অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের মাত্র দুই দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন পাকিস্তানের উইকেটকিপার–ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে সেমিফাইনাল খেলাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে তাঁর।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি খেললেন তিনি, দলের ব্যাটিংয়েও নেতৃত্ব দিলেন দারুণ এক অর্ধশতক হাঁকিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর, পাকিস্তান ম্যাচটা হেরে গেল মার্কাস স্টয়নিস আর ম্যাথু ওয়েডের দুর্দান্ত এক জুটিতে।
কিন্তু অবাক হওয়ার পালা ম্যাচ শেষে। সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের চিকিৎসক এসে জানান, রিজওয়ানকে নাকি সেমিফাইনালের আগে প্রায় দুই দিন আইসিইউতে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়াতেই নাকি তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তথ্যটি জানার পর দলের প্রতি রিজওয়ানের দায়বদ্ধতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ এখন ক্রিকেট দুনিয়া।
কী কারণে তাঁকে আইসিইউতে যেতে হলো? এ নিয়ে আজ পিসিবির ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেছেন রিজওয়ান। জানান, হাসপাতালে যেতে আর ২০ মিনিট দেরি হলেই বড় বিপদ হতে পারত তাঁর!
পাকিস্তান ক্রিকেট দল এ মুহূর্তে বাংলাদেশে। তিনটি টি–টোয়েন্টি আর দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হবে খুব শিগগির। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বাদ পড়ার এক দিন পরেই বাংলাদেশে এসেছে পাকিস্তান দল। ঢাকায় টিম হোটেলে বসেই রিজওয়ান জানান তাঁর অসুস্থতার বিষয়ে। বলেন, ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা গুরুতর পর্যায়েই পৌঁছেছিল।
‘শরীরটা ভালো লাগছিল না সেদিন। আমাকে সেদিন হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা ছিলেন হোটেলে। প্রথমে হোটেলের নিচে আমার ইসিজি করা হয়। যখন হাসপাতালে পৌঁছালাম, তখন আমি ঠিকমতো নিশ্বাসই নিতে পারছিলাম না। চিকিৎসকেরা বলছিলেন ফুসফুসের দুটি ধমনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে’—পিসিবির ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেন রিজওয়ান।
তবে হাসপাতালে আগেভাগে না গেলে যে আরও বড় বিপদ হতে পারত, সেটিও রিজওয়ান জানিয়েছেন ভিডিওতে, ‘তখনো তাঁরা আমাকে পুরো ব্যাপারটা খোলাসা করে বলেননি। পরে একজন নার্সকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, হাসপাতালে আসতে ২০ মিনিট দেরি হলেই ওই ধমনি দুটি ছিঁড়ে যেতে পারত। এরপর বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে।’
সেমিফাইনাল ম্যাচের দুই দিন আগে থেকে ঠান্ডা লেগেছিল রিজওয়ানের। সঙ্গে ছিল তীব্র কাশি ও জ্বর। বুকে তীব্র ব্যথার কথাও বলেছিলেন। ৩৫ ঘণ্টা আইসিইউতে থাকতে হয়েছে তাঁকে। এরপরও সুস্থ হয়ে তিনি যেভাবে সেমিফাইনালে খেললেন, সেটি অবাক করেছে সবাইকে।
কীভাবে এতটা করতে পারলেন রিজওয়ান? তাঁর সাফ কথা, ম্যাচে খেলার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি। এমনকি চিকিৎসককে তিনি বলেছিলেন, তাঁর যদি ভালোমন্দ কিছু হয়ে যায়, সেটি যেন ম্যাচের পরেই হয়।
‘আমার চিকিৎসকের কথা মনে পড়ছে। তিনি বলেছিলেন, ‘রিজওয়ান, আমি চাই আপনি সেমিফাইনালে খেলুন। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী, আপনার শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো নয়।’ আমি তখন তাঁকে বলি, কিছু হলে যেন সেটি ম্যাচের পরেই হয়, কারণ সবকিছুই পাকিস্তানের জন্যই। আমার এ কথায় তাঁরা উৎসাহিত হন, এবং যা যা পদক্ষেপ নেন, সেগুলো আমার সুস্থ হয়ে উঠতে কাজে লেগেছে। তবে পুরো সময়টাই ছিল খুব কষ্টকর’ - বলেছেন রিজওয়ান।