>২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টিতে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকায় উপমহাদেশের আধিপত্যই বেশি
‘পপকর্ন’ ক্রিকেটের জন্ম ইংল্যান্ডে। চিনতে পারলেন না বুঝি? টি-টোয়েন্টি—টেরি জেনারের চোখে যা ‘পপকর্ন ক্রিকেট’। আদতে মারমার কাটকাট কুড়মুড়ে মুচমুচে ক্রিকেট। টেস্টের তুলনায় মুখে পুরে চিবুনোর আগেই শেষ! সে যাকগে, এই খেলার জন্মের পর পণ্ডিতরা নিদান দিয়েছিলেন, উপমহাদেশের বাইরের ব্যাটসম্যানেরাই বেশি ভালো করবে। সেটি বোধ হয় উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের কবজি ও টাইমিং-নির্ভর ব্যাটিংয়ের জন্য। সে তুলনায় ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা অন্যান্য দেশের ব্যাটসম্যানদের পেশিশক্তির ওপর নির্ভরতা বেশি। খেলাটা যেহেতু ব্যাটসম্যানদের, আর ছক্কা মারতে পেশিশক্তিই তো বেশি কাজে লাগার কথা। ভুল! অন্তত এই বর্ষপঞ্জিতে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকের তালিকাটা দেখলে কথাটা ভুল বলেই মনে হয়।
১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি সিনেমা ‘শোলে’ তো দেখেছেন? ‘গব্বর সিং’-কে নিশ্চয়ই মনে আছে? চরিত্রটিকে অমরত্ব দিয়েছেন আমজাদ খান। ক্রিকেটের ময়দানেও তেমনি আছেন এক গব্বর সিং। রুপালী পর্দার সেই গব্বর সিংয়ের মতোই তাঁর পাকানো গোঁফ। ওই চরিত্রটির মতো বাইশ গজে তিনিও সমান ভয়ংকর। এতটাই যে এ বছর টি-টোয়েন্টিতে নিজের এই তকমাকে ‘অমরত্ব’ দিয়েছেন—তিনি শিখর ধাওয়ান।
‘গব্বর’খ্যাত ধাওয়ানকে এ বছরের টি-টোয়েন্টি স্মরণে রাখবে একটি রেকর্ডের জন্য। কেউ ভাঙতে না পারলে সামনের দিন গুলিতেও তাঁকে ভুলে যাওয়ার উপায় নেই। অদূর ভবিষ্যতে টি-টোয়েন্টির রসিকজনদের আড্ডায় হয়তো গল্প উঠবে, সেই বছরটা (২০১৮) ছিল গব্বরের! নিশ্চয়ই ভাবছেন, এত ভণিতা করে ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার কি দরকার? সোজা করে বললেই তো হয়! আচ্ছা, সোজা কথাটা হলো, টি-টোয়েন্টিতে এ বছর সবচেয়ে বেশি রান ধাওয়ানের। এতটাই বেশি যে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেছে।
গত কয়েক বছরে ব্যাটিংয়ে কোনো রেকর্ড মানেই তো বিরাট কোহলি। চোখ বুঁজে অনেকেই তা ধরে নেন। হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টিতে এক বর্ষপঞ্জিতে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটি কোহলির দখলেই ছিল। ২০১৬ সালে ১৫ ম্যাচে ১০৬.৮৩ গড়ে ৬৪১ রান তুলেছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক। এ বছর ধাওয়ানের ব্যাটিং গড় কোহলির সেই অবিশ্বাস্য গড়ের ধারেকাছেও নেই। তবে রানে টপকে গেছেন। এ বছর ১৮ ম্যাচ খেলে ৪০.৫২ গড়ে ৬৮৯ রান তুলেছেন ভারতীয় এই ওপেনার। টি-টোয়েন্টিতে এক বর্ষপঞ্জিতে আর কোনো ব্যাটসম্যানই এত রান তুলতে পারেননি।
এ বছর ধাওয়ানের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলেছেন টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ওপেনিং সতীর্থ রোহিত শর্মা। ‘হিটম্যান’ এ বছর দুটি সেঞ্চুরি পেলেও ছয় শ রানের কোটা ছুঁতে পারেননি। ১৯ ম্যাচে ৩৬.৮৭ গড়ে রান তুলেছেন ৫৯০। স্ট্রাইক রেটে ‘গব্বর’ ও ‘হিটম্যান’ দুজনেই সমান—১৪৭!
