকল্পনা ছিল টস জিতলে ফিল্ডিং করব। এই টুর্নামেন্টে আগে যে ম্যাচটা ভারতের বিপক্ষে জিতেছি, সেটিতে রান তাড়া করেই জিতেছিলাম। আমাদের লক্ষ্যই ছিল ভালো বোলিং করে যত অল্প রানে ওদের আটকাতে পারি। আমাদের যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
* ভারতকে যখন ১১২ রানে আটকে ফেললেন, তখন কতটা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে লক্ষ্যটা টপকে যেতে পারবেন? ফাইনাল মানে তো স্নায়ুরও বড় পরীক্ষা। এত বড় ম্যাচে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের দেওয়া ১১২ রান তাড়া করা নিশ্চয়ই অনেক কঠিন।
সালমা: টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। যখন আস্কিং রানরেট বেড়ে গেল, তখনো আত্মবিশ্বাস ছিল এই ম্যাচটা জিতব। যখন ১ ওভারে ৯ রান দরকার, তখনো সবাই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে হয়ে যাবে। টি-টোয়েন্টিতে এটা খুব সম্ভব।
* বাংলাদেশ ছেলেদের দল এমন অনেক শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে শেষ দিকে স্নায়ুর সঙ্গে পেরে ওঠে না। আপনারা অনেক ঠান্ডা মাথায় সেটি পেরেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
সালমা: যখন ১ বলে ২ রান দরকার, তখন আমাদের পরিকল্পনা ছিল প্যাডে লাগলেই রান নেব। যেভাবে হোক ২ রান করতে হবে। এর বাইরে অন্য কিছু ভাবিনি।
* এই সাফল্যকে মেয়েদের ক্রিকেটের বড় বাঁকবদল বলা যায় নিশ্চয়ই?
সালমা: অবশ্যই বড় বাঁকবদল। সামনে আমাদের আরও সিরিজ আছে। আমরা চাইব সেগুলোতেও এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। তাহলে আমরা আরও ভালো অবস্থানে যেতে পারব আশা করি।
* এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এখন কী করণীয়?
সালমা: আমরা এই মুহূর্তে যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি, এটা থাকলে ভবিষ্যতেও ভালো করা সম্ভব। আমি মনে করি, সুযোগ-সুবিধাটাই গুরুত্বপূর্ণ। এটা যত বেশি পাওয়া যাবে, তত ভালো করার সুযোগ তৈরি হবে।