উইলিয়ামসন আউট, ইংল্যান্ডের উল্লাস তো একটু বেশি হবেই
উইলিয়ামসন আউট, ইংল্যান্ডের উল্লাস তো একটু বেশি হবেই

৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের ভরসা সেই মিচেল-ব্লান্ডেল

বৃষ্টি আজকের মতো এভাবে বারবার বাগড়া না বাধালে সম্ভবত এই টেস্টের ফল দেখা নিয়ে সংশয় তেমন নেই!

মাত্র তৃতীয় দিনের খেলা শেষ হলো। এখনো দুদিন বাকি, পাশাপাশি দ্বিতীয় দফার বৃষ্টিতে আজ আগেভাগে খেলা শেষ হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বাকি দুদিনে হয়তো কিছু বাড়তি ওভারও খেলা হতে পারে। তৃতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট চলে গেছে। বাকি দুদিনে সর্বোচ্চ ১৫ উইকেট ফেলতে হবে, ফলটা ইংল্যান্ডের পক্ষে গেলে তারও দরকার পড়বে না—হেডিংলি টেস্টে ফলের নিশ্চয়তা তাই বোধ দিয়ে দেওয়াই যায়।

ফলটা কার পক্ষে আসার সম্ভাবনা বেশি? আজ তৃতীয় দিন শেষে পাল্লাটা ইংল্যান্ডের দিকেই ভারি। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের খেলা আগেভাগে শেষ হয়েছে, তার আগেই যে ১৬৮ রান নিয়ে দিন শেষ করা নিউজিল্যান্ডের পাঁচ উইকেট তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ড! কিউইদের জন্য একমাত্র সুখবর, ষষ্ঠ উইকেটে ক্রিজে জুটি বেঁধেছেন সিরিজজুড়ে দারুণ ব্যাটিং করে যাওয়া দুজনই—টম ব্লান্ডেল (৫*) ও ড্যারিল মিচেল (৪*)। নিউজিল্যান্ডের লিড এই মুহূর্তে ১৩৭ রানের।

নিউজিল্যান্ডের পাঁচ উইকেটের দুটি নিয়েছেন পটস

জনি বেয়ারস্টোর সেঞ্চুরি, অভিষেকেই সেঞ্চুরির পেতে পেতেও জেমি ওভারটনের ৩ রানের আক্ষেপ আর স্টুয়ার্ট ব্রডের টি-টোয়েন্টি ইনিংসের পরও যে ইংল্যান্ডকে ৩৬০ রানেই অলআউট করতে পেরেছে, দিনের প্রথম ভাগে সে-ই ছিল প্রথম ইনিংসে ৩২৯ রান করা নিউজিল্যান্ডের স্বস্তি। মাত্র ৩১ রান পিছিয়ে, এমন পরিস্থিতিতে নেমে শুরুতেই উইল ইয়াংকে (৮) হারালেও দ্বিতীয় উইকেটে টম ল্যাথামের সঙ্গে ৯৭ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন। তখন কী দারুণ সময় কাটছিল নিউজিল্যান্ডের!

চা বিরতির সময়ই নিউজিল্যান্ডের লিড ১৫৬ রানের, তখনো হাতে ৯ উইকেট। ৭০ বলে ফিফটি পেয়েছেন ল্যাথাম, উইলিয়ামসনও বিরতির সময়ে ৩৭ রানে অপরাজিত। কিন্তু বিরতির পর প্রথম বলেই ধাক্কা! ওভারটনের বলে ল্যাথাম (১০০ বলে ৭৬) ফিরলেন।

এরপর কনওয়েকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে দেড় শ পার করিয়েছিলেন উইলিয়ামসন। কিন্তু তখন প্রথম দফায় বৃষ্টি আসে। সেটি কাটিয়ে খেলা মাঠে গড়াতেই মড়ক লাগে কিউই ইনিংসে।

ল্যাথাম আউট হয়েছেন চা বিরতির পর প্রথম বলেই

ডেভন কনওয়েকে (১১) ফেরান রুট। ২ রানের জন্য উইলিয়ামসনকে ফিফটি পেতে দেননি ম্যাথু পটস। কিছুক্ষণ পর হেনর নিকোলসও (৭) জ্যাক লিচের বলে তাঁরই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে হঠাৎ ৫/১৬১ হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। ৯ রানে ৩ উইকেট নেই!

এর আগে দিনের প্রথম সেশনে গল্পটা যতটা না আগের দিনেই সেঞ্চুরি পেয়ে যাওয়া বেয়ারস্টোর, তার চেয়েও বেশি ওভারটনের। টেস্ট অভিষেকে আট বা এর নিচে নেমে ইংল্যান্ডের কারও সেঞ্চুরি আছে? প্রশ্নটার উত্তর জেনেই হয়তো কাল রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলেন জেমি ওভারটন। ২৮ বছর বয়সে টেস্টে অভিষেক হওয়া ইংলিশ ক্রিকেটার ঘুমাতে পেরেছিলেন কি না, প্রশ্ন সেটিও। টেস্ট অভিষেকের প্রথম দিন শেষে ৮৯ রানে অপরাজিত থাকলে কেই–বা ঘুমাতে পারে!

ওভারটন তো ঘুমাতে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ‘প্রথম’ হওয়ার স্বপ্ন চোখে মেখেই। টেস্ট অভিষেকে আট বা এর নিচে নেমে ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যান যে সেঞ্চুরি পাননি। আর সব দল মিলিয়েই যে টেস্ট অভিষেকে ৮ থেকে ১১ নম্বর ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি মাত্র ১০টি। হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষেও সংখ্যাটা ১০–ই রইল। ওভারটন যে মাত্র ৩ রানের জন্যই পারলেন না তিন অঙ্ক ছুঁতে।

দিন শেষে ইংল্যান্ডের মুখেই হাসিটা চওড়া

আজ দিনের নবম ওভারে ট্রেন্ট বোল্টের করা বেরিয়ে যাওয়া বলটাকে তাড়া করে প্রথম স্লিপে ক্যাচ তুললেন ওভারটন। ড্যারিল মিচেল সেটি মুঠোবন্দী করতেই সর্বস্ব হারানোর বেদনায় পুড়লেন পেসার হিসেবেই বেশি পরিচিত ওভারটন। ইতিহাস গড়তে নেমে অভিষেকেই নড়বড়ে নব্বইয়ের যন্ত্রণায় পোড়া ওভারটনকে সান্ত্বনা দিয়ে বিদায় দিয়েছেন জনি বেয়ারস্টো।

কাল ওভারটন যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, ৫৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছে ইংল্যান্ড। সেই ওভারটন যখন সেঞ্চুরি হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে ফিরলেন, ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ২৯৬। বেয়ারস্টো–ওভারটনের সপ্তম উইকেটে এসেছে ২৪১ রান।

দশম টেস্ট সেঞ্চুরি পাওয়া বেয়ারস্টো ফিরেছেন ১৬২ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে দলকে ৩৫১ রানে রেখে। তাঁর ১৫৭ বলের ইনিংসটা সাজানো ২৪টি চারে। বেয়ারস্টো ফেরার ঠিক আগের বলেই ফিরেছেন নেমেই মারকাটারি ব্যাটিং শুরু করা স্টুয়ার্ট ব্রড (৩৬ বলে ৪২)। ইংল্যান্ড শেষ পর্যন্ত করেছে ৩৬০। ৫৫ বা এর কমে প্রথম ৬ উইকেট হারানো কোনো দলের এটিই দলীয় সর্বোচ্চ।