বাংলাদেশের জয়ের মঞ্চটা বলতে গেলে প্রস্তুত ছিল চতুর্থ দিনই। শেষ দিনে সেখানে যোগ হলো বাড়তি একটি উপলক্ষ—মাহমুদউল্লাহর বিদায়। দিন শুরু হয়েছিল তাঁকে সতীর্থদের দেওয়া গার্ড অব অনারে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তাতেই নিশ্চিত হয়ে গেল, প্রায় দেড় বছর পর ফিরে এক ম্যাচ খেলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে মাহমুদউল্লাহর টেস্ট ক্যারিয়ার।
শুরুতে সাফল্য পেতে একটু দেরি হলেও তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ মসৃণ করেছেন বড় জয়ের পথ, দুজনই নিয়েছেন ৪টি করে উইকেট। মাহমুদউল্লাহকেও তাই বাংলাদেশ দিতে পেরেছে বিদায়ী উপহার। হারারেতে একমাত্র টেস্টে জিম্বাবুয়ে ২৫৬ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ জিতেছে ২২০ রানের ব্যবধানে।
সকালে আগের দিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা ডোনাল্ড তিরিপানো ও ডিওন মায়ার্সের জুটি হতাশ করছিল বাংলাদেশকে। পঞ্চম দিনের শুরুতে দুই প্রান্তেই স্পিনার এনেছিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। মেহেদী মিরাজের সঙ্গে বোলিং আক্রমণে এসেছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে প্রথম ব্রেক থ্রু পেতে ১৮তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এর মাঝে হাতছাড়া হয়েছে তিনটি ক্যাচ—দুবার বেঁচেছেন ডিওন মায়ার্স, একবার ডোনাল্ড তিরিপানো। সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে মায়ার্সের ক্যাচ ছেড়েছেন লিটন দাস। মায়ার্সের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি তাসকিন। দুবারই ২২ রানে ছিলেন মায়ার্স। শেষ পর্যন্ত শর্ট মিড উইকেটে মিরাজের বলে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন মায়ার্স, ২৬ রান করে। দুই বল পর টিমাইসেন মারুমা হয়েছেন এলবিডব্লু, মিরাজের বলের লাইনই বুঝতে পারেননি মারুমা।
পরের দুই উইকেট নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ। আগুনে স্পেলে রয় কাইয়া ও রেজিস চাকাভাকে ফিরিয়েছেন এই পেসার। কাইয়া ফুল লেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বল মিস করে হয়েছেন এলবিডব্লু। তবে চাকাভার আউট হওয়ার ডেলিভারিটা ছাড়িয়ে গেছে আগেরটিকে। ফুল লেংথ থেকে তাসকিনের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ব্যাট-প্যাড কিছুই না লাগাতে পেরে চাকাভা হয়েছেন বোল্ড।
সে স্পেলে ভিক্টর নিয়াউচিকেও বোল্ড করেছিলেন তাসকিন। তবে তাঁর ফ্রন্টফুট ছিল পপিং ক্রিজের বাইরে। ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা দেওয়া নিয়াউচিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে এরপর। জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে থেকে মধ্যাহ্নবিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ।
বিরতির পর সেই নিয়াউচিকে নিয়ে কিছুক্ষণ বাংলাদেশকে আটকে রেখেছিলেন তিরিপানো। আবারও ব্রেক থ্রু দিয়েছেন তাসকিন। এবার তিনি গেছেন শর্ট লেংথে, সেটি ঠিকঠাক ডাক করতে পারেননি নিয়াউচি। স্লিপে দ্বিতীয় দফায় সে ক্যাচ নিয়েছেন সাকিব। তাসকিনের ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং এটি, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৪ উইকেট পেলেন।
তিরিপানো এরপর আবার সুযোগ দিয়েছিলেন, তবে আবারও বেঁচে গেছেন। স্লিপে মিরাজের বলে ক্যাচ ফেলেছেন সাকিব। নতুন পজিশনে ক্যাচ নেওয়ার সঙ্গে ছেড়েছেনও সাকিব। সুযোগ পাওয়া তিরিপানো পূর্ণ করেছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি। ১২৫ বলে ব্যক্তিগত মাইলফলক ছুঁয়েছেন এই বোলার।
বাংলাদেশকে অবশেষে ব্রেক থ্রু দিয়েছেন ইবাদত হোসেন, যদিও তাতে ছিল ভাগ্যের ছোঁয়া। লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট চালালেও খোলা চোখে বলের সঙ্গে সেটির সংযোগ ঘটেনি মনে হলেও আম্পায়ার মারাইস এরাসমাস তুলেছেন আঙুল। ১৪৪ বলে ৫২ রান করা তিরিপানোকে ফিরিয়েই এই টেস্টে প্রথম উইকেটের দেখা পেলেন ইবাদত।
ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভার জুটি অবশ্য আরেকটু অপেক্ষায় রেখেছিল বাংলাদেশকে। মুজারাবানি মেরেছেন চারটি বাউন্ডারি। তাসকিন আহমেদকে তাঁর ‘নাচ’ ফিরিয়েও দিয়েছেন। এক উইকেট বাকি থাকায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল চা-বিরতি। শেষ পর্যন্ত মিরাজকে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন এনগারাভা, বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত হয়েছে তাতেই।