রোহিতের পরই রয়েছেন তাঁর সীমান্ত-প্রতিবেশী। পাকিস্তানের ফখর জামান। ১৭ ম্যাচে ৩৩.৮৮ গড়ে তাঁর রানসংখ্যা ৫৭৬। রানসংখ্যায় তৃতীয় হলেও পাকিস্তানের এই ওপেনার কিন্তু স্ট্রাইক রেটে (১৪৮.৮৩) টেক্কা দিয়েছেন দুই ভারতীয় ওপেনারকে। শীর্ষ পাঁচে রান তোলার গড়ে সবাইকে টেক্কা দিয়েছেন আরেক পাকিস্তানি—বাবর আজম। ১২ ম্যাচে ৬২.৫৫ গড়ে বাবরের রানসংখ্যা ৫৬৩। এই শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের কিন্তু পেশিশক্তির চেয়ে টাইমিংয়ে ওপর ভরসাটা বেশি। অ্যারন ফিঞ্চ যেখানে ঠিক উল্টো হলেও উঠে এসেছেন শীর্ষ পাঁচে। অস্ট্রেলিয়ার এই ওপেনার ১৭ ম্যাচে ৪০.৮৪ গড়ে ৫৩১ রান নিয়ে পঞ্চম। মজার ব্যাপার, শীর্ষ পাঁচে থাকা এই পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে চারজনই ওপেনার! আবার শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানই উপমহাদেশের। দাপটটা বোঝা গেল?
শীর্ষ ছয় থেকে দশ—এই পাঁচজনের মধ্যে আবার উপমহাদেশের ব্যাটসম্যান মোটে একজন—মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৬ ম্যাচে ৩৪.৫০ গড়ে ৪১৪ রান নিয়ে নয়ে বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। বাকি জায়গাগুলো যেন ট্রান্স-তাসমানিয়ান মিলনমেলা! ছয় ও সাতে যথাক্রমে দুই অস্ট্রেলিয়ান, ডি আর্চি শর্ট (১৮ ম্যাচে ৫১৫) আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১৯ ম্যাচে ৫০৬)। আটে নিউজিল্যান্ডের কলিন মানরো ১২ ম্যাচে ৫০০, নয় তো গেল আর দশে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল (১০ ম্যাচে ৪১০)।
২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টির শীর্ষ পাঁচ ব্যাটসম্যান:
ব্যাটসম্যান | ম্যাচ | ইনিংস | রান | গড় | সর্বোচ্চ | স্ট্রাইক রেট |
শিখর ধাওয়ান(ভারত) | ১৮ | ১৭ | ৬৮৯ | ৪০.৫২ | ৯২ | ১৪৭.২২ |
রোহিত শর্মা (ভারত) | ১৯ | ১৮ | ৫৯০ | ৩৬.৮৭ | ১১১* | ১৪৭.৫০ |
ফখর জামান (পাকিস্তান) | ১৭ | ১৭ | ৫৭৬ | ৩৩.৮৮ | ৯১ | ১৪৮.৮৩ |
বাবর আজম (পাকিস্তান) | ১২ | ১২ | ৫৬৩ | ৬২.৫৫ | ৯৭ | ১২৬.৫১ |
অ্যারন ফিঞ্চ (অস্ট্রেলিয়া) | ১৭ | ১৭ | ৫৩১ | ৪০.৮৪ | ১৭২ | ১৭৬.৪১ |