আফগান প্রিমিয়ার লিগে কাল কোনো রান না করেই ফিরেছেন শহীদ আফ্রিদি। পাকিস্তানের সাবেক এই অলরাউন্ডার প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেই ‘ডাক’ মেরেছেন
শহীদ আফ্রিদি ‘ডাক’ মারার আর সময় পেলেন না। কাল ছিল বিশ্ব ডিম দিবস। আর কালই তাঁকে কিনা ডাক মারতে হলো!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তর রসিকতা চলছে। আফ্রিদির এই ডাক নাকি ডিম দিবসের শ্রদ্ধাঞ্জলি! কথাটা শুনে পাকিস্তানের সাবেক এই অলরাউন্ডারের মন খারাপ হতেই পারে। হাজার হোক পাকিস্তানের সেরা হার্ড হিটার অলরাউন্ডারদের কাতারে তাঁর নামটা তো থাকে। আবার ডাক মারতে পছন্দ (!) করেন, এমন ক্রিকেটারদের তালিকায়ও আফ্রিদির নামটা ওপরের দিকে। বিশ্বাস করুন না আর নাই করুন, দুনিয়ার এতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে আফ্রিদির মতো ডাক মারার রেকর্ড আর কারও আছে কি না, তা গবেষণার বিষয়। কাল আফগান প্রিমিয়ার লিগ (এপিএল) এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। পাকতিয়া প্যানথার্স জিতলেও দলটির স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করতে পারেননি আফ্রিদি।
মারকুটে ব্যাটসম্যান হওয়ায় এমনিতেই অনেক ঝুঁকি নেন পাকিস্তানের সাবেক এই অলরাউন্ডার। তাতে ক্যারিয়ারজুড়ে প্রচুর ‘ডাক’ মারতে হয়েছে। ওয়ানডেতে একসময় দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডধারী এ ব্যাটসম্যানকে নিন্দুকেরা বলেন ‘ডাকমাস্টার’। অত্যুক্তি নয়, একবার পরিসংখ্যানটা দেখুন—ওয়ানডেতে সর্বোচ্চসংখ্যক ডাক মারার তালিকায় আফ্রিদির অবস্থান সনাথ জয়াসুরিয়ার (৩৪) পরই। অবসর নেওয়ার আগে এই সংস্করণে ৩৯৮ ম্যাচে আফ্রিদির ‘ডাক’সংখ্যা ৩০, যা তাঁর অপরাজিত ইনিংসসংখ্যার (২৭) চেয়েও বেশি।
টি-টোয়েন্টিতেও ডাকসংখ্যায় আফ্রিদির অবস্থান ওপরের দিকে। এই সংস্করণের আন্তর্জাতিক মঞ্চে ৮টি ডাক মেরেছেন আফ্রিদি। আর ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ২১টি ডাক—সব মিলিয়ে এই সংস্করণে ২৯টি ডাক মেরেছেন তিনি। টেস্টে ক্যারিয়ার দীর্ঘ না হওয়ায় এই সংস্করণে তাঁর ডাক খুব বেশি নেই। ২৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে ছয়বার কোনো রান না করেই ফিরেছেন আফ্রিদি। অর্থাৎ টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফ্রিদির ‘ডাক’সংখ্যা ৪৪।
না, তিন সংস্করণ মিলিয়ে আফ্রিদির এই ডাকসংখ্যা কোনো রেকর্ড নয়। তবে রেকর্ডটি যাঁর, সেই মুত্তিয়া মুরালিধরনকে আফ্রিদি একটি জায়গায় পেছনে ফেলেছেন। রেকর্ড ৫৯টি ডাক মারা মুরালিধরন ক্যারিয়ারজুড়ে ১১৯ বার অপরাজিত ছিলেন। সেটি বোধ হয় একেবারে শেষের দিকে ব্যাটিংয়ে নামার জন্য। তারপরও পার্থক্যটা চোখে পড়ার মতো। কেননা, আফ্রিদি এই তিন সংস্করণে অপরাজিত ছিলেন ৪০ ম্যাচে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আফ্রিদির অপরাজিত থাকার ইনিংসসংখ্যার চেয়ে ডাকসংখ্যা বেশি। মারকুটে ব্যাটসম্যান বলেই হয়তো তিনি বেশিক্ষণ টিকতে পারেন না উইকেটে। কিন্তু মুরালির ১১৯ আর আফ্রিদির ৪০—পার্থক্যটা তাঁর সবচেয়ে পাঁড় ভক্তকেও ভাবাতে বাধ্য।
কাল আফগান লিগের ডাক হিসাবে আনলে পেশাদার ক্রিকেটে আফ্রিদির মোট ডাকসংখ্যা দাঁড়ায় ৮১। তাঁর এই ডাকপ্রীতির পথচলায় আরেকটি ব্যাপার চোখে পড়ার মতো। দুনিয়ার কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে তিনি ডাক মারেননি! মোটামুটি যেখানে খেলতে গেছেন, ডাক তাঁর পিছু ছাড়েনি। ভারতের আইপিএল, বাংলাদেশের বিপিএল, পাকিস্তানের পিসিএল, শ্রীলঙ্কার এসএলপিএল, অস্ট্রেলিয়ার বিগ ব্যাশ আর ইংল্যান্ডের টি–টোয়েন্টিতে ডাক মারার অনাকাঙ্ক্ষিত নজির গড়েছেন আফ্রিদি। আফগান প্রিমিয়ার লিগ (এপিএল) এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন। এমনকি আইস ক্রিকেটেও ডাক মেরেছেন আফ্রিদি, আর জন্মদিনেও। জন্মদিনে ডাক মারাটা নতুন কিছু না হলেও এতগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দুনিয়ার আর কোনো ক্রিকেটার ডাক মেরেছেন কি না, তা গবেষণার বিষয়।
ব্যাট হাতে কাল ভালো করতে না পারলেও বল হাতে কিন্তু দারুণ পারফর্ম করেছেন আফ্রিদি। পাকতিয়া প্যানথার্সের ৯ রানের জয়ে আফ্রিদির বোলিং ফিগার ৪-০-১৩-১। বল হাতে একেবারে খারাপ করছেন না তিনি। এবার শুধু ব্যাটে ঝড় তোলার অপেক্ষা।
শহীদ আফ্রিদি ডাকনামা:
| ম্যাচ | ডাকসংখ্যা | ইনিংস |
টেষ্ট | ২৭ | ৬ | ৪৮ |
ওয়ানডে | ৩৯৮ | ৩০ | ৩৬৯ |
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি | ৯৯ | ৮ | ৯১ |
টি–টোয়েন্টি | ২৭৯ | ২১ | ২৪২ |