>রমজান মাসে বিশ্বকাপের খেলা পড়ে গেছে বাংলাদেশের। দলীয় দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রোজা রেখে খেলে গেছেন দলের তিন তারকা—মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
কার্ডিফে এক আড্ডায় মাশরাফি বিন মুর্তজা বিষয়টার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। অনানুষ্ঠানিক সেই আলাপ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশযোগ্য কি না, একটু দ্বিধায় থাকতে হয়েছে। কাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি বিন মুর্তজা যখন বললেন, ‘মুশি (মুশফিক), রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ও মিরাজকে নিয়ে আমি গর্বিত যে তারা রোজা রেখে ভালো খেলেছে,’ এবার নিশ্চয়ই লিখতে বাধা নেই!
রমজান মাসে ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের খেলা পড়ে গেছে বাংলাদেশের। দলীয় দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে রোজা রেখে খেলে গেছেন দলের তিন তারকা—মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ।
এবার বাংলাদেশ দলের খেলা পড়ে গেছে রমজান মাসে। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ—রোজার মধ্যেই খেলতে হয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ম্যাচগুলো খেলতেও হচ্ছে ইউরোপে, যেখানে রোজা থাকতে হয় ১৯ ঘণ্টার বেশি সময়। রোজা রেখে অনুশীলন, ম্যাচ খেলা শুধুই কঠিন নয়, শারীরিকভাবে নিজেকে ফিট রাখাও ভীষণ কঠিন। কঠিন এ কাজটিই হাসিমুখে করে যাচ্ছেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড়ই ধর্মচর্চার ব্যাপারে ভীষণ সচেতন এবং মনোযোগী। খেলা না থাকলে নিয়মিতই রোজা করে গেছেন তারা। তবে খেলার দিন অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন—এমন ভাবনা থেকেই দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় রোজা রাখা থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-মিরাজ ব্যতিক্রম। যত কষ্ট হোক, রোজা তাঁরা থাকবেনই।
রোজা রেখে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কেমন হলো, কাল ওভালের মিক্সড জোনে সেটি জানালেন মিরাজ, ‘জানেনই, বিশ্বকাপের ম্যাচে অনেক চাপ থাকে। আল্লাহর অশেষ রহমত, রোজার দিনে এমন ম্যাচ খেলা ভাগ্যের ব্যাপার। এটা অনেক বড় অভিজ্ঞতা। ভালো লেগেছে, এমন দিনে জিততে পেরেছি। যখন নিয়ত করেছি রোজা থাকব, আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। মাশরাফি ভাই বলছিলেন, আল্লাহর বরকত আছে আমাদের ওপর।’
লম্বা সময়ে রোজা রেখে ভীষণ চাপের ম্যাচ খেলা মোটেও সহজ কিছু নয়। মিরাজের অবশ্য খেলার সময় রোজার কথা মাথায় থাকে না! ম্যাচ শেষ হওয়ার পরপরই অনুভূত হয় তিনি রোজা রেখেছেন, ‘আজ (কাল) খেলার সময় রোজা মাথায় ছিল না। বোলিং-ব্যাটিং নিয়েই বেশি ভেবেছি। যখন খেলা শেষ হয়েছে, তখন একটু খারাপ অনুভব হয়েছে, মনে পড়েছে, আমি তো রোজা আছি!’
কথা বলতে বলতে থেমে গেলেন মিরাজ। চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে তাঁর। কাতর কণ্ঠে বললেন, ‘ভেতর থেকে যেন কথাই বের হতে চাচ্ছে না!’ মিরাজের করুণ চেহারাটা দেখে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মায়া হলো, ছেড়ে দেওয়া হলো তাঁকে দুই প্রশ্ন করেই। কিন্তু তাতেও কি আর তাঁর শেষ হলো! ওই ক্লান্তি নিয়ে আইসিসি আর বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বললেন হাসিমুখে। মিরাজের এ প্রাণশক্তি আপনাকে মুগ্ধ না করে পারবে না!