এমন কীর্তির পর কাইল মেয়ার্সের একটা ছবি তো মোবাইলে তুলেই রাখতে চাইবেন যে কেউ–ই।
এমন কীর্তির পর কাইল মেয়ার্সের একটা ছবি তো মোবাইলে তুলেই রাখতে চাইবেন যে কেউ–ই।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ

১১৮ বছরে খুব বেশি নেই মেয়ার্সের এই কীর্তি

রেকর্ড বইয়ে দলটা খুব ছোট! সেই ছোট্ট দলের অংশ হয়েই ইতিহাস গড়লেন কাইল মেয়ার্স। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই ডাবল সেঞ্চুরি। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন অসাধারণ কীর্তি গড়া মাত্র ষষ্ঠ ক্রিকেটার তিনি।

প্রথম ইনিংসেই জানান দিয়েছিলেন টেস্ট খেলার সামর্থ্য খারাপ না মেয়ার্সের। মেহেদী হাসান মিরাজের বলে এলবিডব্লু হয়ে ৪০ রানের ইনিংসটির অপমৃত্যু ঘটেছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে দলের বিপর্যয়ের মধ্যে চোয়ালবদ্ধ করে মাঠে নেমেছিলেন। আরেক অভিষিক্ত এনক্রুমা বোনারের সঙ্গে ২১৬ রানের অসাধারণ এক জুটি গড়লেন।

বাংলাদেশকে একাই হারালেন মেয়ার্স।

চতুর্থ ইনিংসে এ দুজনের ২১৬ রানের জুটি দুই অভিষিক্তের মধ্যকার সর্বোচ্চ। দারুণ এই জুটি লিখে দিল ম্যাচের ভাগ্য। চা-বিরতির পর বোনার ফিরলেও ডাবল সেঞ্চুরি করে দল জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মেয়ার্স। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ক্রিকেটার তো হয়েছেনই, আরও একটা অনন্য কীর্তি দিয়ে টেস্টের ইতিহাসে নিজেকে অমর করে রাখলেন তিনি—অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড যে আর কারোরই নেই!

অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি প্রথম এসেছিল ১১৮ বছর আগে। ১৯০৩ সালে ২৮৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন টিপ ফস্টার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে এ অসাধারণ কীর্তি গড়েছিলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান। এরপর দীর্ঘ ৬৯ বছরের বিরতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লরেন্স রো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিংস্টনে খেললেন ২১৪ রানের ইনিংস।

১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কার ব্রেন্ডন কুরুপ্পু যোগ দিলেন এ দলে। তাঁর ইনিংসটি ছিল কলম্বোতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এ কীর্তির শিকার হওয়া নিউজিল্যান্ড সে কীর্তিতে নাম লেখাল ১৯৯৯ সালে। ম্যাথু সিনক্লেয়ারের কীর্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে। টিপ ফস্টারের কীর্তির ঠিক ১০০ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাকুয়েস রুডলফ অভিষেকে আরও একটি ডাবল সেঞ্চুরি করেন, এই চট্টগ্রামেই, বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেটি অবশ্য এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে।

অভিষেকে কেবল ষষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি মেয়ার্সের।

মেয়ার্সের এই কীর্তি চট্টগ্রামকেও দ্বিতীয়বারের মতো ইতিহাসের অংশ করল। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরির মঞ্চ হিসেবে দ্বিতীয়বার ইতিহাসে নাম উঠল এই শহরের। ১৮ বছর আগে জ্যাক রুডলফের পর এবার মেয়ার্স।

ক্যারিবীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অংশ হয়ে যাওয়া মেয়ার্স কিন্তু ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। ১৩০ কিলোমিটারের আশপাশের গতিতে বোলিং করতেন বয়সভিত্তিক দলেই। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ১১.৮৩ গড়ে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন।

সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার সব ধরনের সামর্থ্য থাকলেও মেয়ার্স কখনোই নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটে কখনোই সেভাবে পারফর্ম করতে পারেননি। ২০১১ সালে ‘লিস্ট এ’ ম্যাচে অভিষেক হওয়ার পর বারবাডোজের হয়ে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০১৫ সালে। ২০১৯ সালে এসেই নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন। সেবারই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছেন। ৫০.৩ গড়ে সে মৌসুমে তাঁর সংগ্রহ ছিল ৬৫৪ রান।

ম্যাচ শেষে মেয়ার্সকে অভিনন্দিত করছেন সাকিব আল হাসান।

২০২০ সালে করোনা-বিরতির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজ দিয়ে মাঠে গড়িয়েছিল ক্রিকেট। মেয়ার্স সে সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ছিলেন। ফর্মে থাকলেও প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছিলেন না। এবারের সিপিএলে বারবাডোজের হয়ে ভালো খেলার পুরস্কারই পেয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ পেয়ে। ইতিহাস গড়েই বাংলাদেশ সফরটাকে স্মরণীয় করে রাখলেন এই বাঁহাতি।