>সাকিব মানেই কি বিতর্ক? অন্য ক্রিকেটারদের নিয়ে যতটা নেতিবাচক খবর প্রকাশ হয়, সাকিবকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কেন? তিনিই বা কীভাবে নেন এ বিষয়টা।
বিতর্ক তাঁর ছায়া সঙ্গী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক যুগ পেরিয়ে গেছে সাকিব আল হাসানের। শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত—বিতর্ক কখনো তাঁর পিছু ছাড়েনি। ২০১১ সালের আগস্টে জিম্বাবুয়ে সফর শেষে তাঁর অধিনায়কত্ব চলে যাওয়াও তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক মহা বিতর্কিত অধ্যায়।
২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাচ চলার সময় অশোভন আচরণের দায়ে নিষিদ্ধ হলেন তিন ম্যাচ। একই বছরের জুনে নিষেধাজ্ঞাটা হলো আরও বড়। এক দর্শক পেটানোর অভিযোগে সাকিবকে ৬ মাস নিষিদ্ধ করল বিসিবি। পরে অবশ্য নিষেধাজ্ঞা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। সাকিব নিজেই অনেক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ওই ঘটনা তাঁর ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলেছে। চিন্তা-ভাবনা বদলে দিয়েছে। তবুও কি বিতর্ক পিছু ছেড়েছে সাকিবের? এ বছরই ধরুন, বিসিবি সভাপতি দাবি করলেন, সাকিব না কি টেস্ট খেলতে অনাগ্রহী। এশিয়া কাপে তাঁর আঙুলের চোট নিয়ে কি কম বিতর্ক হয়েছে!
সবশেষ যেটা নিয়ে বেশ কথা হলো, সিলেটে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সাকিব সতীর্থদের ব্যর্থতা নিয়ে বললেন, ‘বাকি ব্যাটসম্যানদের জিজ্ঞেস করুন কেন তারা ভালো ব্যাট করতে পারল না। সবার হয়ে তো আর আমি উত্তর দিতে পারব না।’ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের মন্তব্য অনেকেই নিতে পারেনি স্বাভাবিকভাবে। সেদিন সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স নিয়ে যদি হতাশ থাকেন, আজ তাঁদের প্রতি কী বার্তা ছিল সাকিবের? এক কথায় প্রশ্নটা খারিজ করে দিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘কোনো বার্তাই ছিল না। এটা নিয়ে কারও সঙ্গে কোনো কথাই হয়নি।’
সাকিব একটু হাসলেন। পরে নিজেই ব্যাখ্যা দিলেন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসলে তিনি কী বলতে চেয়েছিলেন, ‘ওখানে কিন্তু ব্যাটসম্যানদের দোষ দিয়ে আসিনি। শুধু তাঁকে (পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক) বলেছি, ব্যাটসম্যানদের নেতিবাচক কিছু নয়, মজা করেই বলেছি। পুরো উত্তরটা তো আপনারা লিখবেন না, শুধু ওই নেতিবাচক জিনিসটা… কারণ, আমার নেতিবাচক খবর মানুষ খায় ভালো, নেয়ও ভালো। আমিও পছন্দ করি। আমার কাছে মনে হয় এটা ভালো খেলতে একটু হলেও অনুপ্রাণিত করে।’
সেই অনুপ্রেরণায় কি আজ দুর্দান্ত খেলা? সাকিব আবারও হাসেন, ‘আল্লাহর রহমত, এমন পরিস্থিতি যখন আসে, তখন আল্লাহ আমাকে ভালো কিছু দেয়।’
সংবাদমাধ্যমের ওপর তাহলে একটা চাপ ক্ষোভ সাকিবের? সংবাদ সম্মেলন যখন শেষ দিকে, এক সাংবাদিক জানতে চাইলেন, তাঁর দীর্ঘ ১২ বছরের ক্যারিয়ারে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কেন রসায়নটা জমেনি? সংবাদমাধ্যমই তাঁকে বুঝতে পারেনি, না তিনি সংবাদমাধ্যমকে বোঝেননি? ম্লান হাসিতে সাকিব বলেন, ‘জানি না, খুব বেশি ওভাবে চিন্তা করি না। ১০-১২ বছর ধরে তো একই আছে। চলতে থাক।’
সাকিবের উত্তরের পরও প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটাই যেন প্রতিধ্বনি হয়—সংবাদমাধ্যমই তাঁকে বুঝতে পারেনি, না তিনি সংবাদমাধ্যমকে বোঝেননি!