৪২ লাখ টাকার ব্রেসলেট আবার ফেরত পাবেন মাশরাফি

ব্রেসলেটটি গত দেড় যুগ সঙ্গী করে রেখেছিলেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো
ব্রেসলেটটি গত দেড় যুগ সঙ্গী করে রেখেছিলেন মাশরাফি। ছবি: প্রথম আলো

নব্বই দশকে কিশোরদের মধ্যে ফ্যাশনটি রীতিমতো ক্রেজ ছিল। হাতে ব্রেসলেট, চোখে রোদচশমা, রংচটা জিনস আর টি-শার্ট। মাশরাফি বিন মুর্তজার শৈশব ও কৈশোর যেহেতু এ সময়ে, তাই এসব সাজপোশাক পছন্দ করাই স্বাভাবিক।

কাল রাতে নিজের ব্রেসলেটের নিলামে পছন্দের পোশাক হিসেবে জিনস, টি-শার্ট ও অতি অবশ্যই লুঙ্গির কথা জানান জাতীয় দলের সাবেক এ অধিনায়ক। তবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মাশরাফির ব্রেসলেট। করোনা যুদ্ধে নিজের ১৮ বছরের সঙ্গী ব্রেসলেট নিলামে তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক এ অধিনায়ক। ৪২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে এ ব্রেসলেট। করোনা যুদ্ধে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের নিলামে তোলা সরঞ্জামের মধ্যে মাশরাফির ব্রেসলেটই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হলো। এটি কিনেছে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান—বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্স কোম্পানি। ব্রেসলেটের বিক্রয় মূল্য করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু সেটি আবার ফিরিয়ে দেওয়া হবে মাশরাফিকে। কাল নিলামে বাংলাদেশ লিজিংয়ের প্রতিনিধি মুমিনুল ইসলাম জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ককে ‘উপহার’ হিসেবে ব্রেসলেটটি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ফেসবুকে নিলামের লাইভ অনুষ্ঠানে মাশরাফির এই ব্রেসলেটের পেছনের ইতিহাস জানতে প্রচুর প্রশ্ন করছিলেন ভক্তরা। সঞ্চালক তা জানানোর পর নিজের ব্রেসলেটপ্রীতির কথা খুলে বলেন মাশরাফি, ‘দুটো জিনিসের ওপর আমার ছোটবেলা থেকে অনেক শখ ছিল। কিন্তু বাসার ভয়ে বিশেষ করে বাবার ভয়ে কখনো ব্যবহার করতে পারতাম না। সেগুলো হচ্ছে ব্রেসলেট ও সানগ্লাস (রোদচশমা)। যখন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা শুরু করলাম, তখন ভাবলাম ঠিক আছে এখন ব্যবহার করি। আমি নিশ্চিত বাবা এখন কিছু বলবে না।’

মাশরাফির ব্রেসলেট। তাঁর নাম খোদাই করা। ছবি: ফেসবুক

মাশরাফি এরপর বলেন, ‘আমি তখন একটা ব্রেসলেট ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু মাঠে ডাইভ দিলে ব্রেসলেটটি খুলে যায়। পরে খুঁজে পেলেও ওটা টেকেনি। তারপর আমার বন্ধুকে বললাম, আমাকে একটা ব্রেসলেট তৈরি করে দে।’

এরপর মাশরাফি নিলামে ওঠা তাঁর হাতের ব্রেসলেটটি দেখিয়ে বলেন, ‘তো এটা সবাই যা ভাবছে তা নয়। খুব সাধারণ। অনেকে ভেবেছিল রুপার, তাও না। এটা সাধারণ স্টেইনলেস স্টিলে তৈরি (ব্রেসলেট)। আমার বন্ধুর মামা ওখান থেকে বানিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকেই এটা পরে থাকি। কয়েকবার হাত থেকে খুলে রেখেছি। মনে করে দেখবেন, আমাদের একটা ব্রেসলেট ধরনের প্লাস্টিকের ছিল, বাংলাদেশের লাল-সবুজ নিয়ে। বাংলাদেশের জার্সির মতো। বগুড়ায় খেলেছি, কয়েকবার পরেছি। কিন্তু এটা (হাতের ব্রেসলেট দেখিয়ে) ছাড়া ভালো লাগেনি। তারপর থেকেই এটা আমার সঙ্গী। ভালো-মন্দ সবকিছুর সঙ্গেই এটা জড়িয়ে আছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে এটা ছাড়া কখনো আর কিছু পরিনি। সেটা বলতে পারেন, অস্ত্রোপচারে (ধাতব কোনো কিছু খুলে রাখতে হয়) এমআরআইয়ে খুলতে হয়েছে। আর ওই দুটো জায়গাতেই আমাকে বেশি যেতে হয়েছে (হেসে)। সব মিলিয়ে এটা (ব্রেসলেট) সব সময়ই আমার সঙ্গে ছিল।’