এনামুল ফিরছেন টেস্ট দলে
এনামুল ফিরছেন টেস্ট দলে

সেন্ট লুসিয়া টেস্ট

৮ বছর পর এনামুল, বাদ যাবেন কে

সেই সেন্ট লুসিয়া, সেই মাঠ। মাঠের নামটাই শুধু বদলেছে। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল গ্রস আইলেট, এখন ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আট বছর আগে সেন্ট লুসিয়ার যে মাঠে নিজের সর্বশেষ টেস্টটা খেলেছিলেন, ২৪ জুন সে মাঠেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজের নতুন শুরুটা করতে নামবেন ব্যাটসম্যান এনামুল হক।

হ্যাঁ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ দলে খেলাটা একরকম নিশ্চিতই হয়ে আছে আট বছর পর টেস্ট দলে ফেরা এনামুলের। টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় খুব বেশি ওলট–পালট না ঘটে গেলে সেন্ট লুসিয়া টেস্টের একাদশে থাকছেন তিনি। প্রশ্ন হলো, তাঁকে জায়গা ছাড়তে প্রথম টেস্টের দল থেকে বাদ যাবেন কে?

সম্ভাব্যদের তালিকায় দুটি নাম এবং সেগুলো কাদের নাম, অনুমান করা কষ্টের কিছু নয়। গত ছয় ইনিংসে একবার মাত্র (এবারের অ্যান্টিগা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে) দুই অঙ্কের দেখা পাওয়া টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন এবং গত ৯ ইনিংসে একবারও দুই অঙ্কের দেখা না পাওয়া সদ্য সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হক। দুজনের বাদ যাওয়ার ‘লড়াই’-এ মোটামুটি জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতারই আভাস মিলছে। এনামুলের খেলা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন হলো, বাদ যাবেন কে—মুমিনুল না নাজমুল?

সেন্ট লুসিয়া টেস্টে খেললবেন এনামুল

মুমিনুল যে শুধু ম্যাচে রান পাচ্ছেন না, তা নয়। খারাপ সময়ে যা হয়, অনুশীলন, মাঠ ও মাঠের বাইরেও তিনি যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা। নিজের মধ্যে নেই। এ রকম মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া একজন ব্যাটসম্যানের জন্য হুট করে রানে ফিরে আসাটা কঠিন। বরং খেলা থেকে একটু বিরতি তাঁকে হয়তো বুকের ভারী নিঃশ্বাসটা বের করে দেওয়ার অবসর দেবে। নতুন ভাবনা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে মুমিনুল ফিরতে পারবেন নতুন করে।

অন্য দিকে নাজমুলের সমস্যাটা পুরোপুরিই ব্যাটিংয়ের টেকনিকে। এক বাক্যে বললে, অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলায় যে পুরোনো দুর্বলতা, সেটি থেকেই যেন বের হতেই পারছেন না তিনি। তবে এ সমস্যার সমাধান মুমিনুলের সমস্যার চেয়ে সহজ বলেই মনে করে টিম ম্যানেজমেন্ট। একটা ভালো শট, একটা ভালো ইনিংসই ভুলের বৃত্তটা ভেঙে দিতে পারে নাজমুলের। যে কারণে, এ যাত্রায় তিনি বাদ পড়ার হাত থেকে বেঁচেও যেতে পারেন।

অবশ্য মুমিনুল-নাজমুল দুইজনকেই বাদ দিয়ে এনামুলের সঙ্গে আর একজনকে যে মাঠে নামানো যাবে, সেই উপায়ও নেই। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ইয়াসির আলী এখনো পুরো ফিট নন। আর যিনি আছেন, সেই মোসাদ্দেকও নতুন বলে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন যে তাঁকে ওপরের দিকে নামানো যাবে।

বিশ্রামে কি যাচ্ছেন মুমিনুল

মুমিনুল-নাজমুলের মধ্যেও ‘কোপ’টা মুমিনুলের ওপরই পড়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে তিনি যদি শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় টেস্টের দলে না-ও থাকেন, দলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কোনোভাবেই সেটাকে ‘বাদ পড়া’ বলতে রাজি নন। মুমিনুল বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান, দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১১টি সেঞ্চুরিও এসেছে তাঁর ব্যাট থেকেই। সেই মুমিনুল হঠাৎ ব্যাটিং ভুলে গেছেন, ব্যাপারটা সে রকম নয়। তাঁর সময়টাই যাচ্ছে খারাপ। কাজেই সেই খারাপ সময়ের স্রোতে পা না ভিজিয়ে মুমিনুল কয়টা দিন মাঠের বাইরেই কাটাক। এরপর আবার সতেজ অক্সিজেন নিয়ে নতুনভাবে ফিরে আসুক, টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টাকে দেখতে চাচ্ছে এভাবে। কাজেই এটি বাদ পড়া নয়, মুমিনুলকে ফর্মে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ারই অংশ।

মুমিনুল-নাজমুলদের দুঃসময় এনামুলকে সুযোগ করে দিচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে তাঁর টেস্ট অভিষেক। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সেন্ট লুসিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজের সর্বশেষ টেস্ট পর্যন্ত টেস্ট খেলেছেন মাত্র চারটি, সর্বোচ্চ ইনিংস ২২ রানের। সেই এনামুল আবার টেস্টে ফিরলেন মূলত ৫০ ওভারের ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে।

সেন্ট লুসিয়ায় লাল বলেও তিনি ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সের সেই ছবিটা আঁকতে পারেন কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।