এই চেন্নাইতেই ১৩ বছর আগের সেই টেস্টটার কথাই কি ইংলিশদের ভাবনায় ঘুরছিল?
ইংল্যান্ডের ইনিংসে একেকটি করে ওভার যায়, একেকটি উইকেট পড়ে, আর প্রশ্নটা ঘোরে বাতাসে। ২০০৮ চেন্নাই টেস্ট যদি তাদের ভাবনায় ঘুরপাকই না খাবে, তাহলে ইংল্যান্ড ইনিংস ঘোষণা করছে না কেন—প্রশ্ন এটিই।
শেষ পর্যন্ত আর ইনিংস ঘোষণা করতে হয়নি। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দাপটে ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৭৮ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে ভারত। অশ্বিন নিয়েছেন ৬ উইকেট—ক্যারিয়ারে ২৮তম বার তাঁর ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট পাওয়ার ঘটনা। তবে এই অল্প রানেই এখন ‘দুর্গম গিরি’র সামনে দাঁড়িয়ে ভারত। জিততে হলে এশিয়ার মাটি তো বটেই, টেস্ট ইতিহাসে ১৪৪ বছরের রেকর্ড পাল্টে দিয়েই জিততে হবে বিরাট কোহলির দলকে। জয়ের জন্য যে ভারতকে ৪২০ রানের লক্ষ্য দিয়েছে ইংল্যান্ড, টেস্টে এত রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই। জবাব দিতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে ভারতের রান ১ উইকেটে ৩৯।
আজ সব মিলিয়ে ১৩ ওভার খেলা হয়েছে। কাল পুরো দিন বাকি আছে। ভারত যদি এই সময়টা কাটিয়ে দিতে পারে, না জিতলেও যদি ড্র করে ফেলে, হয়তো ‘আরও আগে কেন ইনিংস ঘোষণা করল না ইংল্যান্ড’—প্রশ্নগুলো সমালোচনা হয়ে বিঁধবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক জো রুটকে।
২০০৮ চেন্নাই টেস্টে চতুর্থ দিনে গিয়ে ভারতকে চতুর্থ ইনিংসে ৩৮৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু তখন কে আর জানত যে বীরেন্দর শেবাগ এভাবে ব্যাট হাতে ঝড় তুলবেন? শচীন টেন্ডুলকার শেষ দিনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে চোখধাঁধানো সেঞ্চুরিতে ভারতকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন, পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৬৩ রানের জুটিতে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন যুবরাজ সিং (৮৫)। কিন্তু পঞ্চম দিনে টেন্ডুলকার-যুবরাজের লড়াইয়ের ভিত্তি তো গড়ে দিয়েছিল শেবাগের ঝড়ই!
চতুর্থ দিন শেষ হওয়ার সময়ই ভারতের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, ওপেনিংয়ে নেমে ৬৮ বলে ১১ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রান করে চতুর্থ দিনেই আউট হয়ে যান শেবাগ। কিন্তু আউট হওয়ার আগে তাঁর ইনিংসটি বুঝিয়ে দিয়েছিল, ভারত জেতার জন্যই নামছে। তাঁর ইনিংসটিই ভারতকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল। এবার ভারতের কেউ শেবাগ হতে পারলে টেস্ট ক্রিকেট আরেক উপাখ্যানই দেখবে!
কিন্তু একে তো লক্ষ্যটা এভারেস্টসমান, তার ওপর ভারতকে ভয় দেখাবে পঞ্চম দিনের পিচ। আজ চতুর্থ দিনেই যেভাবে পিচে স্পিনের ছোবল তুলেছেন অশ্বিন, সেটি ভারতকে চতুর্থ ইনিংসে পিচ নিয়ে শঙ্কা না জাগিয়ে পারে না। পিচে বেশ কয়েক জায়গায় বোলারদের জুতোর স্পাইকের ‘অত্যাচারে’র প্রভাব স্পষ্ট। আর উপমহাদেশের পঞ্চম দিনের পিচ তো এমনিতেই স্পিনসহায়ক। চেন্নাইয়ের এই পিচও ব্যতিক্রম নয়।
এখন ইংল্যান্ডের জ্যাক লিচ, ডম বেসের মতো স্পিনাররা অশ্বিনের মতো পিচের ফায়দা তুলে নিতে পারবেন কি না, সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। এরই মধ্যে জফরা আর্চারের পাশাপাশি জ্যাক লিচকে আক্রমণে নিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড।
পঞ্চম দিনের উইকেটে অশ্বিনকে সামলানোর কথা হিসাব করেই হয়তো ইংল্যান্ড ভারতকে ফলো অন করার সুযোগ পেয়েও করায়নি, নিজেরা আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করে ফেলেছে। কিন্তু তাতে ঠিক চাওয়া পূরণ হয়েছে কি রুটদের? চতুর্থ দিনেই পিচের অবস্থা বিবেচনা করে ভারত অধিনায়ক কোহলি বোলিং শুরুই করেছেন অশ্বিন ও আরেক স্পিনার শাহবাজ নাদিমকে দিয়ে। ফল পেতে অপেক্ষা করতে হয়নি। ইনিংসের প্রথম বলেই অশ্বিনের ডেলিভারিতে রাহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন ইংল্যান্ড ওপেনার ররি বার্নস। কিছুক্ষণ পর আরেক ওপেনার ডম সিবলিকেও (১৬) তুলে নেন অশ্বিন, ইংল্যান্ডের রান তখন ৩২!
মাঝে ইশান্ত শর্মা এসে ড্যান লরেন্সকে (১৮) এলবিডব্লু করে দেওয়ার পর আবার অশ্বিনের ধাক্কা। তাঁর বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ফাঁদে পা দিলেন বেন স্টোকস (৭), কিন্তু বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপারের হাতে। ইংল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ৭১। ভারতের মাথাব্যথা আর ইংল্যান্ডের ভরসা হয়ে তখনো ক্রিজে প্রথম ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করা জো রুট। দ্রুত রান তোলার দিকেই যে ইংল্যান্ডের মনোযোগ ছিল, তার প্রমাণ রুটের ৩২ বলে ৪০ রান করাও। কিন্তু দলের ১০১ রানের সময় পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফিরে যান রুটও। এলবিডব্লু হয়ে যান যশপ্রীত বুমরার বলে।
ইনিংসের অর্ধেক শেষ, রান মাত্র ১০১। ইংল্যান্ড তখন প্রথম ইনিংসে ২৪১ রানের লিডের জন্যই যা স্বস্তি পাচ্ছে। মাঝে নাদিমের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ওলি পোপ (২৮) ও জস বাটলারের (২৪) বিশ পেরোনো দুই ইনিংসে ইংল্যান্ডের স্কোর দেড় শ পার হয়। লিড ততক্ষণেই ৪০০ পেরিয়ে গেছে। তবু ইংল্যান্ড হয়তো আরও কিছু রানের প্রত্যাশায়। কিন্তু অশ্বিন তা হতে দিলেন না। ২৫ রান করা ডম বেসকে যখন ফেরালেন, ইংল্যান্ডের রান ৭ উইকেটে ১৬৫। আর ১৩ রানের মধ্যেই জফরা আর্চার ও জেমস অ্যান্ডারসনকেও তুলে নেন অশ্বিন।