শর্ট বল দেখে পুল করতে চেয়েছিলেন আলজারি জোসেফ। ঠিকমতো লাগেনি। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল। এক বাউন্সে সীমানা পার। আউট করার একটা সুযোগ এসেছিল সেটা ভেবে নাকি জোসেফের ভাগ্য দেখে কে জানে, বোলার সৌম্য সরকার হেসে ফেললেন। তা–ও, ভালো। সকালের সেশনে তবু একটু ইতিবাচক মন-মানসিকতা দেখা গিয়েছিল। মাঝের সেশনে যে এর আগপর্যন্ত বাংলাদেশ দলের মুখের হাসি হারিয়ে গিয়েছিল!
হাসি সংক্রামক, ইতিবাচক মানসিকতাও। ঘণ্টা দুয়েক খেটে মরে যা হচ্ছিল না, সেটা মিনিট পাঁচেক পরই হলো। তাইজুলের আর্ম বলের লাইন বুঝতে পারলেন না জশুয়া দা সিলভা। ব্যাট ও প্যাডের মাঝ দিয়ে চলে গেল বল। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি থেকে ৮ রান দূরে থামলেন দা সিলভা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৭ উইকেটে ৩৮৪। হতাশায় মোড়ানো এক সেশনে হঠাৎ আলোর দেখা পেল বাংলাদেশ। যাক, এবার বুঝি বোলাররা নিজেদের ফিরে পাবেন। সত্যিকার অর্থেই টেল এন্ডের দেখা মিলেছে। ক্রমেই নাগালের বাইরে চলে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর যদি চার শর নিচে থামানো যায়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চার শর নিচে অলআউট করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে বোলাররা প্রতিপক্ষকে খুব বেশি এগোতেও দেননি। ২৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয়েছে ৪০৯ রানে।
টেস্টে ৮৬ রানের একটি ইনিংস আছে জোসেফের। গত বছরের শেষ দিকে নিউজিল্যান্ডের কঠিন উইকেটেই করেছিলেন সে রান। প্রথম শ্রেণিতে ৮৯ রানের আরেকটি ইনিংসও আছে তাঁর। আজ দুটি ইনিংসকেই পেছনে ফেলবেন বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু দা সিলভার বিদায় সেটা হতে দিল না। এতক্ষণ অন্য প্রান্তে দা সিলভা থাকায় চিন্তামুক্ত খেলছিলেন জোসেফ। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের অভাবটা টের পাওয়া গেল পরের ওভারেই। অধিনায়ক বোলিংয়ে নিয়ে এলেন আবু জায়েদকে। প্রথমে তিনটি ফুল লেংথ বল করলেন জায়েদ।
এরপর একটা শর্ট বল। সেটাকে নিজের পঞ্চম ছক্কা বানালেন জোসেফ। পরের বল আবার শর্ট ছিল। এটাও মারতে গেলেন জোসেফ। ব্যাটেবলে হয়নি। কিন্তু গ্লাভসে লেগে ঠিকই উইকেট রক্ষকের ওপর দিয়ে চলে গেল সীমানায়। অন্য প্রান্তে দা সিলভা নেই, ফলে তাঁর জন্য যে ফাঁদ পাতা হচ্ছে টের পেলেন না জোসেফ। ওভারের শেষ বলটিও শর্ট দিলেন জায়েদ। এবার অফ স্টাম্পের একটু বাইরে। আবারও ব্যাট চালালেন জোসেফ। এবার ব্যাটের কানা লেগে বল ঠিকই লিটনের কাছে।
৩৯৬ রানে অস্টম উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিজের পরের ওভারেই আবার আঘাত হানলেন জায়েদ। অফ স্টাম্পের একটু বাইরে বল করেছিলেন। গুড লেংথে পড়া বল জোমেল ওয়ারিক্যানের ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে গেল লিটনের কাছে। ২ রানের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে বসল সফরকারীরা। শেষ উইকেট জুটি আরও ১১ রান এনে দিয়েছে। তাইজুল ও জায়েদ দুজনই পেয়েছেন৪ উইকেট।
এর আগে বাংলাদেশের বোলারদের চরম পরীক্ষা নিয়েছেন জোসেফ ও দা সিলভা। প্রথম সেশনে ৯০ রান করা বোনার ফিরলেও হাল ছাড়েননি দা সিলভা। নিজে এক প্রান্ত ধরে রেখেছেন। অন্যদিকে জোসেফকে রানের গতি বাড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। দুজনে মিলে ৩৫ ওভার কাটিয়ে দিয়েছেন। এনে দিয়েছেন মূল্যবান ১১৮ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনো জুটি তিন অঙ্কের দেখা পেল। সেটা আরও বেশ কিছু রেকর্ডও ভেঙেছে। ভারত বাদে উপমহাদেশের ভেন্যুতে এই প্রথম সপ্তম বা এর নিচের উইকেট জুটি সেঞ্চুরি পার করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে!