>ইমাম উল হকের সবচেয়ে বড় অসুবিধা তাঁর পরিচয়। ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা বলে প্রতিনিয়ত সমালোচনা শুনতে হয় তাঁকে
পাকিস্তান ক্রিকেট ইমাম-উল হকের উত্থান এখনো প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে দ্বিতীয় দ্রুততম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার পরও তাঁকে ইনজামাম-উল-হকের ভাতিজা হিসেবেই দেখা হয়। ওয়ানডে ইতিহাসে অন্তত এক হাজার রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে ভালো গড় আছে শুধু দুজনের—বিরাট কোহলি ও রায়ান টেনডেসকাট। তবু ইমামকে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রমাণ করতে হয় প্রতি মুহূর্তে।
পাকিস্তান ক্রিকেটের গত দুই বছরের সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরমারদের একজন ইমাম। এই বাঁ হাতি ওপেনারের অন্তর্ভুক্তি দলের লাইনআপকে দৃঢ়তা এনে দিয়েছে। গত বিশ্বকাপেই সেটা প্রমাণিত হয়েছে। যে দুই ম্যাচে শুরুতেই বিদায় নিয়েছেন ইমাম, সে দুই ম্যাচেই রীতিমতো উড়ে গেছে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপ। তবু পাকিস্তান দলের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন প্রতি মুহূর্তে প্রমাণ করতে হয় তাঁকে । এখনো ইনজামামের ভাতিজা বলেই দলে টিকে আছেন—এ কথা শুনতে হয়। পাকিস্তানের একটি ক্রিকেট সাময়িকীকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমাম জানিয়েছেন তিনি এ অবস্থা বদলাতে চান, ‘আমি চাই তারা আসল ইমাম-উল-হকে জানুক।’
বিশ্বকাপের পর প্রধান নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ইনজামাম-উল-হক। এমন অবস্থাতেই নিজের কথা সবার সামনে উপস্থাপন করতে চাইছেন ইমাম। যেন ভবিষ্যতে কখনো তাঁর সম্পর্কে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ তুলতে না পারে, কখনো তাঁর দেশপ্রেম নিয়ে কথা না উঠে, ‘আমি যখন ব্যাট করতে নামি, তখন মাথায় অনেক কিছু থাকে। আমি খুব আবেগী মানুষ, আগ্রাসী মানুষ। আমি এমন একজনে যে সামনাসামনি সব মোকাবিলা করতে চাই। পাকিস্তান যখন হারে তখন অনেক কান্না করি আমি।’
দলের প্রতি তাঁর নিবেদন বোঝাতে ইমাম আরও বলেছেন, ‘মানুষ যখন বাবর আজম বা ইয়াসির শাহ কিংবা মোহাম্মদ আমিরের সমালোচনা করে তাতেও আমি দুঃখ পাই। আমি তো জানি এ দলে সুযোগ পাওয়া কত কঠিন। কতটা কষ্ট করে এখানে আসতে হয়েছে আমাদের। আমি জানি তারা আমাদের ভালোবাসে। যখন আমরা জিতি, তখন তারা খুশিতে ফেটে পড়ে। কিন্তু মনে রাখা উচিত এটা শুধুই খেলা, যুদ্ধ নয়। পাকিস্তানের মানুষদের শুধু বলতে চাই, আমি তাদের ভালোবাসি। তারা যাই বলুক আমি সেটা মেনে নেব এবং তাদের আনন্দ দেব।’
ওয়ানডেতে একের পর এক রেকর্ড গড়েও এখনো চাচার কথা বলে খোঁচা দেওয়া হয় ইমামকে। এ নিয়ে ক্ষোভটাও জানিয়েছেন এই বাঁ হাতি ওপেনার, ‘এটা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়। এত সমালোচনা! চাপ ও সমালোচনার কারণে পুরো ম্যাচ ঘুমাতে পারিনি। আমি জানি যদি রান না করি তবে মানুষ হামলে পড়বে। এটা খুব কঠিন। মানুষ ভাবে পাকিস্তান ক্রিকেট দলে আমার সুযোগ পাওয়া ঠিক না। তাদের ধারণা পাকিস্তানে আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় আছে। হয়তো আছে, থাকাও উচিত—আমি তো বিশ্বমানের খেলোয়াড় নই। সত্যি হলো, আমি সাধারণ এক খেলোয়াড়।’
সাধারণ খেলোয়াড় হয়েও ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম হাজার রান তোলার পর ইমামের চাওয়া এখন একটাই—ভালোবাসা না দেওয়া হোক, একজন খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু দেওয়া হোক তাঁকে।