দিনের পর দিন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলে গেছেন। বয়সও বাড়ছিল সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। পাকিস্তান দলে খেলার স্বপ্ন দেখাও হয়তো প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৯২ উইকেট তুলে নেওয়া বাঁহাতি স্পিনার নোমান আলীকে কীভাবে উপেক্ষা করেন পাকিস্তানি নির্বাচকেরা!
৩৪ বছর বয়সে নোমানকে জাতীয় দলে নেওয়া হলো। করাচিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে সুযোগ পেলেন। বাকিটা ইতিহাস। প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নিয়ে নিজের অন্তর্ভুক্তির সার্থকতা প্রমাণ করলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে করলেন বাজিমাত। ৫ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের জয়ে রাখলেন বড় ভূমিকা। ৩৪ বছর ১১৪ দিন বয়সে অভিষেকে ৫ উইকেট নিলেন—টেস্ট ইতিহাসে ৭১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী হিসেবে গড়লেন অভিষেক টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি।
আগের রেকর্ডটি ছিল ফেন ক্রেসওয়েলের, নিউজিল্যান্ডের এই পেসার ১৯৪৯ সালে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেওয়ার দিনে তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর ১৪৬ দিন। এ তো গেল সব বোলারদের মধ্যে হিসাব। শুধু স্পিনারদের হিসাব করলে গত ৮৭ বছরে নোমানই প্রথম স্পিনার, যিনি এত বেশি বয়সে অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নিলেন।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের হায়দরাবাদের ছোট এক শহর খিপড়োতে নোমানের জন্ম ১৯৮৬ সালের ৭ অক্টোবর। ১৫ বছর ধরে খেলছেন পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট কায়েদে আজম ট্রফিতে খেলেন হায়দরাবাদের হয়ে। এ ছাড়াও খেলেছেন হায়দরাবাদ হকস, খান রিসার্চ ল্যাবরেটরিজ দলে। পাকিস্তানের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ পিএসএলে মুলতান সুলতানের এই ক্রিকেটার কিছুদিন হলো নির্বাচকদের নজরে ছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজেই চলে আসে সুযোগটা। ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের পারফরম্যান্সের পুরস্কারটা মিলে যায়।
বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবেই কেবল নয়, ১২তম ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেকেই ৫ উইকেট নেওয়া পাকিস্তানি ক্রিকেটারও হয়েছেন নোমান। এর আগে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে অভিষেকে ৫ উইকেট নিয়েছেন বিলাল আসিফ (২০১৮), তানভীর আহমেদ (২০১০), ওয়াহাব রিয়াজ (২০১০), ইয়াসির আরাফাত (২০০৭), শাব্বির আহমেদ (২০০৩), মোহাম্মদ সামি (২০০১), শহীদ আফ্রিদি (১৯৯৮), মোহাম্মদ জাহিদ (১৯৯৬), শহীদ নাজির (১৯৯৬), মোহাম্মদ নাজির (১৯৬৯) ও আরিফ বাট (১৯৬৪)।
দারুণ এই কীর্তির পর নিজের নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের কথাই বলেছেন নোমান, ‘আমি আশা হারাইনি কখনোই। বিশেষ করে গত দুই মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমি ভালো বোলিং করে প্রচুর উইকেট নিয়েছি। আমি জানতাম একদিন না একদিন আমি ডাক পাব।’
কখনোই আশা হারাতে নেই, নোমান আলী ক্রিকেটে যেন সেই সুবাতাসই ছড়িয়ে দিলেন দারুণভাবে।