করোনাভাইরাস বদলে দিচ্ছে পরিচিত অনেক দৃশ্য। বহুদিন ধরে চলে আসা অনেক কিছুর বদল ঘটছে অতিমারির প্রকোপে। ভারতীয় ক্রিকেটেও এক অভাবনীয় ব্যাপার ঘটছে। ৮৬ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ বাদ পড়ছে করোনার কারণে।
১৯৩৪-৩৫ মৌসুম থেকে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা রঞ্জি ট্রফি। যে টুর্নামেন্টে খেলে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা নামগুলো তারকা হয়েছেন। যে টুর্নামেন্ট জন্ম দেয় নতুন তারকার। সেটিই এ বছর আয়োজন করা নিয়ে রয়েছে ঘোরতর সংশয়। বিভিন্ন রাজ্য দলের এই আয়োজন এবার ব্যাহত হতে পারে করোনা মহামারির কারণে।
আইপিএলের কারণে ইদানীং জৌলুশ হারালেও ভারতীয় ক্রিকেটে রঞ্জি ট্রফির অবস্থান খুব শক্ত। ৩৮টি দলের এ টুর্নামেন্টে ক্রিকেটাররাও বেশ ভালোই রোজগার করে থাকেন। করোনা পরিস্থিতিতে যে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে—রঞ্জি ট্রফি ভারতীয় ক্রিকেটের বর্ষপঞ্জি থেকে বাদ পড়তে পারে এ কারণে। আইপিএল ৮টি দলের জন্য জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা যতটা সহজ, রঞ্জির ৩৮ দলের জন্য তা করা যথেষ্ট কঠিন বলেই মনে করছেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসকেরা।
এমন একটা পরিস্থিতিতে বিসিসিআইয়ের কর্তাব্যক্তিরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। আলোচিত হচ্ছে নানা বিষয়। সারা দেশে রঞ্জি ট্রফি আয়োজন না করে দুই-একটা শহরে আয়োজন করা যায় কিনা, সে বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। কিন্তু ৩৮ দলের এ টুর্নামেন্টে প্রতি দলে ২০ জন করে ধরলেও মোট ক্রিকেটারের সংখ্যা হয় ৭৬০। এক বিপুলসংখ্যক ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফের জন্য জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন তারা।
ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিও রঞ্জি ট্রফিকে সংশয়ে ফেলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৪ হাজারেরও বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতজুড়ে। এ অবস্থায় যেকোনো ধরনের ঘরোয়া খেলাধুলা আয়োজনকে বিপজ্জনক মনে করেন সবাই। আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রঞ্জি ট্রফি আয়োজন এবার বাদই দিয়ে দেবে বিসিসিআই। এদিকে রঞ্জি ট্রফি না হলে গভীর সংকটে পড়ে যাবেন ঘরোয়া ক্রিকেটাররা। অনেক ক্রিকেটার আছেন, যারা আইপিএলে সুযোগ পান না, তারা রোজগারহীন অবস্থাতেই পড়ে যাবেন রঞ্জি না হলে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সারা দুনিয়ায় যখন খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখনও রঞ্জি ট্রফি চালু ছিল। এর পর কত ঘটনাই ঘটেছে। উপমহাদেশ বিভক্ত হয়েছে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছে একাধিকবার। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, অজস্র রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু রঞ্জি ট্রফি মাঠে গড়ানো কখনো বন্ধ করা যায়নি। এবার করোনাভাইরাসের জন্য ধারাটা থেমে যেতে পারে।